কলকাতা ও গঙ্গাসাগর: রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা গ্রাফ। ক্রমশ উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগরে মেলাকে কেন্দ্র করে কিছুতেই বিতর্ক পিছু ছাড়ছেে না। এই পরিস্থিতিতে জেলাশাসক জানালেন ই-স্নানে বুকিং সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত ই-স্নানে বুকিং সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। মূলত, কোভিড পরিস্থিতি প্রতিহত করতেই ই-স্নানে জোর দিয়েছিল প্রশাসন।
কী এই ই-স্নান?
প্রশাসন সূত্রে খবর, আগে ই-স্নান চালু করা হয়েছিল শুধু বয়স্কদের কথা চিন্তা করেই। তবে, এ বারের কোভিড পরিস্থিতিতে যাতে সংক্রমণ রোধ করা যায়, তাই সকলের জন্যই ই-স্নানে জোর দেওয়া হয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলার সাইটে গেলেই ই-স্নানের জন্য বুকিং করা যাবে। এই ই-স্নানে বুকিং করলে বাড়িতে বসেই গঙ্গাস্নানের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন পুণ্যার্থীরা। এর মাধ্যমে একটি ই-স্নান বক্স পৌঁছবে পুণ্যার্থীর বাড়িতে। বাক্সের মধ্যে থাকবে এক ঘটি জল, প্রসাদ। প্রত্যেক বাক্সপিছু মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ১৫০ টাকা। এর ফলে বাড়িতে বসেই গঙ্গাস্নানের সুবিধা মিলবে।
এছাড়াও, মেলাচত্বরে সরাসরি সাগরে নেমে স্নানের অনুমতি এখনও দেওয়া হয়নি। তার বদলে, সমুদ্রের জল পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিয়ে গিয়ে অস্থায়ী বাথরুম তৈরি করে স্নানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও একধাপ এগিয়ে এ বছর প্রশাসনের উদ্যোগ, স্নানের পরিবর্তে ড্রোনের মাধ্যমে আকাশ পথে জল ছিটিয়ে তীর্থ যাত্রীদের ‘শুদ্ধিকরণ’ করাবার ব্যবস্থা করা হবে।
গঙ্গাসাগর মেলায় কোভিড মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা থাকছে?
জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মেলা চত্বরে ১৯১০ টি শয্যা সম্পন্ন ১৩ টি হাসপাতাল, ৫ টি আইসোলেশন ওয়ার্ড, ২৩৫ টি শয্যা সম্পন্ন ৪ টি সেফ হোম, ৫০০ টি শয্য়া সম্পন্ন কোভিড হাসপাতাল, কাকদ্বীপ চত্বরে ৬ টি দাহঘাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই উট্রামঘাট আর গঙ্গাসাগর দ্বীপের মধ্যে ১৩টি হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। প্রত্যেক হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য থাকবে ২৫ টি অ্যাম্বুলেন্স। এ ছাড়াও থাকছে ৩টি ওয়াটার অ্যাম্বুল্যান্স ও ১টি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স। কোনও রোগী গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে প়ড়লে থাকবে গ্রিন করিডোরের ব্যবস্থাও। শিশুদের জন্য থাকছে ৯২ টি শয্যার ব্যবস্থা।
মেলা ঘিরে বিতর্ক
সবরকম প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও মেলা ঘিরে বিতর্কে রাশ টানা যাচ্ছে না। কারণ, সংক্রমণ হচ্ছেই। শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত গঙ্গাসাগরের পথে আরও ৩১ তীর্থযাত্রী কোভিড আক্রান্ত। বাবুঘাটের ট্রানজিট ক্যাম্প, শিয়ালদহ স্টেশনের শিবিরে আরটিপিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানেই ৩১ জনের শরীরে কোভিডের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। এরমধ্যে বাবুঘাটের শিবিরে ২৫ জন করোনা আক্রান্ত। বাকি ৬ জন শিয়ালদহের শিবিরে।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন রাজ্য গঙ্গাসাগর মেলার মতো জমায়েতে রাশ টানছে না? চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, এই মেলা ‘সুপারস্প্রেডার’ হিসেবে কাজ করবে। এ প্রসঙ্গে চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেছেন, “আমরা মেলা করব আর সংক্রমণ আটকাতে চাইব দু’টো তো একসঙ্গে হয় না। এতে পরিস্থিতি খানিকটা এমন দাঁড়াচ্ছে যে, আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে কীভাবে ঠান্ডা লাগতে পারে তার চিন্তাভাবনা করার মতো। কোনওভাবেই এটা সম্ভব নয়। মেলা হলে সংক্রমণ বাড়বেই। আমাদের সেটা মেনেও নিতে হবে। সেই খেসারত দিতে হবে। আমাদের যে কমিটি তৈরি হচ্ছে, সেই কমিটি এর জন্য জবাবদিহি করবে, তার দায়িত্ব নেবে।”
গঙ্গাসাগর মেলা বিতর্কে হাইকোর্টে মামলা
গঙ্গাসাগর মেলা রুখতে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। আদালত জানিয়ে দেয়, শর্ত সাপেক্ষে এই মেলা করার অনুমতি দিচ্ছে তারা। সবরকম কোভিড বিধি মেনে এই সাগর মেলা হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য একটি কমিটি তৈরি করতে বলে আদালত। সেই কমিটিতে থাকবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। থাকবেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সনও। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি কেসাং ডোমা ভুটিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, সাগরে কপিল মুনির আশ্রমে ৫০ জনের বেশি মানুষ প্রবেশ করতে পারবেন না। পাশাপাশি যাঁরা আসছেন, তাঁদের কোভিড টেস্ট হচ্ছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে। যদি পজিটিভ হন, তাহলে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। প্রশ্ন উঠছে, সমস্ত প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিয়েও সংক্রমণ রোখা যাবে কি? সেটাই বোধহয় প্রশাসনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh on Abhishek Banerjee: ‘ওঁ কখন দলের, কখন ঘরের লোক বুঝি না’