কলকাতা: আলাদা করে কোনও কারণ নেই। স্রেফ সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি, বুঝবেন বাংলার মানুষের মনন, এটাই লক্ষ্য। তাঁর ভিড়ে মেশা, বাজার ঘোরা, সাধারণের সঙ্গে কথা, দোকানে ঢুকে ছাতু খাওয়া- তাঁর কার্যক্রম অন্তত তেমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে। পূর্ব নির্ধারিত কোনও কর্মসূচি কথা সেভাবে ছিল না, হনুমান জয়ন্তীর দিন রাজপথে নামলেন রাজ্যপাল। মাথার ওপর গনগনে রোদ। শহর ঘুরলেন রাজ্যপাল। অতি সম্প্রতি রাজ্যে ঘটে যাওয়া কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দিতে রাজ্যপাল বললেন, “বেঙ্গল উইল সেট আপ অ্যা ট্রেন্ড।”
বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্যপাল প্রথমে যান উত্তর কলকাতার লেকটাউনে। সেখানে হনুমান মন্দিরে তিনি প্রথম পুজো দেন। সেখান থেকে তিনি রওনা দেন একবালপুরে। ময়ূরভঞ্জ রোড বাজার এলাকায় তাঁকে একেবারে অন্য ভূমিকা দেখা যায়। তিনি বাজার ঘুরলেন, তরমুজের দোকানে দাঁড়ালেন, দোকানির সঙ্গে কথা বললেন, জিজ্ঞেস করলেন দামও! বাংলার কোনও রাজ্যপালকে শেষ কবে এইভাবে জনসংযোগ করতে দেখা গিয়েছে, তা বলা কঠিন, বলছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞরাই। সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে, পূর্বতন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কেও এই ভূমিকায় অন্তত দেখেনি বাংলা।
এদিন সকালে লেকটাউনে পুজো সেরেই একবালপুর চলে যান রাজ্যপাল। সেখানে তাঁকে দেখতে স্বাভাবিকভাবে ভিড় জমিয়েছিলেন সাধারণ বাসিন্দারা। প্রথমে তাঁকে দেখা যায় একটি তরমুজের দোকানে যেতে। দোকানির সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। তারপর এগিয়ে চলে সরু ঘিঞ্জি গলি ধরেই। মাঝে একটা ব্যারিকেড, ওপারে আম জনতা, এপাশে রাজ্যপাল। সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা, যাঁরা কিনা বাধা দেননি কাউকেই। রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বললেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাজ্যপাল শুনলেন, আশ্বাস দিলেন, শেষে হাতও মেলালেন। রাজ্যের একজন সাংবিধানিক প্রধান বাজারে, কিন্তু দৃশ্যত কোনও বাড়তি নজরদারি সে অর্থ দেখা যায়নি।
এ দৃশ্য বাংলা দেখতে অভ্যস্ত কেবল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেই। কিন্তু গত দুদিন রাজ্যপালের ভূমিকা একেবারেই অন্যভাবে দেখল বাংলা। বিমানবন্দরে থেকে হঠাৎই অশান্তিপ্রবণ রিষড়ায় যাওয়া, এলাকা ঘোরা, তারপরের দিনই কলকাতা চষা- এই প্রথম এই রাজ্যপালকে এই ভাবে দেখলেন রাজ্য়বাসী। আর ঘটনাচক্রে দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃহস্পতিবার হনুমান জয়ন্তী। এই দিনে যাতে কোনও অশান্তি না হয়, তাই সম্প্রিতীর বার্তা নিয়ে রাজপথে নামলেন খোদ রাজ্যপালই।
রাজ্যপাল সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর কথা বলেন পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এলাকায় কোনও অশান্তি নেই, এটা দেখেই খুব খুশি। আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন, খুশির দিন। সবার সঙ্গে কথা বলে ভাল লাগল। শান্তি রক্ষার্থে বাংলা আগামী দিনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”
এবার একবালপুর অফ টু পোস্তা। সেখানে রাজ্যপাল গেলেন ছাতুর সরবতের দোকানে। রাজ্যের রাজ্যপাল সরবতের দোকানে, বিস্মিত আম জনতা। দোকানিকে ছাতুর সরবত বানাতে বললেন তিনি। হাড়িতে গুলল সরবত। রাজ্যপালের জন্য কিন্তু এল না নতুন কোনও গ্লাস। আর পাঁচ জনের মতো দোকানির কাচের গ্লাসেই সেই সরবতে চুমুক দিলেন রাজ্যপাল। সাদা রুমালে মুখ মুছে টাকা গুঁজে দিলেন দোকানির হাতে। হাত তুলে আর্শীবাদও করলেন। এ দৃশ্য কিছুটা চেনা বাঙালির। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে গেলে, জনসংযোগ বাড়াতে কখনও চায়ের দোকানে চা বানিয়েছেন, কখনও চপও খেয়েছেন। কিন্তু কেবল মানুষের সঙ্গে মিশে, তাঁদের অবস্থা, মনন বুঝতেই ভিড়ে মিশলেন রাজ্যপাল।
হাওড়ার শিবপুর, ডালখোলা অশান্তির পর কার্যত নিশ্চুপ থাকতে দেখা গিয়েছিল রাজ্যপালকে। সে অর্থে সামাজিক মাধ্যমে তিনি কোনও প্রতিক্রিয়াও দেননি। কটাক্ষ করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি আবার রাজ্যপাল পূর্বতনদের থেকে পয়েন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়েও রেখেছিলেন। প্রকাশ্যেই দাবি করেছিলেন, এই রাজ্যপাল তাঁর পূর্বতন অর্থাৎ জগদীপ ধনখড়ের মতন ওতটাও সক্রিয় নন। তাঁকে সেই ভূমিকাতেই দেখতে চান তিনি। তারপরই রিষড়ার অশান্তি। আর বলাই বাহুল্য, এই অশান্তি রাজ্যপালকেই রাজভবন থেকে টেনে নামল রাস্তায়!