কলকাতা: ‘বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত সেটা ভাবে আগামিকাল’। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে এই কথাটি বহুবার শোনা গিয়েছে। এবার রাজ্যপাল সি.ভি আনন্দ বোসের মুখে সেই একই মন্তব্য শোনা গেল। রবিবার, বড়দিন-এ সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে বাংলা এবং বাংলা ভাষার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। যা বর্তমান রাজ্য-রাজনীতিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
এদিন সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির টাউন হলে আয়োজিত নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাজ্যপাল সি.ভি আনন্দ বোস। সেখানেই বাংলা ও বাংলা ভাষার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, “বাংলার রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে খুব গর্ব বোধ করছি। সাহিত্য-সংস্কৃতিতে পরিপূর্ণ বাংলা।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে মোপাসাঁর মতো বিদেশী ব্যক্তিত্বের বাংলায় এসে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি তুলে ধরার কথা উল্লেখ করেন তিনি। এপ্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ ছোটগল্পের উদাহরণ তুলে ধরেন রাজ্যপাল। আবার বাংলা ভাষা প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে তুলনা করে রাজ্যপাল আনন্দ বোস বলেন, “প্রশান্ত মহাসাগরের মতো গভীর বাংলা ভাষা।” সংস্কৃতি-ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ বাংলা দেশের গৌরব বৃদ্ধি করে বলেও জানান তিনি। এদিন রাজ্যপাল নিজেকে বাংলার দত্তক পুত্র বলেও উল্লেখ করেন। শুধু তাই নয়, বক্তব্যের শেষে বাংলায় বই লেখার ইচ্ছাপ্রকাশও করেন রাজ্যপাল সি.ভি আনন্দ বোস। তাঁর কথায়, “আমার রাজ্যে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলায় একটি বই লেখার স্বপ্ন আছে।”
এদিন রাজ্যপাল সি.ভি আনন্দ বোস যেভাবে বাংলার দরাজ প্রশংসা করলেন তা রাজ্য-রাজনীতিতে যে বিশেষ ইতবাচক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও তাঁর বাংলার প্রশংসা এটাই প্রথম নয়। রাজ্যপালের দায়িত্ব নেওয়ার পরই নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রথম সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়েও পশ্চিমবঙ্গের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। একেবারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়ে তিনি বলেন, “আগামী দিনে বাংলা ভারতকে পথ দেখাবে।” এরপর প্রথমবার বিধানসভায় গিয়ে স্পিকারকে ‘কৃষ্ণ’ তকমা দিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার বার্তা দিয়েছেন সি.ভি আনন্দ বোস।
দিন দুয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও এই রাজ্যপালের ভূয়সী প্রশংসা শোনা যায়। রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার পর তাঁকে ‘জেন্টলম্যান’ তকমা দেন মুখ্যমন্ত্রী। এখনও পর্যন্ত রাজ্যপাল সমস্ত কাজে সহযোগিতা করছেন এবং পূর্বতন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের জমানায় আটকে থাকা বিলগুলি এবার পাশ হয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। অর্থাৎ জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের যে দ্বৈরথ চলত, এবার সি.ভি আনন্দ বোসের জমানায় সেই ছবি অতীত হবে এবং রাজ্য-রাজ্যপালের মধ্যে সহাবস্থানের চিত্র-ই ধরা পড়বে বলে রাজনৈতিক মহলের মত।