কলকাতা: জাতীয় ভোটার দিবসে বিধানসভায় গিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পাহাড় তুলে ধরলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মঙ্গলবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ভোট পরবর্তী হিংসা থেকে বিলে সই, উপাচার্য নিয়োগ থেকে মা ক্যান্টিন সমস্ত বিষয়ে রাজ্যকে নিশানা করেন তিনি। একইসঙ্গে বিধানসভার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও সরব হন জগদীপ ধনখড়। রাজ্যপালের দাবি, তিনি কোনও বিলই আটকে রাখেননি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি প্রশ্ন করেছেন, তার জবাব পাননি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে রাজ্যপাল যখন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাক্য-বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন, পিছনেই দাঁড়িয়ে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
শুরুতেই জগদীপ ধনখড় বলেন, “আজ ভোটার্স ডে। গণতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ এই ভোটাররা। বলতে খারাপ লাগছে পশ্চিমবঙ্গে ভোটারদের কোনও স্বাধীনতা নেই। আমরা দেখেছি ভোট পরবর্তী হিংসা কীভাবে এ রাজ্যে হয়েছে। নিজেদের মতো করে ভোট দিয়েছেন বলে জীবন দিতে হয়েছে।”
শুরুতেই জগদীপ ধনখড় বলেন, “আজ ভোটার্স ডে। গণতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ এই ভোটাররা। বলতে খারাপ লাগছে পশ্চিমবঙ্গে ভোটারদের কোনও স্বাধীনতা নেই। আমরা দেখেছি ভোট পরবর্তী হিংসা কীভাবে এ রাজ্যে হয়েছে। নিজেদের মতো করে ভোট দিয়েছেন বলে জীবন দিতে হয়েছে। এটা লজ্জাজনক। এখানে আনের শাসন চলে না, শাসকের আইন চলে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা ভয়ানক, ভয়াবহ। রাজ্যপাল হিসাবে আমি চিন্তিত। আমি অনেক চেষ্টা করেছি রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা, রাজ্যের প্রশাসন সংবিধান অনুসারে চলুক। আইন মেনে কাজ করুক। কিন্তু সরকারি আধিকারিকরা তাঁদের নিয়ম ভুলে গিয়েছেন। সাংবিধানিক মর্যাদা ভুলে গিয়েছেন। সংবিধানের সঙ্গে দূর দূরান্ত অবধি তাঁদের কোনও সম্পর্কই নেই। আগুন নিয়ে খেলছেন তাঁরা।”
মুখ্যসচিব, ডিজিপি রাজ্যপালের প্রশ্নের জবাব পর্যন্ত দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না বলে এদিন তোপ দাগেন জগদীপ ধনখড়। রাজ্যপালের কথায়, “আমি সংবাদমাধ্যমের মধ্যে দিয়ে এই বার্তা দিতে চাই, রাজ্যপালের সাংবিধানিক অধিকার আছে। এখানে বিধানসভার অধ্যক্ষ যখন যা খুশি বলেন। উনি মনে করেন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যা কিছু বলার ওনার লাইসেন্স আছে। আমি অধ্যক্ষকে একাধিকবার একাধিক বিষয়ে প্রশ্ন করেছি। তথ্য জানতে চেয়েছি। বিএসএফ রেজোলিউশন নিয়ে জানতে চেয়েছি উনি জবাব দেননি। উনি কি ১৬৮ ধারা জানেন না? এভাবে একজন অধ্যক্ষ রাজ্যপালকে এড়িয়ে যেতে পারেন না। এটা সংবিধানবিরোধী। উনি যে ভাষায় রাজভবনকে লেখেন তা লজ্জার।”
অধ্যক্ষের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও এদিন সরব হন রাজ্যপাল। তাঁর অভিযোগ, বার বার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য চাওয়া হলেও তা রাজ্যপালকে দেওয়া হয়নি। জগদীপ ধনখড়ের কথা, “আমি আপনাদের স্পষ্ট করে দিতে চাই কোনও ফাইল রাজ্যপাল আটকে রাখেননি। অধ্যক্ষ বলছেন, রাজ্যপাল আটকে রেখেছে ফাইল। আমি হতবাক হয়ে যাই এ কথা শুনে। দু’বছরের বেশি সময় ধরে মুখ্যমন্ত্রী কোনও তথ্য দেননি। এগুলো সংবিধান কি মান্যতা দেয়? সংবিধান মোতাবেক উনি তো তথ্য দিতে বাধ্য। অণ্ডাল বিমান বন্দর, অতিমারি, গ্লোবাল বিজনেস সামিট, মা ক্যান্টিন, স্পোর্টস ক্লাব নিয়ে আমার কাছে রিপোর্ট এসেছে এগুলোয় দুর্নীতি হয়েছে। প্যানডেমিক পারচেস নিয়ে কে তদন্ত শুরু করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী! কোথায় রিপোর্ট? তাই আমি ফাইল আটকে রাখি এ কথা বলে লাভ নেই।”
“আমি ১১ জন চান্সেলার, ভাইস চান্সেলারকে বৈঠকে ডেকেছিলাম। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় যাতে উন্নয়ন হয়, সেই স্বার্থে তাঁদের ডেকেছিলাম। আমার সেই অধিকার আছে। ওনারা আসবেনও বলেছিলেন। আচমকাই মত বদলে গেল। ২৩ জানুয়ারি ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার পরাক্রম দিবস পালিত হল। ভারতমাতার বীর সন্তান নেতাজির জন্মদিন। আমি এক অনুষ্ঠানে অংশ নিলাম। সেখানে সরকারের তরফে কেউ নেই। আশ্চর্য। মাথায় রাখতে হবে কেউ সংবিধানের ঊর্ধ্বে নন।”
সংবাদমাধ্যমের সামনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এদিন বলেন, “একটি ফাইলও আটকে রাখা হয়নি। আমি প্রশ্ন করেছি। কোনও জবাব আসেনি। কোনও হাওড়া বিল ফাইল আমি আটকে রাখিনি। প্রশ্ন করেছি। হিউম্যান রাইটস সংক্রান্ত কোনও ফাইল আমি আটকে রাখিনি, আমি প্রশ্ন করেছি। কিন্তু জবাব পাইনি। লোকায়ুক্ত নিয়োগ নিয়ে আমি প্রশ্ন করেছি জবাব পাইনি। আমি অর্থ দফতরকে প্রশ্ন করেছি। তারা কোনও জবাব দেয়নি। শেষ মুহূর্তে এসে সই করে দিতে বললে হবে না। সময় দিতে হবে। আমি সবটা খতিয়ে দেখব। আমি সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার পরই আমার করণীয় করব।”
রাজ্যের তরফে কনসালটেন্ট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর থেকেই এ নিয়ে রাজ্য রাজভবন তরজা শুরু হয়। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এ নিয়েও সরব হন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, “সরকার পরামর্শদাতা (Consultant) নিয়োগ করতে চায়। ম্যাডাম মুখ্যমন্ত্রী আমার পরামর্শদাতা নিয়োগ নিয়ে কিছু বলার নেই। আমি জানতে চাই, কোন পথে এই পরামর্শদাতা নিয়োগ হচ্ছে। আপনি জানাননি কীভাবে আপনি এই নিয়োগ করছেন। সংবিধানের ১৬ ধারা মেনে নিয়োগ করতে হয়। আপনি ফেল করেছেন সেখানে।”