কলকাতা: ঘন ঘন দুর্যোগ। ভাসছে (Heavy Rain) মহানগর। কলকাতাময় জল যন্ত্রণার ছবি। রোদ উঠলে জল নেমে যাবে ঠিকই। কিন্তু কিছুদিনের ব্যবধানে লাগাতার বৃষ্টি ও জল জমে থাকার ঘটনায় অশনি সঙ্কেত দেখছেন আবহবিদরা। শীতকালে (Winter in Bengal) বড় বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে তিলোত্তমাকে। তাঁদের বক্তব্য, নানান কারণে কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। কোথাও প্লাস্টিক জমে থাকার কারণে দ্রুত জল বের হতে পারছে না, আবার কোথাও ভৌগলিক কারণে জল নামতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে অতিবৃষ্টির ফলে কলকাতার বহু জায়গায় জল দাঁড়িয়ে থাকছে। কোথাও দু’দিন। আবার কোথাও বা তিন দিন।
আবহবিদদের বক্তব্য, এর ফলে সেই জল ধীরে ধীরে ঢুকছে মাটির তলায়। কলকাতার মাটি এমনিতেই ঝুরঝুরে। এক কথায় বলা যেতে পারে কলকাতার মাটির বাঁধন অনেকটাই হালকা। বাঁধন শক্ত না হওয়ার ফলে সহজেই সেখান দিয়ে জল মাটির তলায় ঢুকে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এটাই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে শীতকালে। শীতকালে মাটি শুকোতে শুরু করবে। তার ফলে বাঁধন আরও হালকা হবে। তারপরে যে সমস্ত জায়গায় দু’ দিন কিংবা তিন দিন ধরে জল জমে ছিল, মাটির তলায় সেই জল ঢুকে যাওয়ার কারণে সেখানের মাটির বাঁধন আরও দুর্বল হয়ে যাবে। ফলে ধস নামার একটা বড় সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
অতীতে বহুবার কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ধস নেমেছে। তার কারণ হিসেবে আবহবিদ কিংবা ভূতত্ত্ববিদরা বার বার মাটির বাঁধন শক্ত না হওয়া কিংবা মাটির নিচে থাকা নিকাশি ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যে লাগাতার বৃষ্টির কারণে শহর কলকাতায় দুই থেকে তিন দিনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় জল জমে যাচ্ছে তাতে আগামী শীতে ধস নামার সম্ভাবনা আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিকাশি ব্যবস্থা যদি আরও আধুনিক হতো, তাহলে এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো না বলে শহরবাসীকে। কিন্তু কলকাতার ভৌগোলিক অবস্থান, সঙ্গে অত্যন্ত প্রাচীন নিকাশি ব্যবস্থার কারণে অতি দ্রুত জল নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই সেই জল চলে যায় মাটির তলায়। আর মাটির বাঁধনকে আরও আলগা করে দেয়। ফলে আগামী শীতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ করে ধস নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
কেন এক রাতের বৃষ্টিতেই জল থই থই কলকাতা?
নগরায়ন বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর সিনহার মতে, “কলকাতার কিছু জায়গা যেমন নিচু বলা হয়। তার পাশে এমন জায়গাও রয়েছে যেটা উঁচু। এই উঁচু জায়গার জলটা যদি গালিপিট দিয়ে ঠিকমত না নামে তা হলে জলটা টপকে নিচু জায়গায় চলে আসে। কিন্তু নিচু জায়গায় চলে আসা মানে নিকাশি ব্যবস্থার উপর চাপ পড়া। তার ক্ষমতার থেকে অতিরিক্ত জল বের করতে গেলেও সমস্যা হয়ে যায়।” পাশাপাশি শহরের বেশির ভাগ রাস্তার গালিপিটের মুখ প্লাস্টিক পড়ে বন্ধ। ফলে গালিপিট দিয়ে জল বেরোতে পারে না।