কলকাতা : স্কুল পরিদর্শক বা ডিআই-এর নির্দেশ থাকার পরও শিক্ষিকাকে স্কুলে নিয়োগ করতে চাননি প্রধান শিক্ষক। শূন্যপদ নেই, এই কারণ দেখিয়ে ডিআই-এর নির্দেশও মানেনি ওই স্কুল। স্কুলে শিক্ষকতা করা তো দূরের কথা, গত এক বছরের মধ্যে বেতন পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই শিক্ষিকার। প্রধান শিক্ষক তথা স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই শিক্ষিকা। আর সেই মামলাতেই সোমবার প্রধান শিক্ষককে ভর্ৎসনা করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধ করার নির্দেশ আগেই দিয়েছে আদালত। বিচারপতি এ দিন বলেছেন, ‘আসলে এটা পৌরুষত্বের আস্ফালন, তাই একজন মহিলাকে চাকরি পেতে একবছর ধরে রাস্তায় ঘুরতে হয়।’
এক বছর ধরে কোনও কারণ ছাড়াই শিক্ষিকার বেতন বন্ধ। আর সে ক্ষেত্রে মূল অভিযোগ স্কুল কথা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এই মামলায় প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ। সেই সঙ্গে কেন ওই শিক্ষিকার বেতন বন্ধ হল, সেই কারণ দর্শাতে প্রধান শিক্ষককে সোমবার আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি।
রায়গঞ্জের বাসিন্দা সংযুক্তা রায় বদলির আবেদন জানিয়েছিলেন। গত বছর তাঁকে রায়গঞ্জ করোনারি হাই স্কুলে বদলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই স্কুলে যোগ দিতে গেলে, স্কুলের পক্ষ থেকে তাঁকা বলা হয় ওই স্কুলে তিনি যোগ দিতে পারবেন না। তাঁকে বোঝানো হয়, স্কুলের যে শূন্যপদে তাঁর চাকরি করার কথা, সেই শিক্ষক একটি খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের দাবি, তাঁর মামলাটি বিচারাধীন, তিনি যে কোনও দিন ফিরে এসে স্কুলে যোগ দিতে পারেন। তাই আপাতত শিক্ষিকা যোগ দিতে পারবেন না।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানতে চেয়েছিলেন এই এক বছর শিক্ষিকা বেতন পেয়েছেন কি না। মামলাকারী আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, এক বছর ধরে বেতন বন্ধ। এমনকি ডিআই বলার পরেও তাঁকে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। এরপরেই ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি বলেন, ‘একজন মহিলাকে এভাবে হেনস্থা করা আদালত বরদাস্ত করবে না। ডিআই প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দেবেন।’
কোনও মামলায় কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি আর চাকরি করতে পারেন না। তাই এ ক্ষেত্রে শিক্ষিকার দাবি, ইচ্ছাকৃত তাঁকে কাজের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। সোমবারের শুনানিতে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘এটা আসলে পৌরুষত্বের আস্ফালন, তাই একজন মহিলাকে চাকরি পেতে এক বছর ধরে রাস্তায় ঘুরতে হয়।’ আগামী দুদিনের মধ্যে চাকরি না দিলে প্রধান শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে বলেও জানান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
এ দিন স্কুলের পরিচালন কমিটির সদস্যকে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। স্কুলের পরিচালন কমিটির সদস্য স্বপন চক্রবর্তী এ দিন সাদা সবুজ টি শার্ট পরে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। আর তা দেখে বিচারপতি বলেন,’ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাই আদালতের ডেকোরাম মানেননা।’ মামলার শুনানি বন্ধ রেখে পোশাক বদলাতে বলেন তাঁকে। ১০ মিনিটে পোশাক বদলে ফিরে আসেন তিনি। র দুটোয় মামলা। এরপর শুনানি শুরু হয়।
আরও পড়ুন : TMC in Rajyasabha: ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়াদের নিয়ে কী ভাবছে কেন্দ্র? স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিবৃতি চাইল তৃণমূল