কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতির ভূরি ভূরি অভিযোগের মাঝেই ওএমআর শিট প্রকাশের আবেদন জানিয়েছিলেন ববিতা সরকার। হাইকোর্টের নির্দেশে যাঁর চাকরি চলে গিয়েছে, সেই ববিতার আর্জি মেনে ৫৫০০ জনের উত্তরপত্র প্রকাশ করার নির্দেশও দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ বহাল রাখল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও। উত্তরপত্র প্রকাশ হলে চাকরি চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা নিয়ে কয়েকজন কর্মরত শিক্ষক ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বুধবার বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে, উত্তরপত্র প্রকাশে বাধা কোথায়? তবে ওএমআর প্রকাশের পর যদি কারও নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, সে ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য সিঙ্গল বেঞ্চকে শুনতে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ববিতা সরকারের আবেদন ছিল, ২০১৬ সালের একাদশ-দ্বাদশের মেধাতালিকা ও সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হোক, তাহলেই স্পষ্ট হবে কারও চাকরির পিছনে দুর্নীতি ছিল কি না। এমন কারও চাকরি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, সে ক্ষেত্রে সুযোগ পেতে পারেন ববিতা।
আবেদনকারীদের আইনজীবী এদিন প্রশ্ন করেন, ববিতা সরকার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শূন্যপদে চাকরি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তাহলে কেন সব নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করতে হবে? ওএমআর প্রকাশের জন্য ববিতা কোনও লিখিত আবেদন করেননি। মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে কেন সিঙ্গেল বেঞ্চ এমন একটি নির্দেশ দিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা চলছে। অগস্ট মাসে রয়েছে পরবর্তী শুনানি। ততদিন পর্যন্ত তালিকা প্রকাশ স্থগিত রাখার আর্জি জানান মামলাকারীরা।
আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এদিন মামলাকারীদের সম্পর্কে বলেন, ‘তার মানে মনে ভয় আছে। ধরেই নেওয়া হচ্ছে যে তালিকা প্রকাশ হলে চাকরি চলে যাবে।’ তাঁর দাবি, সঠিক পথে চাকরি পেলে তো ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। আইনজীবী আরও বলেন, ‘কীভাবে তাঁরা চাকরিটা পেয়েছেন, আসল ঘটনাটা তাঁরাই নিজেরা সবথেকে ভাল জানেন। সঠিক পথে চাকরি পেলে কেন ভয় পাচ্ছেন?’
এদিন ডিভিশন বেঞ্চের তরফে প্রশ্ন বলা হয়, তালিকা প্রকাশের বাধা কোথায়! তালিকায় যদি দেখা যায়, কারও নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন আছে,তাঁকে আগে শুনানির সুযোগ দিযতে হবে। তারপর পদক্ষেপ করবে সিঙ্গল বেঞ্চ। এসএসসি-র আবেদন মেনে ২১ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৮ জুলাই পর্যন্ত তালিকা প্রকাশের সময় বাড়িয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের পর্যবেক্ষণ, পাবলিক সার্ভিস নিয়ে দুর্নীতি হলে কোনও কোর্ট চোখ বুজে থাকতে পারে না। এক্ষেত্রেও আদালত সেটা অস্বীকার করতে পারে না।
অন্যদিকে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সিবিআই যে হার্ডডিস্ক উদ্ধার করে, তার সঙ্গে এসএসসি-র নথি মিলিয়ে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বেআইনি নিয়োগ হয়েছে। এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টেও হলফনামা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, ববিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁর স্নাতকোত্তরের প্রাপ্ত নম্বর বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল, সে কারণেই অ্যাকাডেমিক স্কোরও বেড়ে গিয়েছিল। আদালতের নির্দেশে চাকরি চলে যায় ববিতার।