কলকাতা: পুর নিয়োগে সিবিআই তদন্তে স্থগিতাদেশ দিল না কলকাতা হাইকোর্ট। পুরসভা ও শিক্ষার মধ্যে যোগাযোগ আছে তার তথ্য দেখতে চায় আদালত। দুর্নীতির অনুমান করে কী কী তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তা ইডি-র কাছে জানতে চাইল হাইকোর্ট। এমন কী এই মামলার কেস ডায়রি দেখাতেও ইডিকে নির্দেশ দিল আদালত। মমলার পরবর্তী শুনানি হবে ৬ জুন। সিবিআই তদন্তের স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছিল রাজ্য। সেই মামলায় স্থগিতাদেশ দিল না বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহার ডিভিশন বেঞ্চ।
বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ইডি-র আইনজীবীর কাছে জানতে চান, “দুর্নীতির অনুমানের ভিত্তিতে সিঙ্গল বেঞ্চকে আর কী তথ্য দিয়েছিলেন? দুই দফতরের দুর্নীতি যে পারস্পরিক ভাবে যুক্ত সেই লিঙ্কটা দেওয়া দরকার।” এমনকী কীসের ভিত্তিতে একক বেঞ্চের অর্ডার ও তদন্ত বর্তমানে কোন পর্যায়ে রয়েছে সেই বিষয়েও জানতে চান বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।
আদালতের সওয়াল-জবাবের সারাংশ
বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু: আমরা তথ্য প্রমাণ দেখতে চাই। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যখন কোনও অভিযোগ করছেন উপযুক্ত প্রমাণ আনতে হবে। না হলে ততক্ষণ বিশ্বাস করার কিছু নেই। মামলাকারী প্যান্ডোরার বক্স খুলেছেন। ইডিকে এবার সেটা প্রমাণ করতে দিন।
বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় (ইডির আইনজীবীর উদ্দেশ্যে): সিঙ্গল বেঞ্চের কাছে কী কেস ডাইরি দিয়েছিলেন? ইন্টারলিঙ্ক কীভাবে দেখতে চাই। সিঙ্গল বেঞ্চ কিছু করতে পারে না। যদি না প্রমাণ থাকে। সিডি দেখাতে হবে।
জয়দীপ কর (রাজ্য সরকারের আইনজীবী): সব মিথ্যে অভিযোগ। কোনও প্রমাণ নেই। অয়ন শীলের কোম্পানির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে কোনও চাকরিপ্রার্থী আসেননি। যিনি বঞ্চিত হয়েছেন। রাজ্যের কাছ থেকে তদন্ত সরিয়ে দেওয়া যায় যদি রাজ্য ব্যর্থ হয়। এক্ষেত্রে এমন কিছু হয়নি।
ফিরদৌস শামিম (মূল মামলাকারী সৌমেন নন্দীর আইনজীবী): প্রথমে রিপোর্ট জমা হয় ১৩ এপ্রিল। সেখানে অয়ন শীলকে গ্রেফতার করা হয় । সেখান থেকেই পুরসভার লিঙ্ক পাওয়া যায়।
অমাজিত দে (ইডির আইনজীবী): এজেন্সি কোথাও যদি টাকার সন্দেহ প্রকাশ করে তাহলে তদন্ত করতে পারে। এর জন্য পর্যাপ্ত তথ্য লাগে না।
বিচারপতি অপূর্ব সিনহা: অগ্রগতি রিপোর্ট নয়। কেস ডাইরি আনুন।
প্রসঙ্গত, পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিল রাজ্য। তবে তা খারিজ করে আগের নির্দেশই বহাল রাখেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। এরপর সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য।
গত শুক্রবার হাইকোর্টের দুটি ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির কাছে। এরপর বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিন্হা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এবং বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি ফিরিয়ে দিয়েছিল। সেই সময় হাইকোর্ট জানায়, মামলাটি এই দুই বেঞ্চের বিচার্য বিষয়ের তালিকায় নেই। তাই এই মামলার শুনানি সম্ভব নয়। ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলাটি ছেড়ে দেওয়ায় তা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চে পাঠানো হয়। এরপর মামলার দ্রুত শুনানি চেয়ে প্রধান বিচারপতির দফতরে চিঠি দেয় রাজ্য। সোমবার রাজ্যের আবেদন জমা পড়ে অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চে। আজ ডিভিশন বেঞ্চ কোনও স্থগিতাদেশ দিল না।