কলকাতা: ‘এত টাকা দিয়ে ইলিশ মাছ কিনে আনলাম, আগের মতো সেই স্বাদই নেই…’ ডাইনিং টেবিলে বসে আকছাড় অনেকেই এই আলোচনা বাঙালি করে থাকে। বাড়ির বয়স্করা তো বলেই থাকেন, ভাপা হোক বা পাতলা ঝোল। কোনওটাতেই আগের মতো স্বাদ পাওয়া যায় না। কিন্তু কেন? ঠিক কী কারণে ইলিশের সেই ‘টেস্ট’ আগের মতো পাচ্ছে না বাঙালি? কেন নিজের ‘মান-ইজ্জত’ বাঁচিয়ে রাখতে পারছে না মাছের রাজা?
আসলে নদীর মোহনায় ঢোকার আগেই মৎস্যজীবীরা জাল ফেলে ধরে নিচ্ছে ইলিশ। যার জেরে কমছে ‘মাছের রাজার’ স্বাদ-গন্ধ। এ প্রসঙ্গ মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মত, ইলিশ হল সমুদ্রের মাছ। যখন সে মিষ্টি জলে প্রবেশ করে তখন স্বাদ বাড়ে। বর্ষার সময় স্রোতের টানে মোহনায় আসে। যেহেতু এই বছর দেরীতে বর্ষা এসেছে, তাই নদীতে ঢোকার আগেই মাছ ধরা হচ্ছে। যার জেরে স্বাদ পাচ্ছে না আম বাঙালি। এর পাশাপাশি মাছের স্বাদ কমাতে নদী দূষণকেও দায়ী করছেন তাঁরা।
কখন স্বাদ বাড়ে ইলিশের?
বিশেষজ্ঞদের কথায়, সমুদ্রের ইলিশের থেকে মোহনার ইলিশ বরাবরই সুস্বাদু। সমুদ্রে থাকাকালীন মাছের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট ক্ষয় হয়। শুধু তাই নয়, সাগরে থাকাকালীন ঠিক মতো খাবারও পায় না তারা। আর নদীতে ঢুকলেই পর্যাপ্ত খাবার পেয়ে সেই ইলিশই হয়ে যায় ‘নাদুসনুদুস’ গোলগোল, পেট মোটা। তবে ৯০ শতাংশ মৎস্যজীবীরা যেহেতু বঙ্গোপসারগর থেকে মাছ ধরেন তাই বর্ষায় নদীতে ঢোকার আগেই ইলিশ জালে তোলেন। ফলে কমে যায় স্বাদ।
একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সমুদ্রের তুলনায় সুন্দরবন লাগোয়া বঙ্গোপসাগরের ইলিশের স্বাদ ভাল। এ রাজ্যে বেশি ইলিশের জোগান দেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, নামখানা ও পাথর প্রতিমা। পাশাপাশি জোগান দেয় পূর্ব মেদিনীপুরও।
কীভাবে চিনবেন ইলিশ?
এখন কলকাতার বাজার তো বটেই দেশের একাধিক বাজারে মায়ানমার থেকে আসা ইলিশের রমরমা রয়েছে। এই জাতের ইলিশ প্রায় এক কেজি থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হয়। তবে স্বাদ কিন্তু নেই। তাই বড় ইলিশের লোভে যদি মায়ানমারের ইলিশ কেনেন তবে কিন্তু ঠকবেন।
ভাল মানের মাছ কিনতে হলে ওজনটা দেখে নিতে হবে। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশও সুস্বাদু হতে পারে। তবে ৭০০-র বেশি ওজনের মাছ সবসময়ই সুস্বাদু হবে। ফলে ভাল মানের মাছ যে তার গড়নের উপর নির্ভর করে তা বলাই যায়।