কলকাতা : ধোঁয়া ওঠা চা, ট্রামের শব্দ বা টানা রিক্সা, এরকম আরও যে সব ছবি দিয়ে কলকাতাকে দেশের অন্য়ান্য শহরের মধ্যে আলাদাভাবে চেনা যায়, তার মধ্যে অন্যতম ঘোড়ার গাড়ি। ভিক্টোরিয়া বা ময়দান অঞ্চলে এরকম অনেকগুলি গাড়ি এখনও চলতে দেখা যায়। সাধারণ মানুষ, বিশেষত যাঁরা বাইরে থেকে কলকাতা ভ্রমণে আসেন, তাঁদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা এই ঘোড়ার গাড়ি। কিন্তু বিনোদনের জন্য যে ঘোড়াগুলিকে দিয়ে গাড়ি টানার ব্যবস্থা করা হয়, সেই সব ঘোড়ার স্বাস্থ্য কেমন, তারই খোঁজ নিয়েছে পশু সুরক্ষা সংগঠন ‘পেটা’ (PETA)। আর তাঁদের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ ঘোড়াই ধুঁকছে। তাই অবিলম্বে এই গাড়ি বন্ধ করার আর্জি জানাচ্ছে তারা। তবে এরকমটা হলে কী গাড়ির মালিকদের ভবিষ্যত কী হবে? তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
কলকাতার ময়দানে অন্তত ৮০ শতাংশ ঘোড়ার স্বাস্থ্য অত্যন্ত খারাপ, সমীক্ষা চালিয়ে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে পেটা। বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠক করে এই তথ্য প্রকাশ করেছে ওই সংগঠন। তাঁদের দাবি, দ্রুত ঘোড়ার গাড়ির বদলে ভিক্টোরিয়ার সামনে ই ক্যারেজের ব্যবস্থা করা হোক।
ভিক্টোরিয়ার সামনে থেকে ঘোড়া গাড়ি বন্ধ করার আর্জি জানিয়ে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছে পেটা। পশু সুরক্ষা সংগঠনের দাবি, অবিলম্বে এই বিনোদন বন্ধ করতে হবে। আদালত এবিষয়ে রাজ্যের মতামত জানতে চেয়েছে। একই সঙ্গে ময়দানের ঘোড়াদের স্বাস্থ্য কেমন সেই তথ্যও চায় পেটা। পেটার সদস্য সমিত রায় জানিয়েছেন, এর জন্য তিনদিনের একটি ক্যাম্পের আয়োজন করা হলেও ঘোড়াদের মালিকেরা তাদের আনেন নি। এরপর তাঁরা নিজেরাই একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন ময়দানে ৮০ শতাংশ ঘোড়ার স্বাস্থ্য খারাপ। কেউ অপুষ্টিতে ভুগছেন, কারও ঘাড়ে ক্ষত, পায়ে দীর্ঘ আঘাতের চিহ্ন। অন্তত ১০০ টি ঘোড়ার অবস্থা বেশ খারাপ বলেও জানিয়েছে এই সংগঠন।
ঘোড়া মালিকদের বক্তব্য, যে গাড়িগুলি পর্যটকদের নিয়ে যাতায়াত করে সেই গাড়িগুলির লাইসেন্স আছে। সেই সঙ্গে তাঁদের দাবি, ময়দানে অসংখ্য বেওয়ারিশ ঘোড়া ঘুড়ে বেড়ায়। তাদের ওপরেই চালানো হয়েছে ওই সমীক্ষা। যদিও অনেকেই মনে করছেন বর্তমানে হাইকোর্টের মামলায় এই স্বাস্থ্য রিপোর্ট অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এই প্রসঙ্গে বম্বে হাইকোর্টের একটি রায়ের কথা উল্লেখ করেছে পেটা। মুম্বইতেও শতাব্দী প্রাচীন ঘোড়ার গাড়ি টালানো বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে একই দাবিতে একটি মামলা হয়েছিল বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চে। সেই সময় তিনি নিজে ময়দানে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছিলেন। ঘোড়া মালিকদের জন্য রাজ্য সরকারকে পলিসি করতে বলেছিলেন তিনি। আর এবারের মামলায় এখনও পর্যন্ত রাজ্য কিছু জানায়নি আদালতে।