কলকাতা: প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে বন্দি ‘নিখোঁজ’-এর ঘটনায় কমিটি গড়ল কারা দফতর। এআইজি (সাউথ) বিপ্লব দাসের নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি এই ঘটনা সরেজমিনে খতিয়ে দেখবে।
কীভাবে একজন বন্দি প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে উধাও হয়ে গেলেন তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে। এরপরই কারা দফতর কমিটি তৈরি করে এই ঘটনার তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তদন্তের নেতৃত্বে থাকবেন এআইজি (সাউথ)।
গত ৬ ডিসেম্বর হাওড়ার বাগনানের বাসিন্দা রঞ্জিত ভৌমিককে মারধরের অভিযোগ ওঠে। বছর পঞ্চাশের রঞ্জিতের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে দেশি মদ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এরপর তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতকে উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে জেল হেফাজত হয়। কিন্তু পরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে কলকাতার প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। ১২ ডিসেম্বরের ঘটনা।
এরপর ২১ ডিসেম্বর উলুবেড়িয়া আদালতে জামিন পান রঞ্জিত। ঠিক তার পরদিন অর্থাৎ ২২ ডিসেম্বর রঞ্জিতকে বাড়ি নিয়ে যেতে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে পৌঁছয় তাঁর পরিবারের লোকজন। এদিকে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ জানান, রঞ্জিতকে আগের দিনই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, রঞ্জিত বাড়ি ফেরেননি ২১ তারিখ। এমনকী এরপর থেকে তাঁর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বাবার খোঁজ পেতে রঞ্জিত ভৌমিকের ছেলে হেস্টিংস থানায় যান। পরিবারের দাবি, হেস্টিংস থানা অভিযোগ না নিয়ে আলিপুর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। সেখানেই এফআইআর দায়ের হয়। কিন্তু পুলিশের ভূমিকায় সন্তুষ্ট হননি ওই ব্যক্তির বাড়ির লোকজন। এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা।
আদালতে ভৌমিক পরিবারের আইনজীবীরা প্রশ্ন তোলেন, একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুক্তভোগী একজনকে কীভাবে পরিবারের হাতে না তুলে দিয়ে একা ছেড়ে দেওয়া হল? সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, রাত ৮টা নাগাদ ছাড়া হয় রঞ্জিতকে। এখানেও প্রশ্ন ওঠে, জামিনে কাউকে মুক্ত করা হলে তাঁকে বিকেল ৫টার মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার নিয়ম। সূর্যাস্তের পর কীভাবে তা হলে ছাড়া হল?
বৃহস্পতিবার বিচারপতি শম্পা সরকার ও বিচারপতি বিভাস রঞ্জন দে’র ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, “কী করে সূর্যাস্তের পর কোনও বন্দিকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হল? আপনারা (পড়ুন রাজ্য) কি জেলের নিয়ম জানেন না?” এর পর জেলের সিসিটিভির ফুটেজ এবং আরও নথি নিয়ে জেলের সুপারকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আবারও এ নিয়ে সংশোধনাগার আদালতকে রিপোর্ট দেবে। পরিবারের হাতে সেই ব্যক্তিকে তুলে দেওয়া এখন জেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। জেলের সিসিটিভি ফুটেজও আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে। আগামী ৪ তারিখ রয়েছে মামলার পরবর্তী শুনানি।
আরও পড়ুন: Siliguri Municipal Election: ‘পিকের প্রস্তাবে প্রার্থী বাছাই’! না বদলালে ভোট বয়কটের ডাক শিলিগুড়িতে