কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত উঠে এসেছে কীভাবে সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি হয়েছে। প্রকাশ্যে এসেছে ওএমআর শিটও। কেন্দ্রীয় সংস্থার দাবি, পুরসভাতেও সেই একই ছবি। সেই সাদা খাতা, সেই টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রির মতো অভিযোগ সামনে এসেছে। কিন্তু এর পিছনে ছিল কারা?
মোট কর্মীর হিসেব
তথ্য বলছে, বর্তমানে কলকাতা পুরসভার অনুমোদিত স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ৪৬ হাজার ৪২১ জন। কিন্তু বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ১৬ হাজার ৬৭৩ জন। অর্থাৎ শূন্যপদ ২৯ হাজার ৭৪৮টি। এছাড়া, রাজ্য জুড়ে পুরনিগম রয়েছে ৬টি এবং পুরসভা রয়েছে ১২৩ টি। সবক’টি পুরনিগম এবং পুরসভা মিলিয়ে অনুমোদিত কর্মীর সংখ্যা থাকার কথা মোট ৭৯ হাজার ৩৯৭ জন। কিন্তু কর্মী রয়েছেন ৩৯ হাজার ৯৩ জন। রাজ্য জুড়ে সেই জায়গায় অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজারের কাছাকাছি।
আগে কমিশনের অধীনে হত না নিয়োগ
২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের আগে কলকাতা পুরনিগম ছাড়া রাজ্যের কোনও পুরনিগম বা পুরসভা মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের অন্তর্গত ছিল না। সেই সময় কলকাতা ছাড়া বাকি পুরসভাগুলিতে কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব ছিল পুরসভার চেয়ারম্যান বা তাদের দ্বারা গঠিত কমিটির হাতে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ থেকে সেই সব পুরনিগম মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের অধীনে আসে। তখন থেকে নাম হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন।
টেন্ডারেও বেনিয়ম
ওই কমিশনের অধীনে না থাকায় রাজ্যের সবকটি পুরসভায় স্থায়ী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এজেন্সিকে দায়িত্ব দেওয়া হত আগে। এজেন্সিগুলি বরাত পেত টেন্ডারের ভিত্তিতে। সেই টেন্ডার প্রক্রিয়াতেও বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম তিনজন বা তিনটি সংস্থাকে অংশগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু সেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রভাব খাটিয়ে একজনই অংশগ্রহণ করত এবং সে কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব পেয়ে যেত বলে অভিযোগ।
কত টাকা পেত এজেন্সি
দায়িত্ব পাওয়া সেই সংস্থা টাকা পেত। যদি উত্তরবঙ্গের একটি পুরসভায় সেই এজেন্সি কর্মী পাঠানোর জন্য জনপিছু ৫০ টাকা পেত, সেটি দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে অনেকটাই বেড়ে যেত। কলকাতা লাগোয়া পুরসভা গুলির ক্ষেত্রে সেই কোটেশন রেট দাঁড়াত ৭৫-৮০ টাকা। তবে সূত্রের খবর, এই কোটেশন রেট ছিল শুধুমাত্র খাতায়-কলমে। বাস্তবে লক্ষ লক্ষ টাকা আর্থিক লেনদেন হত।
নেতাদের পকেটেও যেত টাকা?
এজেন্সি গুলি শুধুমাত্র আইওয়াশের জন্য একটা পরীক্ষা নিত, অযোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগের মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে যেত, এমনই অভিযোগই সামনে আসে। সে ক্ষেত্রে ৪ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হত বলে অভিযোগ। শাসকদলের নেতাদের পকেটেও সেই টাকার ৩০-৩৫ শতাংশ যেত বলে দাবি তদন্তকারীদের।
সাদা খাতায় চাকরি
অভিযোগ, পরীক্ষায় বসে সাদা খাতা জমা দিলেও শুধুমাত্র প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সুকৌশলে নিয়োগের মেধা তালিকায় নাম উঠেছে এমন উদাহরণ রয়েছে অনেক। ঘনিষ্ঠদের কোনও টাকা দিতে হত না। এক একটি এজেন্সি কোনও একটি পুরসভায় পাঁচ বছর কোথাও আবার সাত বছর কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব পেয়ে এসেছে। ফলে এজেন্সি গুলির সঙ্গে বিপুল টাকার লেনদেন হত বলে মনে করা হচ্ছে।