কলকাতা: আবারও রেল দুর্ঘটনার নেপথ্যে মালগাড়ি? দক্ষিণ পূর্ব রেল ডিভিশনের হাওড়া থেকে মুম্বইগামী সিএসএমটি মেল দুর্ঘটনার পর উঠে আসছে এমনই তত্ত্ব। সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের আধিকারিকদের কথায়, হাওড়া থেকে এই দূরপাল্লার ট্রেনটি যখন মুম্বইয়ের দিকে যাচ্ছিল, তার মিনিট কয়েক আগে পাশের লাইন দিয়ে যাওয়া একটি মালগাড়ি লাইনচ্যুত হয়। তার চারটি বগি লাইন থেকে ছিটকে যায়। দু’টি লাইনের মাঝের যে নিরাপদ অংশ থাকে, সেখানে ছিটকে পড়ে। চারটি বগির মধ্যে একটি আবার হাওড়া থেকে মুম্বইগামী ট্রেনের লাইনের উপর গিয়ে পড়ে। তাতেই মঙ্গলবার ভোরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাওড়া-সিএসএমটি মেল ( Howrah-CSMT Mail)। চক্রধরপুর ডিভিশনে বরাবাম্বু ও রাজখারসাওয়ানের মাঝে এই দুর্ঘটনা ঘটে। হাওড়া থেকে মুম্বইগামী হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেসের ১৮টি কামরা বেলাইন হয়েছে, তার মধ্যে ১৬টিই যাত্রীবাহী কামরা। বাকি দু’টির মধ্যে একটি ট্রেনের বিদ্যুৎ সংযোগের কামরা এবং অন্যটি প্যান্ট্রি কার। এখনও অবধি দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে চক্রধরপুরে পাঠানো হয়েছে চিকিৎসার জন্য।
এদিকে মেল ট্রেনের গতি ছিল ১১০ থেকে ১১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। দক্ষিণ-পূর্ব রেল ডিভিশনের অন্তর্গত চক্রধরপুর ডিভিশনের আওতায় থাকা হাওড়া-মুম্বই লাইনটি ‘ভিআইপি লাইন’ হিসাবে বিবেচিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই লাইন হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট লাইনে কবচ নেই। যা থাকলে এই দুর্ঘটনা হয়ত এড়ানে সম্ভব হতো বলেই মনে করছেন অনেকে।
সূত্রের খবর, লাইনচ্যুত মালগাড়ি যখন হাওড়া-মুম্বই রেললাইনের উপর পড়ে, সেই সময় ১১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় মুম্বইগামী এক্সপ্রেসটি ধেয়ে আসতে থাকে। আগে থেকে সংশ্লিষ্ট ট্রেনের চালককে এ ব্যাপারে সতর্ক না করায় লাইনের একদম ধার ঘেঁষে পড়ে থাকা বগি গুলিতে ধাক্কা মারে ট্রেনটি বলেই প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে। আর তাতেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আপাতত প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
মূলত এক্ষেত্রে বরাবাম্বু স্টেশন মাস্টার এবং রাজখারসাওয়ান স্টেশন মাস্টারের ভূমিকা কি ছিল, সেটাই দেখার। কারণ মালগাড়ি লাইনচ্যুত হওয়ার পর লাগোয়া বা কাছাকাছি থাকা স্টেশনগুলিতে খবর পাঠানো হয়েছিল কি না, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। যদি খবর পাঠানো হয়ে থাকে, তাহলে দুরন্ত গতিতে ছুটে আসা মুম্বইগামী এক্সপ্রেসটির চালককে মালগাড়ির দুর্ঘটনার খবর পাঠানো হয়েছিল কি না, সেটাই তদন্তের মূল বিষয়।
#WATCH | Jharkhand Train derail |Train Manager South Eastern Railway, Md. Rehan says, “Around 3.39 am, the train got derailed and many people got injured in the incident…The incident happened as a Goods Train had already derailed in the downline and Howrah-CSMT Express was… pic.twitter.com/Vz92dNoFxj
— ANI (@ANI) July 30, 2024
যদি মাল গাড়ির দুর্ঘটনার খবর না পাঠানো হয়ে থাকে, তাহলে সেটাই হবে এই দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। দুর্ঘটনা ঘটলে যে ধরনের সিগনালিং ব্যবস্থা থাকা দরকার, এটা কি আদৌ ছিল নাকি যাত্রীবাহী ট্রেনের চালক সেটা না দেখেই গাড়ি ছুটিয়ে ছিলেন সেটাও তদন্তের অন্যতম বিষয়। তবে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, মালগাড়ির বগিটি লাইন ঘেঁষে একেবারে পড়ে থাকার বিষয়টি যাত্রীবাহী ট্রেনের চালক দেখতে পেয়েই ব্রেক কষে ছিলেন। কিন্তু গাড়ি স্বাভাবিক গতিতেই থাকায় ব্রেক কষলেও পড়ে থাকা মালগাড়ির বগিতে গিয়ে ধাক্কা মারে যাত্রীবাহী ট্রেনটি। কিন্তু গতি কিছুটা কমে যাওয়ায় যাত্রীবাহী ট্রেনের বগিগুলি ছিটকে যায় লাইন থেকে।