হাওড়া: অবিলম্বে হাওড়ার পুর নির্বাচন চেয়ে মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। মামলার শুনানি বৃহস্পতিবার। বিচারপতি শম্পা সরকার ও বিচারপতি বিভাস রঞ্জন দের ডিভিশন বেঞ্চে হবে শুনানি। মঙ্গলবারই মামলা করেছেন জনস্বার্থ মামলার অন্যতম মামলাকারী মৌসুমী রায়। পুর নির্বাচন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। কেন হাওড়া পুরসভা কে বাদ রেখে বাকি চারটি পৌরসভা নির্বাচন করা হচ্ছে সে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে মামলাকারীর তরফে।
মামলাকারীর বক্তব্য
সোমবার নির্বাচন কমিশন যখন চারটি পুরনিগমের ভোট ঘোষণা করে, বালি হাওড়াকে বাদ রাখা হয়। সোমবার রাতেই পুরভোটের মামালকারী মৌসুমী রায়ের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জরুরিভিত্তিতে একটি ইমেল করেন প্রধান বিচারপতিকে। তিনি সোমবার রাতেই শুনানির আর্জি জানিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, যেখানে আদালতে ইতিমধ্যেই কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল ৫ টি পুরনিগমের নির্বাচন হবে, সেখানে আদালতকে জানানোর পরও কেন কমিশন চারটি পুরনিগমের নির্বাচন ঘোষণা করল? কেন সেই তালিকায় নেই হাওড়া পুরনিগমের নাম?
পাশাপাশি মামলাকারীর আরও বক্তব্য, আদালতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানিয়েছিলেন, যে হাওড়া এবং বালি সংক্রান্ত বিলে রাজ্যপাল সই করেছেন। যদিও রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, তিনি এখনও হাওড়ার কোন বিলে সই করেননি। কারা এই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন, সে নিয়ে তদন্তের দাবি তুলে মামলা দায়ের করেছেন মৌসুমী রায়।
প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ
যদিও প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে রাতেই মামলাকারী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়কে জানিয়ে দেওয়া হয় রাতে জরুরিভিত্তিতে শুনানি সম্ভব নয়। তাঁকে সুনির্দিষ্টভাবে মঙ্গলবার মামলা দায়ের করতে বলা হয়। প্রধান বিচারপতি বলে দেন, মামলা দায়েরের পরই হাইকোর্ট বিষয়টি শুনবে। মঙ্গলবার সকালে মূল মামলাকারী মৌসুমী রায় মামলা দায়ের করেন।
মামলাকারীর বক্তব্য
কেন হাওড়া পুরসভা কে বাদ রেখে বাকি চারটি পৌরসভা নির্বাচন করা হচ্ছে সে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে মামলাকারীর তরফে। তাঁর দ্বিতীয় প্রশ্ন, আদালতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানিয়েছিলেন যে হাওড়া এবং বালি সংক্রান্ত বিলে রাজ্যপাল সই করেছেন। যদিও রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, তিনি এখনও হাওড়ার কোন বিলে সই করেননি। কারা এই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন সে নিয়ে তদন্তের দাবি তুলে মামলা দায়ের করেন তিনি।
মামলার প্রেক্ষাপট
সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস। মঙ্গলবার প্রকাশিত হবে ভোটের বিজ্ঞপ্তি। শিলিগুড়ি, বিধাননগর, আসানসোল, চন্দননগরে ভোট হচ্ছে ২২ জানুয়ারি। এবারও সব বুথে থাকছে সিসিক্যামেরা।
২৫ জানুয়ারি ভোটের গণনা। ২৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হবে। পুনর্নির্বাচনের দাবি থাকলে তা ২৪ জানুয়ারি হবে। সোমবার থেকেই জারি হয়ে গেল আদর্শ আচরণ বিধি। শুধুমাত্র যেখানে ভোট হবে সেই পুরনিগম এলাকায় আদর্শ আচরণ বিধি বলবৎ থাকবে।
শিলিগুড়িতে মোট ৪৭টি ওয়ার্ড। পোলিং স্টেশন ৪২১টি। ভোটার ৪,০২,৮৯৫। চন্দননগর পুরনিগমে মোট ৩৩টি ওয়ার্ড। ১৬৯টি পোলিং স্টেশন। ভোটার সংখ্যা ১,৪৪,৮৩৯। বিধাননগরে ৪১টি ওয়ার্ডে ভোট হবে। ৪৬৮টি পোলিং স্টেশন। ভোটার ৪,৪৬,৬৪০। আসানসোল পুরনিগমে ১০৬টি ওয়ার্ড। পোলিং স্টেশন ১০২০। ভোটার সংখ্যা ৯,৪২,০৮৮।
১ নভেম্বর ২০২১ সালের (১.১১.২১) ভোটার তালিকা অনুযায়ী নির্বাচন হবে। ভোট হবে ইভিএমে। ২৮ ডিসেম্বর থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ৩ জানুয়ারি ২০২২। স্ক্রুটিনি ৪ জানুয়ারি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন ৬ জানুয়ারি। কোথাও পুনর্নির্বাচন হলে তা হবে ২৪ জানুয়ারি। ২৮ জানুয়ারির মধ্যে ভোটপর্ব সমাপ্ত হবে।
এখানেই মামলাকারীর বিরোধিতা। তাঁর প্রশ্ন, কেন কমিশন চারটি পুরনিগমের নির্বাচন ঘোষণা করল? কেন সেই তালিকায় নেই হাওড়া পুরনিগমের নাম? এ প্রসঙ্গে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। যদিও তার পাল্টা দিয়েছে তৃণমূল।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “বিরোধীরা রাজ্য নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন! আসলে নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা। বিধানসভা ভোটে তো কেন্দ্রের নির্বাচন কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনী, তাতে কী লাভ হল ওদের! বিজেপি ধূলিসাৎ। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে দোষ দিয়ে কী লাভ?”
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh on Municipal Elections 2021: ‘তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন’