কলকাতা : তুরস্কের ভূমিকম্পের (Earthquake) ভয়াবয়তা দেখে শিউরে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। কয়েক সেকেন্ডে একটা দেশকে কীভাবে দুমড়েমুচড়ে শেষ করে দেওয়া যায় তা দেখিয়ে দিল শতকের অন্যতম ভয়াবহ এক ভূমিকম্প। তবে ভূমিকম্পের আঁচ এখনও সেই অর্থে আমাদের রাজ্যে পড়েনি। যত না পড়ে ততই মঙ্গল। কিন্তু তথ্য বলছে, যদি রিখটার স্কেলে ছয় বা তার ওপরে ভূমিকম্প হয় তাহলে কিন্তু তিলোত্তমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। কারণ, কলকাতার (Kolkata) নীচের মাটি অত্যন্ত পলকা। বৌবাজারের অবস্থাই তো দেখছেন। মেট্রোর কাজ চলাকালীন বারবার বাড়ি ভেঙে পড়ছে। তারউপর নিয়ম না মেনে চলছে একের পর এক বহুতল নির্মাণ। শুধু কলকাতাই নয়, রাজারহাট-নিউটাউন, হাওড়া সব জায়গায় এক অবস্থা। মাটির নীচের প্লেটগুলো একটু এদিক ওদিক করলেই নিশ্চিত পাতাল প্রবেশ!
তবে বাংলায় যে কখনও ভূমিকম্প হয়নি তা নয়। তীব্রতা কম থাকায় কখনও টের পাওয়া যায়, কখনও যায় না৷ উত্তর ভারতে যদি ৮ মাত্রার কম্পন হয়, তাহলে কি বাংলা বা কলকাতা রেহাই পাবে? ভূ-বিশেষজ্ঞরা বলছেন একেবারেই নয়। চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। কারণ কলকাতার নীচে লুকিয়ে রয়েছে ভয়ঙ্কর বিপদ। যার পোশাকি নাম ইয়োসিন হিঞ্জ। শহরের নীচে সাড়ে চার কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে এই ‘গ্র্যাভিটি ফল্ট’৷ যে ফাটল বিস্তৃত বাংলাদেশের ময়মনসিংহ পর্যন্ত৷ ছোট কম্পনগুলো এই ইওসিন রেঞ্জে বড় ধাক্কা দিতে পারে। যার ফলে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা সবসময় রয়েছে। তবে বড় কোনও ভূমিকম্প হলে শুধু কলকাতার পাতালপ্রবেশ ঘটবে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে আশেপাশের এলাকারও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারতীয় প্লেটের সঙ্গে ইউরেশীয় প্লেটের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েই চলেছে। ইউরেশীয় প্লেটের নীচে একটু একটু করে ঢুকে যাচ্ছে ভারতীয় প্লেট। সংঘর্ষের ফলে প্রচুর শক্তি জমা হচ্ছে হিমালয়ের নীচে। যেন বারুদের ভাণ্ডার। মাঝেমধ্যে জমানো শক্তিই বেরিয়ে আসছে ভূমিকম্প রূপে। নেপালের ভূমিকম্প, সিকিমের ভূমিকম্প তারই উদাহরণ। ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড বা BIS দেশকে ৫টি ভূকম্প জোনে ভাগ করেছে। জোন ফাইভকে সবথেকে বিপদজনক মনে করা হচ্ছে। এই জোনে আছে – গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, বিহার, অসম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, জম্মু ও কাশ্মীর এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। পশ্চিমবঙ্গ আছে জোন থ্রি এবং ফোরে।
ছোট কম্পনগুলো কলকাতার নীচে থাকা ইয়োসিন রেঞ্জে বড় ধাক্কা দিলে কলকাতার আশপাশে তীব্র ভূমিকম্পে মৃত্যু হতে পারে ২২ হাজারের। জখম হতে পারেন আড়াই লক্ষ মানুষ। ভেঙে পড়তে পারে অর্ধেক বাড়িই। শহর বসে যাওয়ার ভয় সল্টলেক, নিউ টাউন, রাজারহাটে।আশঙ্কা হাওড়া, পাইকপাড়া, বেলেঘাটা, সিঁথি, কসবা, দক্ষিণেশ্বরেরও। ভেঙে পড়তে পারে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কলকাতা জাদুুঘর, বিড়লা তারামণ্ডল, শ্যামবাজারের নেতাজি মূর্তিও।