ঠিক কী কী কারণে বিস্ফোরণ হচ্ছে ই-স্কুটার? নেপথ্যে কি সেই চিন?

E Bike: ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়িয়ে চলতে ইলেকট্রিক যানে আরও বেশি সুরক্ষার পক্ষে সওয়াল করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জোর দিতে হবে রক্ষণাবেক্ষণে।

ঠিক কী কী কারণে বিস্ফোরণ হচ্ছে ই-স্কুটার? নেপথ্যে কি সেই চিন?
Image Credit source: GFX- TV9 Bangla
Follow Us:
| Updated on: Nov 01, 2024 | 7:34 PM

সুপ্রিয় গুহ-র রিপোর্ট

মার্চ মাস, ২০২৪। মহারাষ্ট্রের শান্তিনগরে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল একটি বাড়ি। ভেঙে পড়ে বাড়ির ছাদ পর্যন্ত। কোনও ক্রমে প্রাণে বাঁচলেও আহত হন বাড়ির সদস্য়রা। মে, ২০২৪। গুজরাটের মহেশ ভাই নামে এক ব্যক্তির বাড়িতেও একই ঘটনা ঘটে। আর এবার অক্টোবর। সেই একই রকম ঘটনা কলকাতা শহরে। সবকটি ঘটনাতেই বিস্ফোরণের কারণ ছিল ই-স্কুটি বা ই-বাইকের ব্যাটারি।

কয়েকদিন আগে কলকাতার আনোয়ার শা রোডের একটি ছোট বাড়িতে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। আহত হন রানা নস্কর নামে এক যুবক। পরে জানা যায়, স্কুটারের ব্যাটারি ফেটেই এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। মহারাষ্ট্র বা গুজরাটের ঘটনাতেও ছিল এই একই কারণ। মহারাষ্ট্রে যেভাবে একটা আস্ত বাড়ির ছাদ বা দেওয়াল ভেঙে পড়েছিল, তাতেই বোঝা যায় ওই ব্যাটারি বিস্ফোরণ কতটা ‘পাওয়ারফুল’। কলকাতায় এটাই প্রথম ঘটনা নয়। বছর খানেক আগে ট্যাংরা এলকাতেও ব্যাটারি চালিত স্কুটারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু কেন বারবার এমন ঘটনা। ই-বাইক ব্যবহার করা কি তাহলে নিরাপদ নয়?

সাধারণ জ্বালানি অর্থাৎ পেট্রোল বা ডিজেল চালিত বাইকের থেকে কিছুটা আলাদা হয় ইলেকট্রিক স্কুটার। বর্তমানে এই ই-বাইক বা ই-স্কুটার কেনার প্রবণতা বেড়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। কম দামেও মিলছে এমন সব ই-বাইক। টাকা খরচ করে তেল ভরার ঝামেলাও নেই। বাড়ি বা যে কোনও জায়গায় ব্যাটারিতে চার্জ দিলেই দৌড়বে গাড়ি। ফলে, ক্রেতাদের আগ্রহ দিনে দিনে বাড়ছে এই ই-বাইকের প্রতি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ই-বাইক আসলে বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির কুফল। আপাত দৃষ্টিতে নিরাপদ এই বাইক যে কোনও সময় ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ। আমেদাবাদ, সুরাট, থানে, কলকাতার ঘটনায় উদ্বেগে বিশেষজ্ঞরা।

চিনের আধিপত্যেই বিপদ!

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ই-বাইকের চাহিদা বাড়তে থাকায় বাজার দখল করতে শুরু করেছে চিনা ই-স্কুটার। বিদেশ থেকে ছোট ছোট যন্ত্রাংশ নিয়ে এসে অ্যাসেম্বল (Assemble) করা হচ্ছে। তারপর বাজারে পাঠানো হচ্ছে বিক্রির জন্য। এইসব স্কুটার থেকেই বেশি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, নকল বা নিম্নমানের ব্যাটারি ব্যবহার করা হচ্ছে এই সব স্কুটারে। বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যখন একটি বৈদ্যুতিক স্কুটারে নিম্নমানের বা নকল ব্যাটারি লাগানো হয়, তখন দাম কম হয় ঠিকই, তবে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা মাপকাঠি মেনে চলা হয় না। প্রযুক্তিবিদ সৌমেন্দু মোহন ঘোষ স্পষ্ট বলছেন, ‘চিনা প্রোডাক্ট কেনা উচিত নয়। তাতে সমস্যা বাড়তে পারে।’ অ্যাসেম্বল করার সময় সমস্যা থেকে গেলেও এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

ঠিক কী কী কারণে ফেটে যেতে পারে ই-স্কুটার?

প্রথম কারণ: বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈদ্যুতিক স্কুটারের ব্যাটারি ফেটে যেতে পারে নিম্নমানের ব্যাটারির জন্য।

দ্বিতীয় কারণ: যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, ভুল চার্জিং-এর কারণেও বিপদ ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে বৈদ্যুতিক স্কুটারের ব্যাটারি বিস্ফোরণের অন্যতম প্রধান কারণ হল ‘ওভার চার্জিং’। ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ হওয়ার পরে দীর্ঘ সময় ধরে প্লাগ ইন থাকলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

তৃতীয় কারণ: অ্যাসেম্বলিং লাইনে সমস্যা থাকতে পারে। অর্থাৎ অ্যাসেম্বলিং করার সময় যদি কোনও সমস্যা থেকে যায়, তাহলে বাইক বিস্ফোরণও ঘটতে পারে।

চতুর্থ কারণ: প্রযুক্তিবিদ সৌমেন্দু মোহন ঘোষ বলছেন, বিদেশে যে বাইক তৈরি হয়, তাতে সমস্যা হতে পারে কারণ, ভারতে তাপমাত্রা অন্যরকম। এখানে গরম বেশি, বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি। সার্কিটে যদি জলীয় বাষ্প থাকে, তাহলেও বিপদ ঘটে যেতে পারে।

এছাড়া, ব্যাটারি বিস্ফোরণের আর একটি সাধারণ কারণ হল অতিরিক্ত তাপের সংস্পর্শে আসা। স্কুটার সরাসরি সূর্যালোকে বা উচ্চ তাপমাত্রার জায়গায় দীর্ঘক্ষণ পার্ক করলে ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে। তীব্র তাপ ব্যাটারির রাসায়নিক ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে। ফলে আগুন ধরে যেতে পারে বা বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

ই-স্কুটারের বিপদ থেকে কীভাবে বাঁচবেন?

ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়িয়ে চলতে ইলেকট্রিক যানে আরও বেশি সুরক্ষার পক্ষে সওয়াল করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জোর দিতে হবে রক্ষণাবেক্ষণে।

এছাড়া, ঝুঁকি এড়াতে নামি কোম্পানির ব্যাটারি চালিত গাড়ির কেনার পরামর্শ দিয়েছেন প্রযুক্তিবিদ সৌমেন্দু মোহন ঘোষ। তাঁর মতে, অ্যাসেম্বল করা নয়, তৈরি গাড়ি কেনাই উচিত। ভারতীয় সংস্থা থেকে ই-বাইক কেনার কথাও বলেছেন তিনি, যাতে আবহাওয়াগত কোনও সমস্যা না হয়।

বর্তমানে ই বাইকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে কলকাতায়। এখনও পর্যন্ত ৫০,০০০-এর বেশি ই-বাইক আছে কলকাতায়। তবে এই বাইকের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন করানো যায় না, ফলে বোঝা যায় না সংখ্যাটা ঠিক কত। আর রেজিস্ট্রেশন করানো যায় না বলেই অনেক সমস্যাও ধরা পড়ে না বলে উল্লেখ করেছেন।