Beleghata: ‘ওরা মারছে..আমি সহ্য করতে পারছি না…নিয়ে যাও’,ছিল শুধু একটা ঘরের দূরত্ব, বেলেঘাটায় শ্বশুরবাড়ি পৌঁছেও মেয়েকে বাঁচাতে পারলেন না বাবা
Beleghata Murder: মেয়ের শ্বশুরবাড়ি পৌঁছলে শ্বশুর কিশোরীলাল তাঁকে অন্য একটি ঘরে বসিয়ে রাখেন বলে অভিযোগ। উদ্বিগ্ন বাবা ফোনে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে শ্বেতা জানান, তাঁকে বেল্ট দিয়ে মারধর করা হয়েছে।

কলকাতা: ‘আমি মেরেছি…বলছি তো আমিই মেরেছি…। ওরা তো এটাই বলে…অথচ আমার স্বামীকে রাতের বেলা মহিলা ফোন করছে আমি প্রতিবাদ করতে পারব না?…ওরা আমায় গালিগালাজ করছে বাবা…আমায় মারে…আমার গলা টিপে দেয়…. আমি ডিপ্রেশনে আছি…তুমি এসে নিয়েও যাও আমায় বাবা…ওরা নয়ত মেরে ফেলবে।‘ এক মহিলা হাঁপাচ্ছেন…কাঁদছেন আর ফোনের ওপার থেকে তখন তাঁর সব কথা শুনছেন মহিলার বাবা। শুধু বোঝানোর চেষ্টা করছেন মেয়েকে ‘কিচ্ছু হয়নি..সব ঠিক হয়ে যাবে।’ যেমনটা হয় আরকী! মা-বাবারা সন্তানে আগলে রাখতে যেভাবে বোঝান, সেই ভাবেই বোঝাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তিও। কিন্তু নাহ! শেষ রক্ষা হল না। শ্বশুরবাড়ি পৌঁছেও মেয়েকে বাঁচাতে পারলেন না তিনি। অভিযোগ করলেন, পুত্রসন্তান না হওয়ায় পারিবারিক অশান্তি চলত দীর্ঘদিন ধরে। আর তাঁর জেরেই মেয়েকে খুন করেছে স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। হাড়হিম ঘটনাটি ঘটেছে বেলেঘাটা ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে।
মৃতার নাম শ্বেতা প্রসাদ সাউ (২৯)। মেয়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে নারকেলডাঙা থানার দ্বারস্থ মৃতার পরিবার। জানা গিয়েছে, পুত্রসন্তান না হওয়ায় বুধবার সকালে শ্বশুরবাড়িতে মেয়েকে মারধর করা হচ্ছে বলে খবর পান বাবা ওমপ্রকাশ প্রসাদ। তিনি শিয়ালদহ বৈঠকখানার বাড়ি থেকে বেলেঘাটায় মেয়ের শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।
মেয়ের শ্বশুরবাড়ি পৌঁছলে শ্বশুর কিশোরীলাল তাঁকে অন্য একটি ঘরে বসিয়ে রাখেন বলে অভিযোগ। উদ্বিগ্ন বাবা ফোনে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে শ্বেতা জানান, তাঁকে বেল্ট দিয়ে মারধর করা হয়েছে। গলা টিপে মারার চেষ্টাও হয়েছে। মেয়ে যখন বাবাকে অত্যাচারের বিবরণ দিচ্ছেন, তখন শাশুড়ি শ্বেতার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে তা আছড়ে ভেঙে দেন বলে অভিযোগ। এরপর বাবা জোর করে মেয়ের ঘরে ঢুকে দেখেন সব শেষ। পনেরো মিনিট আগে একটি ঘরের দূরত্বে বসে যে মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন বাবা, সেই মেয়ে নিথর অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে গেলে শ্বেতাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ইতিমধ্যেই শ্বেতার সঙ্গে
মৃতার বাবা ওমপ্রকাশ প্রসাদ বলেন, “পাশের বাড়ির একজন ফোন করে বলেছে আপনার মেয়েকে মারধর। আমি শুনেই ছুটে-ছুটে গেছি। ওর শ্বশুরমশাই আমায় একটি অফিসে বসিয়ে রেখেছে। বলছে ওরা মারধর করেছে। এরপর আমি মেয়েকে ফোন করেছি। মেয়ে বলছে বাবা ওরা আমায় খুব মারছে। আমি বোঝাচ্ছিলাম। মেয়ে আগেও বলেছে ওর দুটো মেয়ে সন্তান তাই এই অত্যাচার করে। তবে ফোনে বলেছে একজন ডিভোর্সি মহিলা আমার স্বামীকে ফোন করে। তাই আমি প্রতিবাদ করেছি। মেয়ে বলেছে ওকে বেল্ট দিয়ে মেরেছে।” মৃতের আইনজীবী বলেন,”খুন এবং খুনের চেষ্টার অভিযোগে পুরো পরিবার যাতে শাস্তি পায় সেইটাই আমরা চাইব।” যদিও, সব অভিযোগ অস্বীকার মৃতার শাশুড়ি রীনা দেবীর। তিনি জানিয়েছেন শ্বেতা নিজেই গলায় ফাঁস লাগিয়েছে।

