কলকাতা: অপেক্ষা আর মাত্র কিছুদিনের। তারপরেই একেবারে গঙ্গার নীচে মাটি ফুঁড়ে যাত্রা। মাথার উপর গঙ্গা। আর তার তলা দিয়েই পেটভর্তি যাত্রী নিয়ে ছুটবে মেট্রো (Kolkata Metro)। ভূপৃষ্ঠের ৩৩ মিটার নীচ দিয়ে। কোনও কারণে ধোঁয়া-টোঁয়া বেরোলে দম আটকানোর অবস্থা হবে না তো? ভয় ভাঙিয়ে দিচ্ছেন মেট্রোরেলের কর্তা থেকে প্রযুক্তিবিদরা। তাঁরা বলছেন, এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যে গঙ্গার তলায় মেট্রোর সুড়ঙ্গে বাতাস বইবে সুমন্দ।
মেট্রোর চ্যানেল যেখানে তৈরি হয়েছে, সেখানে নদীর গভীরতা ১৪ মিটার। তার মানে, নদী, তার পর ১৯ মিটার মাটি, তার নীচে ৫২০ মিটার প্রশস্ত মেট্রোর চ্যানেল। এখানেই উঠছে প্রশ্ন। মাটির এত নীচ দিয়ে যাওয়ার কারণে যাত্রীদের অক্সিজেনের কোনও সমস্যা হবে না তো! কোন মন্ত্রে, থুড়ি কোন যন্ত্রে ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল থাকবে মেট্রোর সুড়ঙ্গ? কীভাবে খেলবে হাওয়া-বাতাস? অনেকের মনেই এখন থেকেই এই প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে। মেট্রো রেলের কর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন এমন কোনও সম্ভাবনাই নেই। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প রূপায়ণকারী সংস্থার কর্তাদের কথায়, কামাল করবে তিন পাখা। যেগুলো থাকে লোয়ার কনকোর্স লেভেলে। যা সর্বক্ষণই চলে।
কেমন সেই পাখা, কী তাদের কাজ? প্রথমটি হল OTE বা ওভার ট্র্যাক এক্সহস্ট ফ্যান। এটি প্ল্যাটফর্মের দুই প্রান্তের মেশিনরুমে দু’টি করে থাকে। প্ল্যাটফর্ম এবং সুড়ঙ্গের হাওয়া গরম হয়ে গেলে তা বের করে দেয়। এটি প্রতি সেকেন্ডে ৩০ কিউবিক মিটার বেগে ঘোরে। দ্বিতীয়টি হল ইউপিএস ফ্যান। এর মাধ্যমে বাইরের পরিশুদ্ধ হাওয়া সুড়ঙ্গের ভিতরে নিয়ে আসা হয়। যাতে অক্সিজেনের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে।
তৃতীয় TVF বা টানেল ভেন্টিলেশন ফ্যান। একটা মেট্রো যখন এক দিক থেকে অন্য দিকে যায়, সেই সময় উল্টো দিক থেকে আসা হাওয়াকে বাইরে বের করে দেয় এই পাখা। এমার্জেন্সি মোডেও কাজ করে TVF.
সূত্রের খবর, কবি সুভাষ-দক্ষিণশ্বের মেট্রো লাইনের যে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা, তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ভেন্টিলেশন। হাওড়া ময়দান থেকে হুগলি নদীর তলা দিয়ে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত যাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। মোট দৈঘ্য ১৬.৫ কিলোমিটার। তার মধ্যে ১০.৮ কিলোমিটার রাস্তা মাটির তলা দিয়ে যাবে মেট্রো। হাওড়া ময়দানই হবে দেশের গভীরতম মেট্রো স্টেশন। তবে শুধু সেখানেই নয়। সূত্রের খবর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর মাটির তলার সমস্ত স্টেশনে থাকবে এমন ১২টি করে পাখা। মেট্রোর যে সব আধিকারিক বা কর্মীরা থাকবেন তাঁরাও যাতে সুস্থ থাকতে পারেন তার জন্যই এত আয়োজন। সুতরাং, ভয়ের কোনও কারণ নেই। ডুবে ডুবে জল না খেয়ে, প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে নিতে ৪৫ সেকেন্ডে গঙ্গা এপার-ওপার করা শুধু সময়ের অপেক্ষা। এমনটাই বলছেন মেট্রো বিশেষজ্ঞরা।