কলকাতা: চিকিৎসকরা বলে থাকেন ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর’। আর সেই প্রিভেনশন বা প্রতিরোধের একটি বড় অংশ হতে পারে সঠিক সময়ে ভ্যাকসিনেশন বা টিকাকরণ। জন্মের পর থেকেই বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে কিছু ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু ভ্যাকসিন আছে যেগুলি বেসরকারিভাবে চিকিৎসকেরা বাচ্চাদের দিতে বলেন।
কারণ একটাই, নির্দিষ্ট বয়সের পরে যাতে বিশেষ বিশেষ রোগ থেকে সন্তানকে রক্ষা করা যায়। আবার কিছু কিছু রোগ আছে যেগুলি কমে গেলেও আবারও নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ফলে প্রতিনিয়ত এই সব রোগ ঠেকাতে যেমন গবেষণা চলে, তেমনি সরকারিভাবে সচেতনতা বৃদ্ধিও চলে। আর সঙ্গে চলে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়াও।
আর ভ্যাকসিনের সেই কার্যকারিতা নিয়েই ওয়ার্ল্ড ভ্যাকসিনেশন ডে অর্থাৎ ১৬ মার্চ বাইপাসের একটি পাঁচতারা হোটেলে ‘vaccicon IDISCON’ নামক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হল। ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স বা আইএপি (IAP) আয়োজিত এই সেমিনারে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশু রোগ চিকিৎসক বা এক্সপার্টদের মুখে শোনা গেল কমিউনিটি ভ্যাকসিনেশন থেকে শুরু করে ভ্যাকসিনেশনের প্রয়োজনীয়তার কথা। মামস্ কিংবা ক্যানসারের ভ্যাকসিনও যে কতটা জরুরি তা তাঁরা আলোচনা করলেন এদিন।
আইএপির প্রেসিডেন্ট জিভি বাসবরাজা বলেন, “ভ্যাকসিনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হার্ড ইমিউনিটির জন্য খুবই দরকারি। সরকার কিছু ভ্যাকসিন দেয়। আমরা দেখি সরকারি ভ্যাকসিনের বাইরে গিয়ে কী কী ভ্যাকসিন দেওয়া যায়। ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করে।”
অনেকের মনে ভয় থাকে ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে। এ প্রসঙ্গে আইএপির মিডিয়া স্পোকপার্সন (বেঙ্গল) জয়দেব রায় বলেন, “ওষুধ বা ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় দেখে নিতে হয় অ্যাডভান্টেজ নাকি ডিসঅ্যাডভান্টেজের পাল্লা ভারী। অ্যাডভান্টেজের পাল্লা ভারী হলে সেটাই ধরতে হবে। ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অ্যাডভান্টেজের পাল্লা ভারী। সাধারণত ভ্যাকসিন থেকে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় না। যেটা হয় খুবই সামান্য। ভ্যাকসিন আনার সময় বারবার ট্রায়াল দেওয়া হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দেয়। ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকবে এমন ভ্যাকসিন মানুষের কাছে আসবে না।”
ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত রাখতে শিশুদেরও ভ্যাকসিন দরকার বলে মনে করেন আইএপির। ৯ বছর থেকে ১৬ বছরের মধ্যে এই ভ্যাকসিনেশন করা দরকার বলেও মত তাদের। আইএপির ন্যাশনাল ট্রেজারার অতনু ভদ্রের কথায়, “শেষ লোকসভা অধিবেশনে আমাদের অর্থমন্ত্রী এইচপিভি ভ্যাকসিনের জন্য বরাদ্দ করেছেন। খুব তাড়াতাড়ি আমাদের ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন শিডিউলেও আসবে। ইএসআই হাসপাতালের চার্জে থাকি আমি। ১৩টা হাসপাতালের আউটডোরে আমরা গত ৬ মাস আগে থেকে প্রসূতি বা ৯ বছরের সন্তান আছে এমন মহিলারা এলে কথা বলি এবং এইচপিভি ভ্যাকসিন বিনামূল্যে শুরু করেছি। নিউমোনিয়া ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও তাই করছি। ৫০ বছরের উপরে যেমন এই ভ্যাকসিন দরকার, ছোটদেরও দরকার।”