কলকাতা: বসন্তেই ফুল বদল করেছেন জয়প্রকাশ মজুমদার। দক্ষিণ রাজনীতির একটা বৃত্ত আজ সম্পূর্ণ করেছেন জয়প্রকাশ। কংগ্রেস, বিজেপি ঘুরে তৃণমূলে তাঁর যোগদান। মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের সাংগঠনিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁর হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন ফিরহাদ হাকিম। যোগ দিয়ে নতুন পদপ্রাপ্তি হয় তাঁর। রাজ্য সহ সভাপতি হন তিনি। তৃণমূলের যোগ দিয়েই TV9 বাংলার মুখোমুখি হন জয়প্রকাশ মজুমদার। তিনি বললেন, “আমি খুশি। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মাননীয়া আজ আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, তাতে খুশি আমি। আজকের দিনে মাননীয়ার মতো এক অসামান্য মহিলার সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে, তাঁর নেতৃত্বে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত।”
জয়প্রকাশ মজুমদারকে প্রশ্ন করা হয়, কিছুদিন আগেই যাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছেন জয়প্রকাশ, আজ তাঁর নেতৃত্বেই কীভাবে কাজ করবেন তিনি? উত্তরে জয়প্রকাশ বলেন, “রাজনৈতিক তরজা ছিল। মাননীয়ার বিরুদ্ধে কোনও কথা ছিল না। বিজেপিকে আমি বারবার সাবধান করেছিলাম। অনেক কিছু হচ্ছে। অনেক গান, আওয়াজ, চাটার্ড ফ্লাইট হচ্ছে, কিন্তু বাংলার মন স্পর্শ করতে পারে নি বিজেপি। যে কারণে আগলাবার ২০০ পার, সেটা স্পর্শ করতে পারেনি বিজেপি। কারণ বাংলার মানুষের মন স্পর্শ করতে পারেনি।”
বাঙালি-বাঙালি মন-বাঙালি ‘অস্মিতা’ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে তুলনা করেন জয়প্রকাশ মজুমদার। তিনি বলেন, “যে কারণে গান্ধীজীর সঙ্গে নেতাজীর আদর্শের বিরোধ গড়েছিল। নেতাজীও বাঙালির অস্মিতার জন্য লড়েছিলেন।” তখনই জয়প্রকাশকে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে কি নেতাজীর লড়াই আর জয়প্রকাশ মজুমদারের লড়াই একই? জয়প্রকাশের উত্তর, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই আর নেতাজীর লড়াই এক। বাঙালি অস্মিতার জন্য লড়ছেন তিনিও।”
প্রসঙ্গত, গত দেড় মাসে বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করেছেন জয়প্রকাশ। চড়ুইভাতি করেছেন। তবে কি তাঁর হাত ধরেই নতুন করে শুরু হল ফুলবদলের খেলা? জয়প্রকাশ বলেন, “আমি ওতটা বলতে পারিনা। এটা সবার ব্যক্তিগত ব্যাপার। রাজনীতিবিদরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবেন। উচিত সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ বিজেপির শরীরের অবস্থা ভালো নয়। আইসিইউতে গেছে কিনা জানি না। তবে বর্তমানে অসুস্থ আছে।” শান্তনু ঠাকুর প্রসঙ্গে জয়প্রকাশ সাফ জানিয়েছেন, “শান্তনু তাঁর লড়াই লড়ছেন। মতুয়া অস্মিতার লড়াই করছেন।”
তাহলে বিজেপি কি সত্যিই অসুস্থ? পাল্টা জবাব দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তিনি বলেন, “বিজেপির ভিতরের অবস্থা কেমন আছে, তা জানার কথা নয় জয়প্রকাশবাবুর। বিজেপি একটা আদর্শে বিশ্বাস করে। সেই আদর্শের পরিবার থেকে ওঁ আসেননি। তাছাড়াও দু মাস ধরে সাসপেনশনেই ছিলেন। ফলে তাঁর পক্ষে বিজেপির ভিতরের অবস্থা জানার কথা নয়।”
ঠিক কবে দলবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? সে উত্তরও দেন জয়প্রকাশ। তিনি বলেন, “গত দু মাস ধরে আমি পার্টির হিল অবস্থায় অবস্থান করছি। সেই দু’মাসে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যদি সামনের দিনে মূল্যবোধের রাজনীতি করতে হয়, তাহলে তৃণমূলকে নিয়েই করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই করতে হবে। এর থেকে ভালো দিন হতে পারে না, এক জন অনন্যা, এক অসাধারণ নারীর নেতৃত্বে আসার জন্য।”
আরও পড়ুন: জোড়া ফুলে যোগ দিয়েই পদপ্রাপ্তি জয়প্রকাশের