কলকাতা: বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে মামলা সরানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সাম্প্রতিকতম কয়েকটি নির্দেশ গোটা বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে তাঁর নির্দেশেই আপাতত শ্রীঘরে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়করা। চাকরিপ্রার্থীদের কাছে তিনি ‘মাসিহা’ , তিনিই ভগবান। কিন্তু সেই বিচারপতির এমন কয়েকটি মন্তব্য, তা নিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে তোলপাড়ও কম হয়নি।
১.২০২২, ১৩ এপ্রিল: দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে এজলাসে বসে জানিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, “দুর্নীতি দেখলে আমি রুখে দাঁড়াবই। মাথায় বন্দুক ঠেকালেও আমি থামব না। তিনি বলেন, সব আমলেই দুর্নীতি হয়। আমি কোনও রাজনীতি করছি না। আইনজীবীরা রাজনীতি করতে পারেন।” তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য, “মাথায় বন্দুক ঠেকালেও দুর্নীতির বিরোধিতা করে যাব।”
২.২০২২, ৬ ডিসেম্বর: যোগ্য প্রার্থীদের বদলে অযোগ্যদের চাকরি হয়েছে, এমন অভিযোগ বারবার সামনে এসেছে। ২০১৬-র প্যানেল অনুযায়ী, ৪২ হাজার ৫০০ শিক্ষকের নিয়োগ হয়েছিল প্রাথমিকে। প্রয়োজনে সেই প্যানেল বাতিল করে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি। পর্ষদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি বলেন, ‘ঢাকি সব বিসর্জন কীভাবে দিতে হয়, আমিও জানি।’
৩. ২০২২, ৩ নভেম্বর: নিয়োগ দুর্নীতি মামলা চলছে। এই দিন নাকতলার বাসিন্দা সুশীল ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এসেছিলেন। তিনি বিচারপতিকে বলেছিলেন, “আমার ৯২ বছরের বৃদ্ধা মা আপনার কাজে খুশি হয়ে আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন।” বিচারপতি বলেন, “আপনার মাকে আমার প্রণাম জানাবেন।” সেদিনই এজলাসে বসে বিচারপতি বলেন, “আসল অপরাধী কে বা কারা, তা সবাই জানে। আমার জীবদ্দশায় তারা ধরা পড়বে বলে মনে হয় না। আমি তো নিজে ধরতে যেতে পারব না। যা করার, পুলিশ, ইডি , সিবিআই-কে করতে হবে।”
Justice Abhijit Gangopadhyay
৪. ২০২২, ১৬ অগস্ট: শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হতে গিয়ে এজলাসে বসেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, “পশ্চিমবঙ্গ এমন একটা রাজ্য হয়েছে, যেখানে টাকা না দিলে চাকরি মেলেনি।” এক ব্যক্তিকে শিক্ষক পদ থেকে বরখাস্ত করার প্রেক্ষিতে দায়ের হওয়া একটি মামলার শুনানি শেষে ওই মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
৫.২০২২, ১৯ সেপ্টেম্বর: এক টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ে সঞ্চালকের একটি প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ”মুড়ি-মুড়কির মতো দুর্নীতি হয়েছে বলেই মুড়ি-মুড়কির মত সিবিআই দিতে হয়েছে। আমি তো এটা জীবনে কল্পনাই করতে পারি না।”
৬. নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তের গতি নিয়েও একাধিকবার ইডি-সিবিআই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিলেন। মামলা দ্রুত শেষ করতে চেয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এজলাসে বসেই সিবিআই-কে ভর্ৎসনা করে বলেছিলেন, “আপনাদের থেকে তো ভাল জিজ্ঞাসাবাদ করতে আমি জানি।”
৭. ২০২২, ১ ডিসেম্বর: অনেক ধেড়ে ইঁদুর বেরোবে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এমনই মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নবম – দশমে বেআইনি নিয়োগ পাওয়া ১৮৩ জনের নাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়ার পর তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন।
৮. প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের নামে দুটি বৈধ পাসপোর্ট পাওয়া যায় বলে হাইকোর্টে জানিয়েছিল সিবিআই। আর এমন কথা শুনে বিস্মিত হয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তা জানতে চান তিনি। সেই সঙ্গে বিচারপতির আরও মন্তব্য, ‘দিদি একা সামলাতে পারছেন না। এত দুর্বৃত্ত চারপাশে থাকলে সামলাবেন কী করে?’
৯. তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীক এবং অনুমোদন ‘বাতিল’ করে দেওয়ার যে অভিমত প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, সংবিধান বিরোধী কাজের জন্য এই সরকারি দলের ‘লোগো’ এবং মান্যতা প্রত্যাহার করতে তিনি নির্বাচন কমিশনকে বলতে পারেন।