কলকাতা: একজন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি, অন্যজন বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা। সম্প্রতি তাঁদের মধ্যেই শুরু হয় বাক-বিতণ্ডা। সামনা সামনি না হলেও, তাঁদের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যে সামনে আসে বিতর্ক। অবশেষে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের সেই মান-অভিমান মিটল হাইকোর্টের এজলাসেই। বুধবার আদালতে একে অপরের মুখোমুখি হলেন। কী নিয়ে ক্ষোভ? কেন খারাপ লাগা তৈরি হল, তা নিয়ে কথা হয় দুজনের মধ্যে।
সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধীর সম্পত্তির হিসেব নিয়ে প্রশ্ন তুলে একটি মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এরপর এক ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে নাম না করে বিচারপতিকে নিশানা করেন আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। আইনের এ-বি-সি জানেন না বলে কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। এরপরই একটি মামলা চলাকালীন জ্যাঠামশাই সম্বোধনে কটাক্ষ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, সেটা নাম না করে অরুণাভ ঘোষকেই বলা হয়েছিল বলেই মনে করে আইনজীবী মহলের একাংশ।
বুধবার একটি মামলা চলাকালীন এক আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাৎ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘অরুণাভ ঘোষকে গিয়ে বলুন এই কোর্টে পায়ের ধুলো দিয়ে যেতে। আমার প্রতি কী ক্ষোভ রয়েছে? আমাকে এসে বলুন। আমি মাথা নীচু করে শুনব।’ আইনজীবী সুপ্রতিক রায় উত্তরে বলেন, ‘আপনার রাহুল গান্ধীকে নিয়ে করা মন্তব্য খারাপ লেগেছে ওঁর।’
এর কিছুক্ষণ পরে অরুনাভ ঘোষ আসেন। তাঁকে বিচারপতি বলেন, ‘আপনার প্রতি আমার কোনও ক্ষোভ নেই।’ উত্তরে আইনজীবী বলেন, ‘ক্ষোভ থাকলেই ভালবাসা হবে। আমি তো রাতে ঘুমতে পারিনি।’
বিচারপতি তাঁকে বলে, ‘আপনি বর্ষীয়ান আইনজীবী। যা হয়েছে ভুলে যান। আমি কিছু মন্তব্য করেছি। ভুলে যান। আমি সব তুলে নিচ্ছি।’ অরুণাভ ঘোষও বলেন, ‘আমি কিছু মনে রাখি না।’ বিচারপতি আবারও বলেন, ‘আমি আমার মন্তব্য তুলে নিচ্ছি। ভালবাসা থাকুক। ক্ষোভ রাখবেন না। যা হয়েছে ভুলে যান। আমিও ভুলে যাচ্ছি।’
ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আইনজীবী কিশোর দত্তকে শুনানির মাঝে বলেছিলেন, ‘কিছু বলার থাকলে আদালতে বলুন। জ্যাঠা মশাইদের কাছ থেকে শুনতে চাই না, কে বলতে পেরেছে আর কে পারেনি। আমি আইনের এবিসি জানি না, বলছেন একজন। উনি কী জানেন আইনের?’ সেই জ্যাঠামশাই আসলে অরুণাভ ঘোষ বলেই মনে করেছিলেন অনেকে।
কিছুদিন আগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, গান্ধী পরিবারের সম্পত্তি এত কী ভাবে হল, তা পারলে জানার চেষ্টা করতেন তিনি। তারপরেই বিশিষ্ট আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ বিচারপতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। একটি ইউ টিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘উনি আইনের এবিসি জানেন না।’ নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার বিচার সঠিক পদ্ধতিতে করা হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক মামলায় নজিরবিহীন সব নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। চাকরিপ্রার্থীরা তাঁর নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই বিচারপতির নির্দেশেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীকে। আবার মামলাকারী ববিতা সরকারকে অঙ্কিতার জায়গায় চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।