কলকাতা: নিম্ন আদালত ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল কামদুনিকাণ্ডের তিনজন অভিযুক্তকে। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট তিনজনের একজনকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করল। বাকি দু’জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড। আরও তিনজন দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল নিম্ন আদালতের বিচারে। যাবজ্জীবনের নির্দেশ দিয়েছিল কোর্ট। তাদেরও একজন বেকসুর খালাস হল এদিন। বাকি দু’জন ১০ হাজার টাকা জরিমানায় মুক্ত হবে। তবে সেই টাকা না দিতে পারলে আরও তিনমাস জেল খাটবে তারা। আদালতের এই নির্দেশে এই মুহূর্তে তোলপাড় রাজ্য। আর রাজ্য রাজনীতিতেও শুরু টানাটানি। সকলেই হাইকোর্টের নির্দেশ শিরোধার্য বলে মানছে। তবে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পাল্টা শাসকদলের দাবি, পুলিশের তদন্তে কোনও গাফিলতি ছিল না। হাইকোর্ট যেমনটা মনে করেছে, নির্দেশ দিয়েছে।
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এদিন বলেন, “এটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। বহুক্ষেত্রেই দেখা যায়, ফাঁসির যে রায় কখনও কখনও সেটা যাবজ্জীবন হয়ে যায়। আবার এত বছর হয়ে গেলে যাবজ্জীবনটা সেই অনুযায়ী অ্যাডজাস্ট হয়। যেহেতু এটা ভয়ঙ্কর অপরাধ, আদালত নিশ্চয়ই সেইমতোই বিচার করেছে। আদালতের রায়ের উপর দাঁড়িয়ে তো কোনও মন্তব্য করা যায় না। পুলিশ পুরদস্তুর তদন্ত করেছে। সেইমতো শাস্তি হয়েছে। বাকিটা হাইকোর্টের ব্যাপার।”
তবে বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের বক্তব্য, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তিই অনেকে চেয়েছিলেন। ফলে এই রায়ে সকলে খুশি হবেন না। শঙ্কর ঘোষ বলেন, “আদালতের রায় যেহেতু, এ নিয়ে কিছু না বলে শুধু বলতে চাই বিচার প্রক্রিয়া বিশেষ করে পুলিশি তদন্তের ক্ষেত্রে কোনও সক্রিয়তার অভাব রয়ে গিয়েছিল কি? যার কারণে আজকে এই ধরনের নৃশংস অপরাধ সংগঠিত করার পরও কেউ কেউ খালাস হচ্ছে? এটা মানুষের মনে নিশ্চিতভাবে প্রশ্ন তুলবে।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া অপরাধীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ আদালতে পেশ করা পুলিশের কাজ। তা ঠিকমতো হয়নি। মহিলা মোর্চার তরফে আন্দোলনে নামার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার চিন্তাভাবনার কথাও শোনান সুকান্ত।
আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর কথায়, “পুলিশের এক প্রকার নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এই রায়টা হল। তৃণমূল যে অভিযুক্তদের পক্ষে মিছিল করেছে, পুলিশের কি আর সাহস হবে তাদের বিরুদ্ধেই ঠিকমতো চার্জশিট গঠন করার, প্রমাণ ঠিকমতো দাখিল করার। পুলিশের ভিতরে ঢুকলে অনেক কিছুই বোঝা যায়। আমি তো ৪২ দিন জেলে ছিলাম। লকআপে থেকে অনেক জ্ঞানই অর্জন করেছি। পুলিশ চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে।”