কলকাতা: ১০ তারিখ ইডি দফতরের সশরীরে হাজিরা দিতে হচ্ছে না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে। তবে তাঁর কাছে যে নথি তলব করা হয়েছে, তা তাঁকে ওই দিনই জমা দিতে হবে। নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় শুক্রবারের শুনানিতে স্পষ্ট করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন ও উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্ট এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই এই গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
এই মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, নিয়োগ দুর্নীতিতে টাকার লেনদেন সামনে আসা উচিত। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের সাজা হওয়া উচিত। এখানে মামলাকারীকে সাক্ষী হিসেবে তলব করা হয়েছে। যেহেতু তদন্ত চলছে তাই এই তথ্য প্রয়োজনীয়। আর্থিক লেনদেন কীভাবে হয়েছে, সেই তথ্য সামনে আসা উচিত। বিচারপতি আরও জানান, সত্যি সামনে এলে মূল চক্রী উঠে আসবে। আর সত্যি সামনে আনার জন্য স্বচ্ছ ও দ্রুত তদন্তের প্রয়োজন। আর এজন্যই আদালতের নজরদারিতে তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ফলে এই আদালত কোনওভাবেই তদন্তে হস্তক্ষেপ করবে না।
মামলার শুনানিতে উল্লেখ করা হয়, ওই কোম্পানিতে দু’বছর ডিরেক্টর ছিলেন। বর্তমানে অভিষেক ওই কোম্পানির সিইও। তিনি একজন সাংসদও। ওই কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসারের কাছ থেকে প্রচুর টাকার সম্পত্তি উদ্ধার হয়েছে। তিনি এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন। মামলাকারী তথ্য এবং নথি প্রকাশ করলে তাতে অসুবিধার কিছু নেই। তাঁর আইনজীবীও এক সপ্তাহের মধ্যে সব নথি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ১০ তারিখ মামলাকারী যে নথি জমা দেবে, তাতে ভাল করে খতিয়ে দেখবেন তদন্তকারীরা। তারপর প্রয়োজন পড়লে মামলাকারীকে সমন পাঠাতে পারে ইডি। তবে সেক্ষেত্রে তাঁকে ৪৮ ঘণ্টা আগে নোটিস পাঠাতে হবে। বিচারপতির বক্তব্য, ১৯ মাস ধরে এই তদন্ত চলছে। তদন্ত আরও বিলম্বিত হলে কারও জন্য তা সুখকর নয়।
পাশাপাশি এদিন একক বেঞ্চকেও সতর্ক করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে, তদন্ত চলার সময়ে আগাম কোনও মন্তব্য নয়। ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, কোনও মামলা চলাকালীন যদি মামলাকারীকে নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়, তাহলে তদন্তপ্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, আদালতের উচিত স্বচ্ছ, দ্রুত, নিরপেক্ষ এবং নির্ধারিত সময়ে যাতে তদন্ত শেষ হয়, তা নিশ্চিত করা। এটা মনে রাখতে হবে, কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা মন্তব্য মামলার বিচারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। চেষ্টা করা উচিত, তদন্ত থেকে কী বেরিয়ে এল আদালতের তা দেখা উচিত। তবে এই মামলায় তাৎক্ষণিকভাবে সিঙ্গল বেঞ্চ নিজের এক্তিয়ার লঙ্ঘন করেনি বলেও ডিভিশন বেঞ্চ উল্লেখ করেছে।
ইডি-র তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, যে সব তথ্য চাওয়া হয়েছে সেগুলি প্রয়োজনীয়। ইডির মতো হাইপ্রোফাইল তদন্তকারী সংস্থার সেগুলি অগ্রাহ্য করা উচিত নয়। যিনি তদন্তকারী অফিসার বা যাঁরা তদন্ত করছেন, তাঁরা যথেষ্ট দক্ষ হবেন। মামলাকারীর কাছ থেকে যে সব তথ্য চাওয়া হয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহল থাকবেন। যদি প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাড় করতে ব্যর্থ হয় ইডি, তাহলে সেটা তাদের জন্য খারাপ বিষয়। মানুষের কাছে ইডির আত্মবিশ্বাসে অভাব এমন ধারণার জন্ম দেবে। বিচারপতি বলেন, “আমরা আশা করব তদন্ত সঠিক পথে এগোবে। একই সঙ্গে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করবে ইডি।” আদালতের আরও বক্তব্য, ইডিকে নিশ্চিত করতে হবে তদন্ত চলাকালীন তাদের দেওয়া সব তথ্য গোপন থাকবে।