কলকাতা: নন্দীগ্রাম মামলায় বিতর্কে জড়িয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দ। তাঁকে বিজেপি শিবিরের ঘনিষ্ঠ বলে প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল। ছবি প্রকাশ করে তৃণমূল নেতারা দাবি করেছিল যে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বিচারপতি কৌশিক চন্দের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের সুপারিশে ছিল সেই বিচারপতির নাম। সেই সুপারিশ মেনেই কলকাতা হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে জায়গা পেলেন তিনি। এতদিন পর্যন্ত অস্থায়ী বিচারপতি ছিলেন তিনি।
হাইকোর্টের যে কোনও বিচারপতিকেই স্থায়ী করার আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মতামত জানতে চাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যদিও আইনজীবী মহলের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর মতামতের জেরে সাধারণত শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্তে বিশেষ কোনও ফারাক পড়ে না। বাস্তবেও সেটাই হতে দেখা গিয়েছে।
কে এই কৌশিক চন্দ?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ। ১৯৯৭ তে পাশ করার পর ১৯৯৮ থেকে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন তিনি। পরে ২০১৪ তে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে কাজ শুরু করেন ও ২০১৫-তে কেন্দ্রীয় সরকারের সলিসিটর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। ২০১৯ পর্যন্ত সলিসিটর জেনারেল হিসেবেই কাজ করেন তিনি। ২০১৯-এর ১ অক্টোবর থেকে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে কাজ শুরু করেন।
নন্দীগ্রাম মামলা নিয়ে কী বিতর্ক?
নন্দীগ্রাম মামলা কৌশিক চন্দের এজলাসে যাওয়ার পর রাজনৈতিক চাপানউতোর তুঙ্গে উঠেছিল। যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত হয় তখনই। বিচারপতি কৌশিক চন্দ পক্ষাপাতদুষ্ট, এই অভিযোগ তুলে মামলাটি অন্য এজলাসে সরানোর আবেদন জানান খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৌশিক চন্দের সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে আবেদন জানানো হয়, যাতে এই মামলাটি অন্য বিচারপতির বেঞ্চে সরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক বাক বিতণ্ডার পর অবশেষে মামলাটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ।
মামলাটি ছেড়ে দেওয়ার সময় বিচারপতি তোপ দেগে বলেছিলেন, ‘বিচার ব্যবস্থাকে কলুষিত করা হয়েছে।’ মামলাটি সরে যায় বিচারপতি শম্পা সরকারের এজলাসে। কিন্তু নন্দীগ্রামের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন ঘিরে যে পরিমাণ রাজনীতির জল আদালতে জলঘোলা হয়, তা ছিল একপ্রকার নজিরবিহীন।
ছবি প্রকাশ করে কৌশিক চন্দকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে দিলীপ ঘোষের পাশে বসে আছেন ওই বিচারপতি। অন্য একটি ছবিতেও দেখা যাচ্ছে বিজেপির লিগাল সেলের অনুষ্ঠানে বসে আছেন তিনি। এই ছবিকে হাতিয়ার করেই আক্রমণ শানিয়েছিল তৃণমূল।
এ দিকে, সম্প্রতি পাঁচ নতুন বিচারপতি পেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে এই বিচারপতিদের প্রত্যেককেই আপাতত অ্যাডিশনাল বা অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে রাখা হচ্ছে। সাধারণত বিচারপতিরা ছ’মাস পর স্থায়ী হন। তবে এ ক্ষেত্রে দু’বছর অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে রাখার কথা বলা হয়েছে। যে পাঁচ বিচারপতিকে নিয়োগ করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে তিন জন বাঙালি বিচারপতি রয়েছেন। যাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে তাঁরা হলেন, কেসং ডোমা ভুটিয়া, রবীন্দ্রনাথ সামন্ত, সুগত মজুমদার, বিভাস পট্টনায়ক এবং আনন্দকুমার মুখোপাধ্যায়। আরও পড়ুন: ‘হঠাৎ ভবানীপুরেই কেন ভোট? কমিশন অবশ্যই প্রভাবিত হয়েছে’