কলকাতা: বাগুইআটি থানার আইসি কল্লোল ঘোষকে ক্লোজ করা হল। বাগুইআটিতে জোড়া অপহরণ এবং খুনের ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ। সাংবাদিকদের বললেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত দুঃখপ্রকাশ করেছেন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে। পরিবারের পাশে আমরা আছি। এর তদন্তভার সিআইডি-র হাতে দেওয়া হল।” ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী ডিজিকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এই মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী, জানালেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
উল্লেখ্য, এই ঘটনায় প্রথম থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিল নিহত দুই ছাত্রের পরিবার। ২২ অগস্ট থেকে নিখোঁজ ছিল দুই ছাত্র। ২৩ অগস্ট থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করে পরিবার। ছাত্রের পরিবারের দেওয়া বয়ান অনুযায়ী, এরপর আসে মুক্তিপণ চেয়ে এসএমএস। সেই বিষয়টিও জানানো হয় থানায়। অভিযোগ, পুলিশ কেবল ফোন নম্বর লোকেট করে অতনুর মোবাইল উদ্ধার হয়। টানা ১৫ দিনের মধ্যে এই তদন্তের গতি আর এক ফোঁটাও এগোয়নি বলে অভিযোগ। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর। বসিরহাট হাসপাতালের মর্গ থেকে দুই ছাত্রের দেহ নিয়ে আসে পুলিশ। ১২ দিন ধরে মর্গেই পড়ে ছিল দেহ দুটি।
কাট টু! দুই ছাত্রের একসঙ্গে দেহ উদ্ধারের ঘটনার পর মঙ্গলবার দিনভর তপ্ত থাকে কেষ্টপুর। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ, মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্রর বাড়িতে ভাঙচুর, রাজনৈতিক নেতৃত্বের আগমনে তেড়েফুড়ে ময়দানে নামে পুলিশ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয় চার জনকে। সাংবাদিক বৈঠক করে গ্রেফতারির খবর দেন পুলিশ কর্তা। যদিও মূল অভিযুক্ত এখনও অধরা। কিন্তু প্রশ্ন, ১২ দিন ধরে বসিরহাট মর্গে ছাত্র দু’জনের দেহ পড়ে থাকলেও, কেন খবর পেল না পুলিশ? পরিবারের তরফ থেকে প্রথমেই সত্যেন্দ্রর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছিল, তবুও কেন তাতে সদর্থক ভূমিকা নেওয়া হয়নি? একই প্রশ্ন তুলে বাগুইআটি থানায় বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি মহিলা মোর্চা। ঠিক তার আধ ঘণ্টার মধ্যেই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, এই তদন্তের ভার দেওয়া হচ্ছে সিআইডি-কে।
উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত পুলিশি তদন্তে যা জানা যাচ্ছে
এক. সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কেনার জন্য ২২ অগস্ট বাড়ি থেকে বের হয় অতনু অভিষেক। সত্যেন্দ্র তাদের রাজারহাটে নিয়ে যায়।
দুই. সত্যেন্দ্র আগে থেকেই মিনাখাঁ থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে। কর্নাটকের নম্বরপ্লেট দেওয়া গাড়িটি সেল্ফ ড্রাইভ সার্ভিসের।
তিন. ওই গাড়িতেই সত্যেন্দ্র অতনু ও অভিষেককে নিয়ে ২২ অগস্ট প্রথমে রাজারহাটে যায়। সেখান থেকে বাসন্তী হাইওয়ে। গাড়িতে পাঁচ জন ছিল। কর্নাটকের নম্বরপ্লেট দেওয়া গাড়িতেই খুন করেছিল সত্যেন্দ্র।
চার. দুই ছাত্রকে খুন করে মিনাখাঁর স্টোরে গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছিল আততায়ী। রক্ত মুছে স্টোরে গাড়িটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
পাঁচ. ন্যাজাট ও হাড়োয়া খাল থেকেই উদ্ধার হয় দুই ছাত্রের দেহ।
ছয়. কেবল টাকা পয়সার লেনদেন নয়, পুরনো একটা আক্রোশ কাজ করছে বলে পুলিশ মনে করছে।