কলকাতা: একটি গানের রিয়ালিটি শোয়ে প্রথম বাংলার মানুষ চিনেছিল অদিতি মুন্সীকে। ছোটখাটো চেহারা, মুখ ভরা হাসি, নিচু স্বরে কথা, হরিনামে মঞ্চ মাতাচ্ছেন। যত দিন গিয়েছে, কীর্তনকে বাঙালি শ্রোতার কাছে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। সেই অদিতি মুন্সীর স্বামী দেবরাজ চক্রবর্তীর বাড়িতে এদিন পৌঁছয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই অভিযান বলে নিজেই জানিয়েছেন দেবরাজ। শুধু দেবরাজের বাড়িই নয়, সিবিআই গিয়েছে অদিতির স্টুডিয়োর ঠিকানায়ও। ইতিমধ্যেই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়। তাঁরই তদন্তে অদিতির স্বামীর বাড়িতে সিবিআই হানায় জোর চর্চা বিভিন্ন মহলে।
রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ২০২১ সালে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে চমকে দিয়েছিল তৃণমূল। তৃণমূলের দীর্ঘদিনের নেতা পূর্ণেন্দু বসুর বদলে সেবার প্রার্থী হন অদিতি মুন্সী, রাজনীতির আঙিনায় একেবারে আনকোরা মুখ। ততদিনে দেবরাজ বিধাননগরের কাউন্সিলর হয়ে গিয়েছেন।
বাগুইআটি দক্ষিণপাড়ার মেয়ে অদিতি রবীন্দ্রভারতী থেকে কীর্তনে এমএ করেন। গানের স্কুলও রয়েছে তাঁর। বহু ছাত্র ছাত্রীকে গান শেখান তিনি।গানের দিদিমণি। অদিতি নিজেও নিয়মিত গানের চর্চা করেন। স্টেজ শো থাকে প্রায়ই।
২০২১ সালে নির্বাচন কমিশনে অদিতি মুন্সী যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন,সেখানে জানিয়েছিলেন, সেই সময় তাঁর হাতে ছিল নগদ দেড় লক্ষ টাকা। স্বামী দেবরাজের হাতে সে সময় নগদ ছিল ৪৫ হাজার টাকা। অদিতির একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সে সময় ছিল ২ লক্ষ ২ হাজার ২৭২.৪১ টাকা। আরেকটিতে ২০ হাজার ৭৭৩.৬৭ টাকা। সঙ্গে ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৫৪০ টাকার এফডি। দেবরাজের একটি সেভিংস অ্যাকাউন্টে ছিল ৪৯,৭৬৭.৫২ টাকা। আরেকটি অ্যাকাউন্টে ছিল ৬২,০৭৬.২২ টাকা।
নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া অদিতির তথ্যে, মিউচুয়াল ফান্ড, জীবনবিমা, পার্সোনাল লোনের ‘স্পাউস’ কলামে লেখা ছিল ‘নট অ্যাপ্লিকেবল’ বা প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ দেবরাজের নামে সে সময় কিছু ছিল না। অদিতির একটি জীবনবিমার ম্যাচিউরিটি অ্যামাউন্ট ছিল ১,০০,০০০ টাকা। আরেকটির ম্যাচিউরিটি অ্যামাউন্ট ছিল ২,৫০,০০০ টাকা। সে সময় দু’টি গাড়ি ছিল অদিতির। একটি ১৮ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকার, অন্যটি প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকার।
তবে দেবরাজের নামে কোনও গাড়ির উল্লেখ সেই হলফনামায় ছিল না। ১৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার গয়না ছিল সে সময় অদিতির। তবে দেবরাজের ছিল ১৫০ গ্রাম ওজনের গয়না, বাজার মূল্য ছিল ৬,৭৫,০০০ টাকা। অদিতির পেশা হিসাবে লেখা ছিল শিল্পী। স্বামীর নামে একটি সিভিল কনস্ট্রাকশন ফার্মের উল্লেখ ছিল সেই হলফনামায়। এছাড়া বিধাননগর মিউনিসিপল কর্পোরেশন থেকে বেতনের উল্লেখ ছিল সেখানে। তবে সেই হলফনামাতেই লেখা ছিল ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে দেবরাজের আয় ছিল ২ লক্ষ ৯৬ হাজার ৭৭৭ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তা বেড়ে হয়েছিল ৭ লক্ষ ১০ হাজার ০৯৭ টাকা। প্রায় ৩ গুণ বাড়ে আয়।