কলকাতা: জলমগ্ন রাস্তা, তারই মধ্যে ছিড়ে পড়েছে বিদ্যুতের তার! পর্ণশ্রী (Parnasree) থানার সামনে রাত দশটার সময় ৪৪০ হাই ভোল্টেজ তার একটি লাইট পোস্ট থেকে ছিঁড়ে পড়ে যায়। জনবহুল এলাকায় এরকম একটি ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে স্থানীয়রা। তত্পর সিএসসি।
বৃহস্পতিবার রাতে আচমকাই থানার সামনে তারটি ছিঁড়ে পড়ে যায়। তবে সে সময় ওই রাস্তা দিয়ে কেউ যাচ্ছিলেন না। ফরে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। স্থানীয়দের কথা অনুযায়ী, প্রথমে একটি লাইটপোস্টে আগুন জ্বলতে দেখেন স্থানীয় দোকানদাররা। তাঁরাই ইলেকট্রিক সাপ্লাই ও দমকলে খবর দেন।
পোস্টটিতে আগুন জ্বলার পরেই ৪৪০ ভোল্টের তারটি রাস্তার মাঝখানে ছিঁড়ে পড়ে যায়। পর্ণশ্রী থানার ঢিল ছোড়া দূরত্বে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ বেরিয়ে এসে রাস্তাটিকে আটকে দেয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছন দমকল এবং বিদ্যুত্ কর্মীরা।
তারপর সিএসসির কর্মীরা, ওই ছেঁড়া তার থেকে ইলেকট্রিক লাইন বন্ধ করে দেন। লাইট পোস্টগুলিতে প্রচুর তারের জটলা বলেই এরকম ঘটনা বলে জানা গিয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বেহালা পূর্বের বিধায়িকা রত্না চট্টোপাধ্যায়। পুলিশ ও বিদ্যুত্ দফতরের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পুলিশকে গোটা বিষয়টি দেখে রাখার জন্য বলেন।
টানা বর্ষণে জল জমেছে শহরের একাধিক জায়গায়। টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, তারাতলা, ভবানীপুর, মিন্টো পার্ক, ক্যামাক স্ট্রিট জল থই থই। ঠনঠনিয়া, ক্য়ামাক স্ট্রিট, মিন্টো পার্ক, ঠনঠনিয়া, কলেজ স্ট্রিট, সেক্টর ফাইভ, চিনার পার্ক, কাঁকুড়গাছি, কৈখালি এলাকা জলমগ্ন। সোমবার কার্যত সারা দিনই পাম্প চালিয়ে জল গঙ্গায় ফেলা হয়েছে। গঙ্গায় জলের স্তর বাড়তে শুরু করেছে। শহরের নিকাশি নালার জল কীভাবে গঙ্গা দিয়ে বের করবে, তা নিয়ে রীতিমতো সংশয়ে কলকাতা পুর প্রশাসন।
শহরের চিত্র দেখেই ভয় পাচ্ছেন পুরকর্তারা। তারই মধ্যে বাড়ছে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা। এই দুর্যোগে ইতিমধ্যেই বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। গত তিন দিনে হয়েছে ৭ জনের। খড়দহে মঙ্গলবার বাড়িতেই বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে মা-বাবা-ছেলের। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খড়দার পাতুলিয়াতে নিজেদের বাড়িতে জমা জলেই বিদ্যুত্স্পৃষ্ট দম্পতি ও তাঁদের কিশোর ছেলের। খড়দহের ই সরকারি আবাসনে নিজের স্ত্রী ও দুই পুত্রকে নিয়ে থাকতেন বছর চল্লিশের রাজা দাস। কিছুদিন ধরেই বৃষ্টির জেরে আবাসনের ভেতরেও জল জমেছে। জমা জলেই এদিন ঘরের মধ্য়েই বাড়ির কোনও কাজে বিদ্যুত্ সংযোগ করতে গিয়েছেল রাজা। সেইসময়ে তিনি বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হন। স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে আসেন স্ত্রী পৌলমী। তিনিও বিদ্যুত্স্পৃষ্ট ( Electrocution) হন। মা-বাবাকে বাঁচাতে আসেন বছর এগারোর শুভ দাস। তারও মৃত্যু হয়।
উত্তর দমদমে বাড়ির সামনে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় দুই কিশোরীর। পড়তে যাওয়ার সময়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে। উল্টোদিক থেকে আসা একটি গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়ে বিদ্যুতের পোস্ট ধরে ফেলে এক কিশোরী। বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু হয় দু’জনেরই। এছাড়াও খড়দহে আরও দুই ব্যক্তির মৃত্যু, মালদায় এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু ভয় ধরিয়েছে। বিদ্যুত্ দফতরের কর্মীরাও বারবার সচেতন করছেন। তবে এইভাবে রাস্তায় কত পোস্ট বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ে চিন্তায় প্রশাসনিক কর্তারা।
আরও পড়ুন: Babul Supriyo: সাংসদ পদ ছাড়ার আগে ফেসবুকে দিলেন সব ‘ট্রোলের’ জবাব!