বিয়ের পর প্রথম জন্মদিন। স্বাভাবিকভাবেই আব্দার একটু বেশি। আর বিয়ের মাত্র দু-মাসের মাথায় জন্মদিন পড়েছে। অনেক কাঠ-খড় পোড়ানোর পর শেষ পর্যন্ত বিয়ে হয়েছে। ফলে নতুন বউয়ের আব্দার মেটাতে যে স্বামী একটু বেশি তৎপর হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই স্বামীর হাত ধরেই অবশেষে পূর্ণ হল শম্পার দীর্ঘদিনের সখ,পা পড়ল ডান্স বারে। মফস্বল থেকে কলকাতায় আসা। পড়াশোনার তাগিদে কলকাতায় বেশ কয়েকবার এলেও ডান্স বার দূরস্ত, পানশালায় ঢোকারও সাহস হয়নি। তাই সিনেমায়, অনেক গল্পে ডান্স বারের কথা জানলেও এবারেই প্রথম চাক্ষুষ করল। পার্কস্ট্রিটের নামী ডান্স বারে ঢুকে যা চোখে পড়ার, সেটা তো পড়লই। এখানে বিশেষ নতুন বা আশ্চর্যজনক কিছু নেই। কিন্তু, পানশালার বাইরে গেটের আশপাশে এরা কারা ঘুরছে?
কেউ টি-শার্ট পরে, আবার কারও পরনে জিনস-শার্ট। পরনের শার্ট বা টি-শার্টের উপরের দিকের বোতাম খোলা। যেন কিছুটা ইচ্ছাকৃতভাবে লোমশ বক্ষ দেখানোর চেষ্টা। কারও চোখে আবার রঙিন চশমা, যা সন্ধ্যার পর একেবারেই বেমানান। তবে কমন বিষয় হল, সকলের হাতেই একটি কাপড়ের রুমাল। কারও হাতের কব্জিতে রুমাল বাঁধা তো কেউ রুমাল দোলাচ্ছে। অনেকের আবার শার্টের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে চাবি বা গিটার বা অন্য বিশেষ চিহ্নের লকেট দেওয়া চেইন। অনেকের আবার কানে দুলও রয়েছে। কারও এক কানে সোনার রিং তো কারও দু-কানে পাথর সেটিং ছোট্ট ট্যাপ। সকলেরই বুকে বা গলায় বা ঘাড়ের কাছে রঙিন ট্যাটু করা। পার্কস্ট্রিটের ফুটপাতে পানশালা বা বড় হোটেলের গেটের কাছে আলো-আঁধারির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। এই ভিড়ে রূপান্তরকামীদেরও দেখা গিয়েছে।
মফস্বলের মেয়ে হলেও কলেজ পাশ করা শম্পা। ফলে চোখ যে সবদিকে থাকবে, একটু অন্য ধাঁচের অল্প বয়সি ছেলে-ছোকরা নজরে পড়লে কৌতূহল জাগবে, সেটাই স্বাভাবিক! তাই প্রথমবার ডান্স বারে গেলেও সেখান থেকে বেরোনোর পরও ওই ছেলে-ছোকরাদের দিকেই কৌতূহলী নজর গেল। তারপর ট্যাক্সিতে উঠেই স্বামীর কাছে শম্পার প্রথম প্রশ্ন, “ওরা কারা?”
শম্পার প্রশ্ন শুনে কিছুটা অবাক সুজয়। প্রথমবার ডান্স বারে এসে এরাও শম্পার নজর এড়ায়নি! যাই হোক, এককথায় সুজয়ের জবাব, “ওরা জিগোলো।” শিক্ষিতা শম্পা ‘জিগোলো’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। কলকাতায় ইউনিভার্সিটি আসার সময় দাদা, বন্ধুরা এই বিষয়ে সাবধান করেছিল। তাহলে এরাই তারা? এরাই এসকর্ট সার্ভিস করে? কৌতূহলী শম্পার চোখে ফুটে ওঠে নানা প্রশ্ন। এরপরই শম্পার খেয়াল পড়ে, পানশালায় ঢোকার আগেই এসকর্ট সার্ভিস দেখার অভিজ্ঞতা তার হয়েছে। এক নিঃশ্বাসে বলে চলে, পানশালায় ঢোকার আগে গেটের বাইরে অপেক্ষা করার সময় দেখেছি, একটি বড় গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে নেমে আসে মাঝবয়সি এক বিবাহিত মহিলা। তার ব্লাউজের পিঠটা অনেকটা কাটা। শাড়িও বেশ চকমকে। মুখে প্রচণ্ড মেকাপ করা, কানে বড়-বড় দুল, গলায় নেকলেস। বেশ বড়লোক বাড়ির বউ, তা দেখেই বোঝা যায়। খুব স্মার্টনেসের সঙ্গে সে গাড়ি থেকে নেমে ওই একটি ছেলের সঙ্গে কথাও বলে। এরপর গাড়ি এগিয়ে যায় কিছুটা। ওই ছেলেটিও একটু হেঁটে গিয়ে ওই গাড়িতে ওঠে। তারপর সোঁ করে চলে যায় গাড়িটি।
শম্পার কথা বুঝতে অসুবিধা হয়নি সুজয়ের। এসকর্ট সার্ভিস, জিগোলো সম্পর্কে শম্পা শুনে থাকলেও বিশেষ কিছু জানে না। তাই এই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে শম্পার চোখে-মুখে যেন এক অজানা আতঙ্কের ছাপ। তবে জিগোলো নিয়ে এতটা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। স্ত্রীকে আশ্বস্ত করে সুজয়। সে জানায়, সোনাগাছির মহিলা যৌনকর্মীদের মতোই এদের পেশা এটা। সাধারণভাবে বলতে গেলে, এরা পুরুষ যৌনকর্মী।
একসময়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল সুজয়। লেখালেখিও করে। সেই সূত্রে সোনাগাছি, জিগোলো সম্পর্কে এমন অনেক কিছুই তার জানা, যা অনেকে জানেন না। এটা তার পছন্দেরও বিষয়। তাই কৌতূহলী স্ত্রীকে থামিয়ে দেয়নি, বরং সুজয় বলে ওঠে, জানো, সোনাগাছিতে কেবল মহিলা নয়, রূপান্তরকামী মানে ট্রান্সজেন্ডার যৌনকর্মীও রয়েছে। এমনকি পুরুষ যৌনকর্মী পাওয়া যাবে বলে খবরও হয়েছিল। যদিও সেটা বোধহয় এখনও হয়ে ওঠেনি। তবে সোনাগাছির ‘দুর্বার’ সংগঠনের বাইরে রয়েছে ‘জিগোলো সার্ভিস’ অর্থাৎ পুরুষ যৌনকর্মী। এদের সংগঠন সোনাগাছির মতো সেভাবে প্রকাশ্যে না এলেও ‘জিগোলো’ নামে একটি সংগঠন রয়েছে। এদেরও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
পুরুষেরা আসছে দেহ ব্যবসার পেশায়? পুরুষদের থেকে যৌন সুখ কিনতে আসে মহিলারা? এদের আবার সংগঠন? আবার সোনাগাছিতে রূপান্তরকামী যৌনকর্মী? মানে, পুরুষরা যেমন টাকার বিনিময়ে মহিলাদের থেকে যৌনসুখ নিতে সোনাগাছি যায়, তেমন রূপান্তরকামীদের থেকেও…? প্রশ্নটাও শেষ করতে পারে না শম্পা। আর পারবেই বা কী করে! কথাগুলো যেন তার হজম হচ্ছে না। এরকমও হয় নাকি! আমাদের সমাজে এরকম আরও কত ঘটনা রয়েছে! ভেবেই অবাক হয়ে যায় সাধারণ, অতি সংরক্ষিত পরিবারে বেড়ে ওঠা ২৪ বছরের শম্পা।
জিগোলো কোথায় থাকে?
গোটা বিষয়টা বোধগম্য করতে জিগোলো সম্পর্কে নানা প্রশ্ন উঠে এল শম্পার মনে। তাকে শান্ত করে সুজয় জানায়, কলকাতার পার্কস্ট্রিট থেকে শুরু করে ধর্মতলা, লেকটাউন, পিকনিক গার্ডেন, যাদবপুর, টালিগঞ্জ, রুবি-বাইপাস-সহ বিভিন্ন স্থানে এদের দেখা যায়। প্রত্যেকের আলাদা-আলাদা এলাকা রয়েছে। তবে হঠাৎ করে যে কেউ চাইলেই এভাবে এই সমস্ত এলাকায় এসে দাঁড়িয়ে দেহ ব্যবসা করতে পারবে না। আগে সংগঠনে নাম লেখাতে হবে। সংগঠনে নাম লেখাতে হবে? অবাক হয়ে যায় শম্পা। সুজয় যখন এই বিষয়ে লেখালেখি করেছিল, তখন জিগোলোর গুটি কয়েক সদস্যর সঙ্গে তার আলাপ হয়েছিল। সুজয়ের মনে পড়ে যায় সেকথা। সে ৫-৬ বছর আগের কথা। স্মৃতির ইতিহাস হাঁতড়ে সুজয় জানায়, ভাল ঘরের ছেলে ছিল। পড়াশোনাতেও বেশ ভাল ছিল। কিন্তু, অভাবের জন্য কলেজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি। তারপর কলেজেরই এক বন্ধুর মাধ্যমে এক ম্যাসাজ পার্লারে কাজ করতে যায়। ব্যস, সেখান থেকেই এসে পড়ে দেহ ব্যবসার পেশায়। প্রথমদিকে খারাপ লাগলেও ধীরে-ধীরে এটা আর পাঁচটা পেশার মতোই মনে করতে শুরু করে বলে সুজয়কে জানিয়েছিল ছিপছিপে গড়নের ওই যুবকটি। রাজা (নাম পরিবর্তিত) নামে ওই যুবকটি জানিয়েছিল, তাদের আলাদা সংগঠন রয়েছে। আজকাল অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করে জিগোলো সংগঠনের সদস্য হওয়া যায়। সে না চাইলে পরিচয় গোপন থাকবে। তারপর সংগঠনই ঠিক করে দেবে ব্যবসার নির্দিষ্ট এলাকা। তবে ফর্ম ফিলাপ করলেই জিগোলোর সদস্য হওয়া যাবে না। বিশেষ যোগ্যতা প্রয়োজন।
জিগোলোর সদস্য হওয়ার যোগ্যতা
ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, যে কেউ জিগোলোর সদস্য হতে পারে। তবে বয়স ১৮ বছরের উপর হতে হবে। বয়স সাধারণত, ১৮ বছর থেকে ৪৫-৫০ বছরের মধ্যে থাকলে ভাল। অল্পবয়সিরা অগ্রাধিকার পায়। আর পাবে না-ই বা কেন! তরুণী যৌনকর্মীদের যেমন চাহিদা বেশি, তেমনই যুবক জিগোলোদের চাহিদা বেশি। আবার অতিরিক্ত মেদ হলে খদ্দের বিশেষ মেলে না। তাই প্রয়োজনে জিমে যেতে হয় এবং সংগঠন মনে করলে আলাদাভাবে গ্রুমিং ক্লাস দেয়। অর্থাৎ কীভাবে ক্লায়েন্টদের (মহিলা) কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলবে, কীভাবে ক্লায়েন্টদের কাছে টানবে, সেই পাঠ দেওয়া হয়। আসলে সোনাগাছিতে যেমন বাবুরা গিয়ে যৌনসঙ্গী পছন্দ করে নেয়, তেমন জিগোলোদের দেখেও পছন্দ করে মহিলারা। যদিও এই বিষয়টি অবাক করার মতো নতুন বলা যায় না। অনেক প্রাচীন সাহিত্যে এর উল্লেখ রয়েছে, প্রাচীন সমাজেও মহিলারাও তৃপ্তি সাধনের জন্য সঙ্গী খুঁজে নিতে পারত। এপ্রসঙ্গে বাৎসায়নের কামসূত্র-এর উল্লেখ করা যায়।
এ তো গেল জিগোলো হওয়ার যোগ্যতা। কিন্তু, সোনাগাছিতে রূপান্তরকামী যৌনকর্মী? আবার শম্পার চোখে-মুখে ফুটে ওঠে কৌতূহল। স্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাবও সুজয়ের অজানা নয়।
সোনাগাছিতে রূপান্তরকামী যৌনকর্মী
সোনাগাছির রূপান্তরকামী যৌনকর্মী বলতেই সুজয়ের মনে আসে রাজকুমার দাসের কথা। কলকাতার প্রথম দুই রূপান্তরকামীর মধ্যে একজন ও দেশের প্রথম লোক আদালতের রূপান্তরকামী বিচারক রাজকুমার দাস। তিনি পুরুষ থেকে মহিলায় রূপান্তরিত হয়েছিলেন। সোনাগাছির দুর্বার সমন্বয় কমিটির সদস্যও তিনি। তাঁর বলতে দ্বিধা নেই, দেশের আদিমতম পেশার মধ্যে পড়ে রূপান্তরকামীদের দেহ ব্যবসা। সোনাগাছির জন্মের আগে থেকে এই পেশার জন্ম হয়েছিল বললেও বোধহয় খুব একটা ভুল বলা হবে না।
আজও রূপান্তরকামীদের কথা শুনে অনেকে নাক সিঁটকোন। কিন্তু, তাঁরাও তো মানুষ। তাঁদেরও তো ইচ্ছা, অনিচ্ছা, মৌলিক অধিকার রয়েছে। খুব সুন্দর উদাহরণ দিয়ে রাজকুমার দাস জানিয়েছেন, হঠাৎ করে কেউ রূপান্তরকামী হয় না। এটা একেবারে জন্মগত। জন্মানোর সময় থেকেই কারও ভিতরে মহিলা ভাব আবার কারও ভিতরে পুরুষ ভাব থাকে। পরবর্তীতে সেই ভাব অনুযায়ী লিঙ্গ পরিবর্তন করে। আর রূপান্তরকামীদের দেহ ব্যবসার পেশা পৃথিবীর আদিমতম পেশা। অর্থাৎ দেহ ব্যবসায় রত রূপান্তরকামীদের মধ্যে সেভাবে কোনও ফারাক নেই।
সোনাগাছির মহিলা যৌনকর্মীদের সঙ্গে রূপান্তরকামী যৌনকর্মীদের ফারাক
রূপান্তরকামীরাও দুর্বার তথা সোনাগাছির অন্তর্ভুক্ত হলেও এখানকার মহিলা যৌনকর্মীদের মতো তাদের ব্যবসা কেবল ওই সব কোঠাবাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বলা ভাল, ওই সব বাড়িতে দেখাই যায় না তাদের। সোনাগাছি এলাকায় অনেক সময় খদ্দেরের অপেক্ষায় দাঁড়ালেও অনলাইন অ্যাপ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বিভিন্নভাবে ক্লায়েন্ট জোগাড় করে তারা। তারপর খদ্দেরের সঙ্গে চলে যায় কোনও হোটেল, রিসর্ট বা কলকাতার বাইরে অন্য কোথাও। তাই এদের ব্যবসায় যেমন টাকা রয়েছে, তেমন জীবনের ঝুঁকিও রয়েছে। রাজকুমার দাস জানান, অনেকেই খদ্দের সেজে এসে নানাভাবে অত্যাচার চালায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রূপান্তরকামী মহিলা যৌনকর্মী তার বীভৎস অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন। হোটেলের ঘরে সেই রাতে তিনি এক খদ্দেরের ডাকে গিয়েছিলেন। তারপর একজনের নামে ৪ জন এসে তাকে রীতিমতো ধর্ষণ করে। যৌনতার নামে চালায় অকথ্য অত্যাচার। এছাড়া জোর করে ওরাল সেক্স করানো, যৌনসুখ নিয়ে টাকা না দিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া, এমনকি প্রাণে মারার ঘটনাও ঘটে। যদিও বর্তমান সরকার ও প্রশাসন তাঁদের প্রতি দরদী এবং নানাভাবে সাহায্য করছে বলে জানিয়েছেন রাজকুমার দাস।
কেবল রূপান্তরকামী যৌনকর্মী নয়, খদ্দেরদের যৌন হেনস্থার শিকার জিগোলোদেরও হতে হয়। অনেক সময় তাঁদেরও ক্লায়েন্টকে তৃপ্ত করতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কিছু করতে হয়। আর ছিপছিপে চেহারার জিগোলোর যদি অত্যধিক মেদবহুল ক্লায়েন্ট জোটে, তাহলে তো কথাই নেই! তবে সোনাগাছির যৌনকর্মীরা প্রশাসনের সাহায্য পেলেও এই জিগোলোদের কপাল সেদিক থেকে অনেকটাই মন্দ।
স্পা-পার্লারের আড়ালে দেহ ব্যবসার মধ্যে রূপান্তরকামী-জিগোলোদের ব্যবসা কতটা গ্রহণযোগ্য?
বর্তমানে স্পা-পার্লারের আড়ালে দেহ ব্যবসার রমরমা শুরু হয়েছে। গোটা দেশের পাশাপাশি কলকাতাতেও এই ঢেউ এসে পড়েছে। যার ফলে সোনাগাছির পুরানো আখড়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু, সোনাগাছির রূপান্তরকামীদের ব্যবসায় এর কোনও প্রভাব পড়েনি বলেই জানান আনন্দওমেন-এর সেক্রেটারি রাজকুমার দাস। তাঁর কথায়, ” ভাটা পড়েনি, বরং ব্যবসা আরও বেড়েছে।” জিগোলোর মতো এঁদের কাছেও সোশ্যাল সাইট, অনলাইন গ্রুপ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে খদ্দের আসে। আর খদ্দের অনুযায়ী মেলে দাম। কেউ চাইলে দিনে ৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে পারে। পুরোটাই তার নিজের উপর নির্ভর করে বলে মনে করেন রাজকুমার।
জিগোলোদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। তাই আজকাল এমবিএ পাশ করা ছেলেরাও চাকরি ছেড়ে এই পেশায় যুক্ত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জিগোলো সুজয়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, এক সময়ে টাকার অভাবে বা শরীরের তাগিদে ছেলেরা দেহ ব্যবসায় আসত। আজকাল কলেজ পড়ুয়ারাও তাদের সখ মেটাতে এই পেশায় আসছে। এমনকি চাকরি করে মাসে যে টাকা পাওয়া যায় না, এই পেশায় দু-তিন রাতে সেই টাকা পাওয়া যায়। তাই এই পেশার চাহিদা বাড়ছে।
কারা জিগোলো সার্ভিস নেয়?
মূলত, ধনী বাড়ির মহিলারাই জিগোলো সার্ভিস নেন। অবিবাহিত মহিলা থেকে বিধবা, ডিভোর্সি এমনকি সংসারে থেকেও স্বামীর থেকে পরিতৃপ্তি না পেয়ে যৌন চাহিদা মেটাতে জিগোলোর কাছে আসে।
আবার, সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত, রূপান্তরকামী থেকে সাধারণ পুরুষ, মহিলাও যৌনসুখ নিতে রূপান্তরকামীদের কাছে আসে। কেউ টাকা দিয়ে যৌনতা কিনতে চায় তো কেউ রূপান্তরকামীদের কাছে কতটা সুখ পাওয়া যায়, তার পরখ করতে আসে।
তবে জিগোলো হোক বা রূপান্তরকামী যৌনকর্মী, এরা সাধারণত হোটেল বা রিসর্টে ক্লায়েন্টদের পরিষেবা দেয়। যাকে এককথায় বলা যায়, এসকর্ট সার্ভিস। অনেক ক্লায়েন্ট আবার নিজের বাড়িতেও ডেকে নেয়, সুজয়কে জানিয়েছিলেন ওই জিগোলো।
অর্থাৎ জিগোলো বা রূপান্তরকামী যৌনকর্মীদের নিয়ে আতঙ্কের বা নাক সিঁটকানোর কিছু নেই। এরাও আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই। ডাক্তারি, ওকালতির মতো দেহ ব্যবসাও একটা পেশা- স্বামীর মুখে জিগোলো, রূপান্তরকামীদের কথা শুনে যেন হাঁফ ছাড়ল শম্পার। শুধু হাঁফ ছাড়া নয়, শম্পা বলে ওঠে, এঁরাও মানুষ এঁদের সঙ্গেও যাতে কেউ প্রতারণা না করে, সেই বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়ার পাশাপাশি জনমত গড়ে তোলা জরুরি। গলায় ঝরে পড়ে আক্ষেপের সুর, সোনাগাছির মহিলা যৌনকর্মী নিয়ে অনেক আন্দোলনের কথা শোনা যায়। কিন্তু, জিগোলো, রূপান্তরকামীদের নিয়ে কোনও শোরগোল নেই! কিন্তু, এঁরাও তো সমাজে পরিষেবা দেয়। যে মহিলারা যৌনসুখ পাচ্ছে না, তাদের তৃপ্ত করে। তাহলে এদের প্রতি এত অনাদর কেন? – যেন সমাজের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিল শম্পা।