কলকাতা: কলকাতা বন্দর এলাকায় অস্ত্র উদ্ধার কাণ্ডে গ্রেফতার দুই দুষ্কৃতী। নান্টি ওরফে বাবলু ঘোষ এবং বিলাল ওরফে শেখ আবুল হোসেন নামে ওই দুই দুষ্কৃতীকে গতরাতে গ্রেফতার করা হয়। নান্টির বাড়ি নরেন্দ্রপুরে। বিলাল হাওড়ার বাসিন্দা। পশ্চিম বন্দর থানা এলাকায় অস্ত্র পাচারের মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন থেকেই হুগলির ডানকুনি টোল প্লাজ়ার কাছে অস্ত্র উদ্ধার হয়। ধানবাদ থেকে কলকাতামুখী বাসটিতে তারা উঠেছিল স্বামী-স্ত্রী হিসেবে। সঙ্গের ব্যাগে ছিল অর্ধেক বা তার বেশি তৈরি ৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্রাদির যন্ত্রাংশ। কলকাতার দিকে আসছিলেন তাঁরা।
ডানকুনি টোল প্লাজ়ার কাছে সেই সব অস্ত্র উদ্ধার করেছে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। গ্রেফতার করা হয়েছে স্বামী-স্ত্রী সেজে বাসে ওঠা মহম্মদ সাগির ও হাসিনা বেগম এবং তাদের সঙ্গী ইমতিয়াজ আহমেদকে।
বিহারের মুঙ্গের থেকে চোরাপথে আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গে পাচার করা হয়ে আসছে অনেক সময় আগে থেকেই। কিন্তু আগে অস্ত্র পাচারকারীরা ছোটো গাড়িতে বা সবজি গাড়িতে লুকিয়ে অস্ত্র পাচার করত। এখন পাচারের ধরন বদলে গিয়েছে। পুলিশের নজর এড়াতে কখনও বাইকে, কিংবা যাত্রীবাহী বাসেও অস্ত্র পাচার করা হয়।
পুলিশ মনে করছে, বন্দুক পাচার করা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে আগ্নেয়াস্ত্রের পার্টস (যন্ত্রাংশ) আলাদা করে রাখে পাচারকারীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে এই সব অস্ত্র আসছিল বিহারের মুঙ্গের থেকে। তবে এই পাচারকারীদের মূল চক্রী কে তা এখনও জানা যায়নি।
কয়েক মাস আগে রাজ্যে ভোট চলাকালীনও একই ঘটনা ঘটে। উদ্ধার হয় প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র। একজনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। সেই সময় জানা যায় এসটিএফ ও সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশ ডাকবাংলো পাকুর সড়কে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকেই উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রচুর পরিমাণে বোমা তৈরির সরঞ্জাম। গ্রেফতার করা হয় টেম্পু মণ্ডল (৩৮)কে। পুলিশ সূত্রে খবর, টেম্পু বিহারের বাসিন্দা। মুঙ্গেরের শাকহারাটোলায় তাঁর বাড়ি। তাঁর কাছ থেকে একটি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল, কার্তুজ ও প্রচুর বোমা তৈরির মশলা উদ্ধার হয়।
ভোট মিটতেই ফের বরাকরে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নামে এসটিএফ । কুলটি থানার বরাকরের বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকায় নাকা চেকিংয়ের সময় ২৫ টি ৭ এমএম পিস্তল ও ৪৬ টি ম্যাগাজিন-সহ আস মহম্মদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে ঝাড়খণ্ড থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পাচারের অভিযোগে ধৃত মহম্মদ ওরফে বাবলুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসানসোলের কুলটি থানার বরাকরে যান তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে, রাজ্যে কোথায় এই অস্ত্র পাচার করা হচ্ছিল। এই যুবক কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজ্যে আদৌ কোনও নাশকতার ছক কষা হচ্ছিল কিনা, কিংবা কোনও দাগী অপরাধীর হাত রয়েছে কিনা, সে সব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আপাতত এই সব কোনও প্রশ্নেরও উত্তর পাননি তদন্তকারীরা। ধৃতের কাছ থেকে প্রথমে তার বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা। সেই সূত্র ধরে তদন্ত এগোতে চাইছেন। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে ধৃত ঝাড়খণ্ডেরই বাসিন্দা। এবার এসটিএফের জেরার মুখে ধৃত।