কলকাতা: সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শহরের বড় আবাসনগুলিতে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এ নিয়ে একটি রিপোর্টও জমা পড়েছে নবান্নে। আরবানা, স্বর্ণমণি, শালবনি, এবং নিউটাউনের একাধিক আবাসনেও করোনা সংক্রমণের প্রকোপ বেশি। এই সব আবাসনে করোনা সংক্রমণ কীভাবে ঠেকানো যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ও নবান্নের কর্তাব্যক্তিরা।
স্বাস্থ্য অধিকর্তারা বলছেন, আবাসনগুলিতেই সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ হচ্ছে। এই মুহূর্তে আবাসনগুলিই উৎকন্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনের। এরই মধ্যে নবান্নে একটি রিপোর্ট জমা পড়েছে। আবাসনগুলিতে সংক্রমণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। নিউটাউনের আবাসনগুলির ক্ষেত্রে ফোরাম ও কমিটিগুলিকে নিয়ে একটি বৈঠক করার কথা ভাবা হচ্ছে। করোনার স্বাস্থ্যবিধি যাতে তাঁরা মেনে চলেন, সে ব্যাপারে সতর্ক করা হবে তাঁদের।
কমিটিগুলিকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, এই মুহূর্তের নবান্নের চিন্তার কারণ কোনও বস্তি এলাকা নয়, বড় বড় আবাসনও। কারণ সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই গিয়ে দেখা গিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না আবাসিকরা। অরক্ষিত মুখের ভিড় সর্বত্র। কলকাতা পৌরসভা ও নিউটাউনের ক্ষেত্রে হাউজিং ডিপার্টমেন্টে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সংক্রমণ ঠেকানোর পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে।
ঝুপড়ি অঞ্চল ঘিঞ্জি, উল্টোদিকে আবাসনগুলো অনেকটাই খোলামেলা। তা সত্ত্বেও কেন আবাসনগুলিতে হু হু করে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ? অভিজাত আবাসনগুলিতে করোনা ছড়ানোর অন্যতম কারণ, বর্ষবরণের উৎসব-পার্টি-হুল্লোড়, আর লিফটের বহুল ব্যবহার।
এ প্রসঙ্গে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সংক্রমণটা হাই রাইজ়ে বেশি হচ্ছে। আর সেটা লিফটের ব্যবহারের ক্ষেত্রেই বেশি হচ্ছে। লিফটের সুইচ বেশি ধরছেন আবাসিকরা। আর লিফট বন্ধ থাকায়, বাতাসও খেলছে না। ফলে আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম, যাতে স্প্রে করা হয়।” পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই কলকাতায় কনটেইনমেন্ট ও মাইক্রো কনটেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করা হয়েছে। হচ্ছে মাইকিংও। তবে স্বাস্থ্য অধিকর্তরা বলছেন, অভিজাত আবাসনগুলির ‘কেয়ারলেস’ মনোভাবটা কাটিয়ে উঠতে হবে ।
পরীক্ষা বাড়তেই বাংলায় বাড়ল দৈনিক সংক্রমণ। শেষ ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় আক্রান্ত ২১ হাজার। সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১ লক্ষ পার। মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। শুধু কলকাতাতেই আক্রান্ত ৬ হাজার ৫২৫ জন। বাংলায় পজিটিভিটি রেট ৩২ শতাংশ। দুশ্চিন্তা সেটাই। উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্ত ৪ হাজার ১৬ জন।
২৭ ডিসেম্বরেও ৫০০-র বেশি ছিল দৈনিক সংক্রমণ। ২ সপ্তাহের মধ্যে তা প্রায় ২৫ হাজারের দোরগোড়ায়। দৈনিক গ্রাফ লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে, ২৭ ডিসেম্বর আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪৩৯ জন। ৩১ ডিসেম্বর ৩ হাজার ৪৫১ জন। ৩ জানুয়ারি ৬,০৭৮ আর ৬ জানুয়ারি ১৫ হাজার ৪২১। ৯ জানুয়ারি কোভিড কালের সর্বোচ্চ সংক্রমণ। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা রাজ্য স্বাস্থ্য দফত ২৪,২৮৭ জন। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে তেমনটাই জানা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোমবার দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছে বটে, তবে তা পরীক্ষা কমার সৌজন্যেই।