সৌরভ পাল
১৯ জানুয়ারি ২০২০ সালের পর আবার ২০২২ সালের ২৮ অগস্ট। দীর্ঘ আড়াই বছর পর ফের ডার্বি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে কলকাতায়। শেষ বার যুবভারতী স্টেডিয়ামের স্কোরকার্ড ছিল, মোহনবাগান ২, ইস্টবেঙ্গল ১। মাঝে তিন বারের মুলাকাতেও কুপোকাত। বাংলার বাইরে, এটিকে মোহনবাগানের কাছে তিনটি ডার্বিতেই হেরেছে ইমামি ইস্টবেঙ্গল। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর শেষ বার ডার্বি জিতেছিল লাল হলুদ। রবিবাসরায়ী সন্ধ্যায় ১০০০ দিন ডার্বি না জেতার খরা কি কাটবে?
এই একই প্রশ্ন নিয়েই রাজ্যের দুই যুযুধানের মুখোমুখি হয়েছিল TV9 বাংলা। ফোন করা হয় দেবাংশু ভট্টাচার্য, সুদীপ রাহা, শতরূপ ঘোষ, দীপ্সিতা ধর এবং সৃজন ভট্টাচার্যকে। খাতায় কলমে তৃণমূল হয়েও রবিবার ‘দীপ্সিতা এবং সৃজনের দলের’ হয়েই গলা ফাটাবেন দেবাংশু। অন্য দিকে, মাথার চুল থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত বাম হয়েও ‘দেবাংশুর দলকেই’ সমর্থন করবেন দীপ্সিতা এবং সৃজন।
নিজে যে খুব বড় ফুটবল ভক্ত তা একেবারেই নয়। বরং ক্রিকেটটাই বেশি পছন্দের। বালীনিবাসী দেবাংশুর বাবা, কাকা ফুটবল অন্তপ্রাণ এবং ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। আর সেই ট্র্যাডিশেনেই একমাত্র ডার্বি এলেই ‘লাল’ হয়ে যান তৃণমূল মুখপাত্র। তাঁর কথায়, “আমি বংশ পরম্পরায় ইস্টবেঙ্গল ফ্যান। অনেক দিন ট্রফি নেই, এ বার যেন দলের শিকে ছেঁড়ে, এটাই ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা।” রাজনৈতিক মঞ্চে আপনার প্রতিপক্ষ, শতরূপ (ঘোষ) যদি ইস্টবেঙ্গল ফ্যান হয়, তা হলে ডার্বির দিনে কী বলবেন? দেবাংশুর সাফ কথা, “শতরূপ ঘোষই হোক বা দিলীপ ঘোষ, দলের হয়ে চিৎকার করার জন্য আরও দুটো গলা বাড়লে মন্দ হবে না।” আর শতরূপ মোহনবাগান ফ্যান হলে…? রসিকতা করে দেবাংশুর উত্তর, “ডার্বিতেও খেলা হবে। নির্বাচনে তো জেতা হয় না, তাই আমার দলের জেতার স্বাদ ভাগ করে নেব।” দেবাংশু প্রসঙ্গ তুললেও মোহনবাগান সমর্থক শতরূপ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
সৃজন বরাবরই ‘লাল হলুদ’। ব্রাজিল ভক্ত। ইস্টবেঙ্গল অন্তপ্রাণ। ছাত্র জাঠার কারণে এ বার যুবভারতীতে আসতে পারবেন না, তবে মন পড়ে থাকবে মাঠেই। দীর্ঘদিন পর কলকাতায় ডার্বি, সৃজন স্বাভাবিক ভাবেই উত্তেজিত। তিনি আরও উত্তেজিত দেবাংশুর মতো ইস্টবেঙ্গল ফ্যানকে পেয়ে। ডার্বির দিন একই স্টেডিয়ামে পাশাপাশি দেবাংশু আর সৃজন, পরবর্তী সংলাপটা কী হতে পারে? ‘ঠোঁটকাটা’ সৃজনের উত্তর, “দেবাংশুকে মাঠটা দেখিয়ে বলব, এটাই আসল খেলা। ভোটের দিন তৃণমূল যেটা করে ওটা অত্যাচার।” সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেননি দীপ্সিতাও। তাঁর সূক্ষ্ম শ্লেষ, “দেবাংশুকে বলব খেলায় মন দাও। মাঠে গিয়ে ববি হাকিমের মতো জার্সি চুরি করো না যেন।”
‘খেলা হবে’ স্লোগানের ভারতীয় স্রষ্টা কিন্তু বলছেন, “স্টেডিয়ামে এক দলের হয়ে গলা ফাটিয়ে বাইরে এসে চাউমিন, রোল খাব। রাজনীতিতেও এটাই চেয়েছিলাম। নির্বাচনের সময়ই একমাত্র যে যার দলের হয়ে খেলবে। সে জন্যেই তো স্লোগান দিয়েছিলাম, বন্ধু এ বার খেলা হবে।” সতীর্থের মতো সুদীপ রাহাও বলছেন, “খেলার মাঠটা রঙিন। এখানে সব রাজনৈতিক দল এক হয়ে যায়। রাজনীতির ময়দানে যেমন গোল দিয়েছি, মোহনবাগান ফ্যান হিসেবে বলব খেলার মাঠেও চাইব ইস্টবেঙ্গলকে গোল দিতে।”