কলকাতা: গড়িয়াহাট জোড়া খুন কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ভিকি এখনও অধরা। পুলিশের জালে ধরা পড়েনি তার সঙ্গীরাও। তবে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, তাঁরা একসঙ্গে নেই। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে আলাদা হয়ে পালাচ্ছে।
দাগী অপরাধীর মতোই ঘন ঘন ডেরা বদল করছে ভিকি। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে কোনও আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুদের বাড়িতে থাকছে না। পুলিশ জানাচ্ছে, এক্কেবারে সুকৌশলে পদক্ষেপ ফেলছে ভিকি। কোনও স্বাক্ষ্য বহন করছে না সে।
বুধবার মিঠু গ্রেফতারের পর থেকে ভিকি ও তার সঙ্গীদের ফোন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ফোনও ট্র্যাক করতে পারছেন না তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার জেরায় মিঠু দাবি করে, খুনের কোনও পরিকল্পনা ছিল না ভিকির। খুন করার পর কাকুলিয়া রোডের বাড়ি থেকে ফোন করে তার মাকে বলে, ‘মেরে ফেলেছি।’
মিঠু তদন্তকারীদের জানিয়েছে, ভিকি যখন ফোন করেছিল তখন বৃষ্টি পড়ছিল। বৃষ্টি বাড়তেই রাস্তা খালি হয়ে যায়। তখনই ভিকিদের বাড়ি থেকে বের হতে বলে মিঠু।
রবিবার গড়িয়াহাট থানা এলাকার ৭৮ এ কাঁকুলিয়া রোডের একটি তিনতলা বাড়ি থেকে সুবীর চাকি ও তাঁর গাড়ির চালক রবীন মণ্ডলের রক্তাক্ত, ক্ষত বিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে নেমে প্রথম দিকে ধোঁয়াশা থাকলেও ধীরে ধীরে এবার বোধহয় কিছু সূত্র হাতে আসছে তদন্তকারীদের। মঙ্গলবার সকালে লালবাজারের হোমিসাইড শাখার তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। থ্রিডি স্ক্যানারে ঘটনার পুনর্নির্মাণের মধ্যে দিয়েই একাধিক আততায়ীর উপস্থিতির বিষয়ে এক প্রকার নিশ্চিত হন তদন্তকারীরা। অন্যদিকে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এ কথাও স্পষ্ট হয়, এই ঘটনায় বাড়ি কেনাবেচার একটা যোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার পুলিশ কুকুর নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে বালিগঞ্জ স্টেশন অবধি চলে যায় ওই কুকুর। ১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঘোরাঘুরি করে সে। এরপরই তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন এই ঘটনায় ট্রেনের কোনও যোগ রয়েছে। সুবীর চাকির মোবাইল ফোনের কল ডিটেইল সংগ্রহ করে পুলিশ। এলাকার জমির দালালদের তালিকাও তৈরি করে তারা। এর মধ্যে একটি এমন নম্বর ছিল রবিবার যে নম্বরটি কাঁকুলিয়া রোড এলাকাতেই ছিল। পুলিশ জানতে পারে ভুয়ো নথি দিয়ে ওই সিমকার্ড তোলা হয়।
মিঠু হালদার ও তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। দুই ছেলের সঙ্গে ছক করে নিজের স্বামীর কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল মিঠু। ভিকি ও বিলাসকে নিয়ে স্বামীকে মাদক খাইয়ে ৮০ হাজার টাকা হাতানোর অভিযোগ রয়েছে মিঠুর বিরুদ্ধে। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর ডায়মন্ড হারবারে বিধবা পরিচয়ে ভাড়া থাকত মিঠু। পুলিশের দাবি, খুনের পর বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে ছেলে ভিকির রক্তমাখা জামা নিয়ে ডায়মন্ড হারবারের বাড়িতে ফিরে যায়। প্রমাণ লোপাটে সে জামা ধুতে গেলে সন্দেহ হয় বাড়ির মালিকের। এরপরই ধীরে ধীরে পর্দা ফাঁস হতে শুরু করে।