কলকাতা: রাজ্যে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কি? এই প্রশ্নের উত্তরে আবারও জল্পনা জিইয়ে রাখলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায় (Mukul Roy)। বললেন, “আমি তো মনে করি রাজ্যের বর্তমান যা পরিস্থিতি, তাতে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের প্রয়োজন করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এটাও বলে রাখি, এটা আমার ব্যক্তিগত মত। দলের মত নয়।”
একই কথা বলেছেন দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও। তিনিও রাজ্যে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের পক্ষে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই দাবি অনেক আগেই তুলেছেন।
বাংলা নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কী ভাবছেন, তার কিছুটা আঁচ পাওয়া গিয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কথায়। ডায়মন্ডহারবারে সভায় যাওয়ার পথে তাঁর কনভয়ে ‘হামলা’-র পর ফিরে এসে নিউটাউনে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন নাড্ডা। তাতে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “বিজেপি প্রজাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়াই করবে। গণতান্ত্রিক পথেই জয় আসবে আমাদের। তৃণমূলকে উত্তর দেবে মানুষই।” তাৎপর্যপূর্ণভাবে, বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মমতা সরকারকে তিনি কাঠগড়ায় তুলেছেন ঠিকই, তবে ৩৫৬ প্রয়োগ বা রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেননি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহও একাধিকবার রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে গত কলকাতা সফরেও যখন তাঁর কাছে ৩৫৬ প্রয়োগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তখন রাজ্যের পরিস্থিতি খানিকটা সেরকমই তিনি বলেছিলেন বটে। কিন্তু, এখনই ৩৫৬ জারি করা উচিত, এই ধরনের কোনও মন্তব্য বা ভাবনার কথা জানাননি শাহ। তিনিও গণতান্ত্রিক উপায়েই বাংলা জয়ের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, অনেকে হয়তো আবেগের বশে রাষ্ট্রপতি শাসনের কথা বলছেন, তবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই বাংলার শাসকদলকে ক্ষমাতে থেকে সরাতে চান তাঁরা।
উল্টোদিকে হালিশহরে দলীয় কর্মী খুনের পর বাংলায় ৩৫৬ ধারা জারি করার ব্যাপারে আরও বেশি জোরালো দাবি তুলছেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। মুকুল রায়ের দাবি, “বাংলায় অস্বাভাবিকতাই এখন স্বাভাবিক! কোনও কিছুই নিয়মে নেই। এই রকম আর কোথাও নেই।”
এখানেই রাজনৈতিক মহলের একাংশের প্রশ্ন, বিজেপি নেতৃত্ব আসলে কী চান সেটা এখনও কেন ধোঁয়াশায় রাখা হচ্ছে? এই ধোঁয়াশা কি কিছুটা ইচ্ছাকৃত সৃষ্টি করা হচ্ছে না? এমন প্রশ্নও উঠছে ইতিউতি।
যদিও বিজেপির এই দাবিকে বিশেষ আমল দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল নেতা সৌগত রায় বলেন, “৩৫৬ ধারা নিয়ে বিজেপির অন্দরেই বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। মুকুল রায় ব্যক্তিগতভাবে কী বলছেন তাতে কিছু এসে যায় না।”
উল্লেখ্য, নাড্ডার কনভয়ে ‘হামলা’ পর বাংলায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শাহ। ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর রাজ্যে থাকবেন। অবশ্য এর মাঝে হালিশহরের ঘটনাও বঙ্গ রাজনীতি উত্তপ্ত করেছে। শাহর এই সফর বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।