মমতার পাশে থাকার বার্তা দুই যুযুধানের, বিমল সিলেবাসের বাইরে, কটাক্ষ বিনয়ের

দুই সভার সময়ও কার্যত এক, মমতাকে সামনে রেখে বার্তাও এক, তবে প্রান্ত ভিন্ন আর শক্তি প্রদর্শনের কায়দাও।

মমতার পাশে থাকার বার্তা দুই যুযুধানের, বিমল সিলেবাসের বাইরে, কটাক্ষ বিনয়ের
শক্তি প্রদর্শনে দু'প্রান্তে গুরুং-তামাং, মমতার পাশে থাকার বার্তাই দিল মোর্চার দুই শিবির
Follow Us:
| Updated on: Dec 13, 2020 | 7:15 PM

আলিপুরদুয়ার: মাঝে ব্যবধান সাড়ে তিন বছর। ফের ডুয়ার্সের বীরপাড়ায় বিমল গুরুং (Bimal Gurung)। এর এদিকে সরাসরি শক্তি প্রদর্শনে সুকনায় ছিলেন বিনয় তামাং। বিনয়-বিমল সভায় আজ গরম থাকল উত্তরবঙ্গের হাওয়া। দুই সভার সময়ও কার্যত এক, মমতাকে সামনে রেখে বার্তাও এক, তবে প্রান্ত ভিন্ন আর শক্তি প্রদর্শনের কায়দাও।

রবিবার বীরপাড়ার প্রগতি ময়দানে গুরুংয়ের এই দফায় ডুয়ার্সে প্রথম জনসভা। সকাল থেকেই জনসভায় অত্যুত্সাহী কর্মী সমর্থকদের ভিড়। সকাল থেকেই গুরুংয়ের সভায় ভিড় বাড়াতে মরিয়া ছিলেন মোর্চা কর্মী সমর্থকরা। বেলা দুটো নাগাদ মঞ্চে উপস্থিত হন গুরুং। তাঁকে ঘিরে কর্মী সমর্থকদের উচ্ছ্বাস তখন চোখে পড়ার মত।

বেশ কিছুক্ষণ পর বক্তৃতা রাখেন গুরুং। তবে গুরুংয়ের বার্তা শুনতে তাঁর পন্থীদের আগ্রহ ধরা পড়ছিল চোখেমুখেই। করতালি ও স্থানীয় ভাষার স্লোগানে তখন এলাকা মুখরিত। শিলিগুড়ির সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতানোর বার্তা দিয়েছিলেন বিমল গুরং। ফলে এদিনের তাঁর বক্তৃতার পাঞ্চ লাইন কীহবে, তা আগেই পরিষ্কার ছিল অনুগামীদের কাছে। রাজনৈতিক মহলের স্পষ্ট ব্যাখ্যা, উপত্যকা, তরাই দিয়ে পাহাড়ে ঢোকার পথ প্রশস্ত করছেন গুরুং। গুরুংকে মাঝে পাহাড় ছাড়তে হওয়ায় মোর্চা কর্মী সমর্থকদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছিল বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের একাংশের।

“বক্তৃতার শুরুতেই সকলকে ধন্যবাদ জানান গুরুং। বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বললেন, “কেন্দ্রের সরকার ধোঁকাবাজ, দাঙ্গাবাজ। ১২ বছর প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য কিছু করেননি। ধোঁকা দিয়েছেন। মোর্চাদের বঞ্চনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অনেক কিছু বলেছেন, কিন্তু কিছু করেন নি।” এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতানোর বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে টেস্ট করেছি। মমতা যা বলেন, তাই করেন। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাপোর্ট করছি।” ডুয়ার্সবাসীর কাছে আবেদন করেন, “বিজেপিকে একটিও ভোট নয়।” সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, “আগামী ২০২১এ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিমল মমতাকেই দেখতে চান।”

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে গুরংয়ের সমর্থন নিয়ে মাদারিহাট আসনটি জেতে বিজেপি। যদিও প্রত্যাবর্তনের পর গত রবিবার গুরুং শিলিগুড়ির সভা থেকে মমতাকে জেতানোর বার্তা দিয়েছেন। ফলে এবারের নির্বাচনে গুরুংয়ের কভূমিকা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। গেরুয়া শিবিরের ভিত আলগা করতে মাদারিহাট বিধাসভা কেন্দ্রের বীরপাড়াকেই বিমল গুরুং বেছে নিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক ওয়াকিবহল মহল।

একদিকে যখন বিমল এই বার্তা দিচ্ছেন. তখন অপরদিকেও ‘শক্তি-সভায়’ যুযুধান প্রতিপক্ষ বিনয় তামাং। সুকনায় ফুটবল মাঠে তখন হাওয়া গরম করছেন বিনয় তামাং, অনীত থাপারা। এপক্ষ অবশ্য আগেই দাবি করেছে, “কারও ব্যক্তিগত মোর্চা নয়, মানুষের মোর্চার সভা এটা।” কিন্তু এদিনের সভার ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মত। থিকথিক করছিল মাথা। সুকনার মাঠের চিত্রটাই যেন কার্যত ব্যাখ্যা করছে তামাংপন্থীরা গুরুংকে একটুও বেশি ‘মাইলেজ’ দিতে নারাজ। মঞ্চ থেকেই বিনয় গুরুং উদ্দেশে বললেন একটিই বাক্য। বললেন, “সিলেবাসে গুরুং নেই।” তাঁর মুখেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকার বার্তা। বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের প্রতি যে অবিচার হয়েছে তার সুরাহা করবেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছি। ” কেন্দ্রের কাছে তাঁর আবেদন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের আটটি রাজ্যের সঙ্গে এবার উত্তরবঙ্গকেও অন্তর্ভূক্ত করা হোক। খতিয়ে দেখা হোক ভারত-নেপাল মৈত্রী চুক্তিও৷

মমতার পাশে থাকার বার্তা দিল মোর্চার দুই শিবিরই। তবে পাহাড়ের রাজনীতিতে বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য এই ফ্যাক্টরকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের দাবি, আগামীদিনে ডুয়ার্সের মানুষ সম্মিলিতভাবেই ভোটবাক্সে তৃণমূলকে যোগ্য জবাব দেবে। মোর্চার দুই শিবির প্রসঙ্গে বিজেপিনেতা মুকুল রায় বলেন, “পাহাড়ের এই দুটি শক্তি এক জায়গায় যেতে পারবে না কখনই। ” সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফর প্রসঙ্গে বললেন, “ওঁ তো চেষ্টা করবেই দুটো শিবিরকে একসঙ্গে বসিয়ে খাওয়া দাওয়া করিয়ে, মহাভোজ করিয়ে এক জায়গায় আনানোর।”

আরও পড়ুন:  তৃণমূল বহিষ্কার করেছে শুনেই মিষ্টিমুখ করালেন কণিষ্ক, বললেন ‘খুব শান্তি পেলাম’

উল্লেখ্য সোমবারই পাহাড়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, হারানো জমি ফিরে পেতেই এবার মরিয়া লড়াইয়ে নেমেছে তৃণমূল।