কলকাতা: রাত পোহালেই লালবাড়ি দখলের লড়াই। এবারের পুরসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী লড়ছেন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ১৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এখানে। আর সবচেয়ে কম তিন জনের লড়াই হচ্ছে বেহালার ১৪২ নম্বর ওয়ার্ডে।
এবার কলকাতা পুরভোটে মোট প্রার্থী ৯৫০ জন। সবচেয়ে বেশি প্রার্থী নির্দল। ৩৭৮ জন। দলগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী তৃণমূলের। ১৪৪টি আসনের প্রত্যেকটিতেই প্রার্থী দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। বিজেপি-র প্রার্থী ১৪২ জন।
বামেরা লড়ছে ১২৮ আসনে। কিন্তু তাদের প্রার্থীর সংখ্যা ১২৯। গোলমেলে লাগছে? না, সোজা হিসেব। ১০৬ নম্বরে গোলমাল শরিকে শরিকে। ফলে সিপিএম আর আরএসপি দু’দলই হাত ধরাধরি ছেড়ে মুখোমুখি লড়াইয়ে। কংগ্রেসের প্রার্থী ১২১ জন। কলকাতা পুরভোটে অন্যান্য দলের প্রার্থী রয়েছেন ৩৬ জন।
এবারের নির্বাচনে প্রত্যেক বুথে থাকছে সিসিটিভি। একাধিকবার পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠক হয়েছে। পুরভোটে বাহিনীর কোনও প্রয়োজন নেই বলে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুথে থাকছেন এক জন সশস্ত্র পুলিশ।
শুক্রবার পুরসভা নির্বাচনে পুলিশি প্রস্তুতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন স্বয়ং পুলিশ কমিশনার। কলকাতার শহরে যতগুলি ডিসি অফিস আছে প্রত্যেকটিতে তিনি নিজে উপস্থিত হন। পুলিশ প্রশাসন কতটা প্রস্তুত এবং নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ হয় তা খতিয়ে দেখেন পুলিশ কমিশনার।
পুরভোটের আগের বেশ কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। তবে আগের দিনই কলকাতায় বোমাবাজির অভিযোগ উঠল। প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন নির্দল প্রার্থী তনিমা চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, গতকাল রাতে বালিগঞ্জ প্লেসের অভিজাত এলাকায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পরপর ২টি বোমা ছোড়ে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়ের দাবি, নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে বোমা ছুড়েছে। এছাড়াও গত কয়েকদিনে একাধিক ওয়ার্ডে ফ্লেক্স, ব্যানার ছেঁড়ার অভিযোগ উঠেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাম প্রার্থীদের ফ্লেক্স, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেক্ষেত্রেও কাঠগড়ায় তৃণমূলই।
তবে তৃণমূল সেই অভিযোগও অস্বীকার করেছে। প্রসঙ্গত, শুক্রবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ড।
কলকাতার পুরসভার ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে এবারের তৃণমূল প্রার্থী আক্তারি শাহাজাদা। আর নির্দল প্রার্থী তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন এমআইসি শামসুজ্জামান আনসারির পুত্রবধূ রবিনা নাজ। এবারে তৃণমূলের তরফে টিকিট না পেয়ে তিনি নির্দলের হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অভিযোগ, টিকিট না পেয়েই আক্রোশ আক্তারি শাহাজাদা ও তাঁর ছেলেদের ওপর।
বৃহস্পতিবার পাহাড়পুর রোডে স্ট্রিট কর্নার করছিলেন আক্তারি শাহাজাদা। পাশেই ছিলেন তাঁর দুই ছেলে। অভিযোগ, সে সময় আচমকাই তাঁদেরকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন কয়েকজন যুবক। তিনটে বড় ইটের টুকরো স্টেজ লক্ষ্য করে ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রার্থীর দুই ছেলেও। ইট পড়ায় মাকে সেখান থেকে আগে সরিয়ে নিয়ে যান ছেলেরা।
অভিযোগ, টিকিট না পাওয়ায় শামসুজ্জামান আনসারির ছেলেরাই তাঁদের সভা লক্ষ্য করে ইট ছুড়েছে। আরও অভিযোগ, ভোটের দিন এলাকাবাসীকে ভোটদানে বাধাও দেবেন আনসারির লোকজন। ইতিমধ্যেই গার্ডেনরিচ থানা ও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন প্রার্থীর পরিবারের লোকজন।
তৃণমূল প্রার্থীর আরও অভিযোগ, শামসুজ্জামান আনসারি ১৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী। এখানে নিজের বউমাকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর ছেলে এখানকারই ওয়ার্ড প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তৃণমূল প্রার্থীর ছেলের অভিযোগ, “শামসুজ্জামান আনসারি এসব করে নিজেই প্রমাণ করেছেন, যে নির্বাচন তাঁরা হেরে গিয়েছেন। আমাদের কর্মীদের প্রকাশ্যেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এলাকায় সন্ত্রাস তৈরি করছেন ওঁরা। মেটিয়াবুরুজকে আমরা উন্নয়নের রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “শামসুজ্জামান আনসারির রাজনৈতিক কেরিয়ার সবাই জানে। আগে সিপিএম করতেন। তারপর নির্দল হয়ে দাঁড়ান। পরে তৃণমূলে আসেন। ফের কংগ্রেস ঘুরে তৃণমূলে আসেন। ফলে তাঁর ব্যাকগ্রাউন্ড সবাই জানে।”
তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের চিত্রটা প্রকাশ্যে আসে। এদিকে, ঘটনার পর এলাকায় বোমাবাজি হয় বলেও অভিযোগ।
আরও পড়ুন: কলকাতার বাতাসে ‘বিষ’, তার দায়ও মুখ্যমন্ত্রীর ঘাড়েই ঠেললেন শুভেন্দু!