Kolkata Municipal Corporation: বাড়ি বাড়ি মিটারেই সাফল্য, জল অপচয় রুখে বাঁচতে চলেছে ২০০ কোটিরও বেশি

Sayanta Bhattacharya | Edited By: জয়দীপ দাস

Nov 10, 2023 | 9:12 PM

Kolkata Municipal Corporation: রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলিতে সব মিলিয়ে প্রায় ৫২ শতাংশ বেশি জল অপচয় করা বন্ধ করা গিয়েছে এই মিটার বসানোর জন্য। অর্থাৎ মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় ওই ওয়ার্ড গুলিতে অনেকটাই বেশি জল ব্যবহার করছিলেন।

Kolkata Municipal Corporation: বাড়ি বাড়ি মিটারেই সাফল্য, জল অপচয় রুখে বাঁচতে চলেছে ২০০ কোটিরও বেশি
প্রতীকী ছবি
Image Credit source: Facebook

Follow Us

কলকাতা: ১ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি মিটার বসিয়ে অবশেষে মিলল সাফল্য। প্রায় ৫২ শতাংশ জল অপচয় রুখে দেওয়া গিয়েছে। মেয়রের কাছে রিপোর্ট পেশ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের। জল অপচয়ের কারণে কলকাতা ‘কুখ্যাতি’ রয়েছে দীর্ঘদিন থেকেই। কিন্তু, অপচয় কোন অংশে বেশি হচ্ছে, তা খুঁজে বের করা রীতিমত কষ্টসাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু কতটা অপচয় হচ্ছে, সেটা দেখার জন্য পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের টাকায় কেইআইপি প্রথম দফার কাজের অঙ্গ হিসেবে ২০১৭ সালে কলকাতা পুরসভার ১ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ১৮,৬৫৫ টি বাড়িতে জলের মিটার বসানো হয়েছিল। অবশেষে সেই মিটার বসানোর প্রায় পাঁচ বছর পর অপচয় সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক জমা দিল কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে। 

সূত্রের খবর সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলিতে সব মিলিয়ে প্রায় ৫২ শতাংশ বেশি জল অপচয় করা বন্ধ করা গিয়েছে এই মিটার বসানোর জন্য। অর্থাৎ মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় ওই ওয়ার্ড গুলিতে অনেকটাই বেশি জল ব্যবহার করছিলেন। মিটার বসানোর জেরে সেই অপচয় বন্ধ করা সম্ভবপর হয়েছে। কলকাতা পৌরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, এই মিটার সংক্রান্ত রিপোর্ট আমাদের যথেষ্টই উজ্জীবিত করেছে। অপচয় যে রোখা সম্ভব হয়েছে তা আমি কখনওই বলব না। এখনও কলকাতার মানুষ জল অপচয় সংক্রান্ত বিষয়ে উদাসীন। তাই মিটার বসানোর জেরে সেই বাড়িগুলির জল অপচয় সংক্রান্ত তথ্য এবং হিসাব সঠিকভাবে এসেছে। 

সূত্রের খবর, এই রিপোর্ট আসার পর কলকাতা পুরসভার মেয়র সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আগামী দিন কলকাতার সবক’টি বাড়িতেই এই মিটার বসানো হবে। একটি ভিজিল্যান্স টিম তৈরি করা হচ্ছে জল সরবরাহ বিভাগের অধীনে। বোরো ভিত্তিক সেই টিম ঘুরবে এবং কোথায় কোথায় জল অপচয় হচ্ছে এবং কোন কোন বাড়িগুলিতে তা সব থেকে বেশি তা চিহ্নিত করে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মেয়রের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সেইমতো সংশ্লিষ্ট এলাকা বা বাড়িগুলিকে চিহ্নিত করে অধিক গুরুত্ব দিয়ে সেখানে মিটার বসানো হবে। তাতেই একমাত্র জল কিছুটা হলেও অপচয় করা প্রখা সম্ভব বলে মনে করছেন কলকাতার মেয়র অর্থাৎ রাজ্যের মন্ত্রী।

কেন্দ্রীয় পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের শহরাঞ্চলে মাথাপিছু দৈনিক ১৫০ লিটার পরিশোধিত জল পর্যাপ্ত হিসাবে ধরা হয়। সেখানে ‘সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড’-এর তথ্য বলছে, কলকাতার নাগরিক মাথাপিছু দৈনিক ২০২ লিটার জল পান! বর্তমানে কলকাতা পুরসভার স’বকটি জল প্রকল্প মিলিয়ে মোট ৫১৫ মিলিয়ন গ্যালন পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। যে কারণে কলকাতা পুরসভার প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। মিটার বসিয়ে অপচয় বন্ধ করতে সক্ষম হলে সেই খরচ ৩০-৩৫ শতাংশ কমে যাবে বলে মেয়র মনে করছেন। একইসঙ্গে কলকাতার যে অংশগুলিতে এখনও পর্যন্ত জল সরবরাহ করা সম্ভবপর হচ্ছে না, জল অপচয় বন্ধ করা সম্ভব হলে সেখানেও জল সরবরাহ বাড়ানো যাবে। জলের ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক ইতিমধ্যেই শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকায় সম্পূর্ণ করা গিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। বাকি কাজ আগামী দু’-তিন বছরের সম্ভবপর হবে বলেই মনে করছেন পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের আধিকারিকরা। 

কিন্তু এই জল অপচয় বন্ধ বা কমানো গেল কিভাবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। যে বিষয়ে পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগ সূত্রে খবর, এলাকায় টানা নজরদারি, জল অপচয় বন্ধ না করলে প্রয়োজনীয় কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি এবং এলাকায় এলাকায় শিবির তৈরি করা, এই ধরনের একাধিক কর্মকাণ্ডের জেরেই কাশীপুর-বেলগাছিয়া বিধানসভার অন্তর্গত ওই ছ’টি ওয়ার্ড সাফল্য মিলেছে বলে মনে করছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। আর সেকারণেই ইতিমধ্যেই যাদবপুর এলাকার বিভিন্ন অংশে ইতিমধ্যেই এই মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। 

উত্তর কলকাতায় তেমন উল্লেখযোগ্য ভাবে জলকষ্ট না থাকলেও দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন অংশের বাসিন্দারা গরম এলেই চোখে সর্ষে ফুল দেখেন। চড়া হারে জল কিনে খেতে হয়। পুরসভা জলের গাড়ি পাঠিয়েও সামাল দিয়ে উঠতে পারেনা। তাই মিটার বসিয়ে জলের অপচয় রুখে সেই সব এলাকাতে জল পাঠাতে চাইছেন মেয়র।

সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে কলকাতা পুরসভার গভীর নলকূপের সংখ্যা ছিল ২৩২ এবং হাতপাম্প-যুক্ত অগভীর নলকূপ ছিল ৫০০০। উভয় নলকূপের মাধ্যমে মাটির নীচ থেকে তোলা জলের পরিমাণ ছিল দৈনিক ১২১.৫ মিলিয়ন লিটার। ২০০৬ সালে সেই সংখ্যা কমলেও শহর থেকে এখনও পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি নলকূপ। ২০২০ সালে এই পরিমাণ ভয়ঙ্কর আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে খোদ রিপোর্ট এই উল্লেখ করা হয়েছে। ভূগর্ভস্থ সেই জল বাঁচানোর লক্ষ্যে এই মিটার অনেক বেশি কার্যকরী হবে বলেই মনে করছেন জল সরবরাহ বিভাগের আধিকারিকরা।

 

Next Article