কলকাতা: প্রিজ়ন ভ্যান। বরাবরই যেন কথা বলার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। অথবা বলা যায় প্রতিবাদের মঞ্চ। অতীতে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ প্রিজ়ন ভ্যানে ওঠার সময় চিৎকার করে নিজের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। অভিযোগ করেছিলেন সেই সময় প্রিজ়ন ভ্যান চাপড়ে পুলিশ তাঁর কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে। সেই সময় তৃণমূল নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘…একজনকে কথা বলতে দেবেন। বাকিদের ক্ষেত্রে এগুলো কেন করতে দেবেন না?’ এবারও যেন সেই একই ঘটনার পুরনরাবৃত্তি। তিলোত্তমার ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারও কুণালের মতোই অভিযোগ করেছে, তাকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই বারেবার নিজের মতামত প্রকাশের মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছে ‘প্রিজ়ন ভ্যান’। শুধু তাই নয়, প্রকাশ্যে নাম বলেছেন প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের। অর্থাৎ একজন সিভিকের মুখে উঠে এসেছে আইপিএস-দের নাম। কখনও ‘সরকার ফাঁসাচ্ছ’ বলে চিৎকার, কখনো সাংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ্যেই ‘বিনীত গোয়েল ফাঁসাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন! সেই কারণে অস্বস্তিতে কি লালবাজার? এবার তাই অভিযুক্তের ‘মুখবন্ধে’ সক্রিয় কলকাতা পুলিশের সদর দফতর।
মঙ্গলবার বিচারের দ্বিতীয় দিন লোহার জাল দেওয়া কালো কাচ-সহ এসি গাড়িতে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়ে আসা হয়েছে শিয়ালদহ আদালতে। এই গাড়িতেই তাকে আদালত থেকে জেলে নিয়ে যাওয়া হবে। গাড়ির বৈশিষ্ট্য কী? কালো কাচে ঢাকা থাকবে গাড়িটি। যার ফলে অভিযুক্তের মুখ যেমন দেখা যাবে না। তাকে গাড়িতে তোলার পরই তুলে দেওয়া হবে কাচ। যার ফলে সিভিক আর গাড়ির মধ্যে থেকে মুখ বাড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে পারবে না। ফলে ‘মান’ বাঁচবে পুলিশের। সূত্রের খবর, লালবাজার থেকে এই গাড়ি পাঠানো হয়েছে জেলে। সেই গাড়িতে করেই তাকে নিয়ে আসা হয়েছে আদালতে।
উল্লেখ্য, তিলোত্তমার ঘটনায় চার্জশিটে অভিযুক্ত সিভিকের নাম একা উল্লেখ থাকার পর থেকেই বারেবারে মুখ খুলেছে সে। কখনও ভরা এজলাসে বলেছেন, তাকে বলতে দেওয়া হচ্ছে না। কখনও আবার ফাঁসানো হচ্ছে বলেও দাবি করেছে প্রিজন ভ্যান থেকে। অর্থাৎ নিজের যুক্তি তুলে ধরার মাধ্যম হিসাবে সে বেছে নিয়েছে প্রিজ়ন ভ্যান। সোমবার অর্থাৎ বিচার প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম দিন ধৃতের মুখে শোনা গিয়েছে প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার এবং ডিসি পদমর্যাদার অফিসারের নামও। প্রিজ়ন ভ্যানে উঠতে উঠতেই তা সে বলেছে। অভিযোগ করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে ফাঁসিয়েছে। যার জেরে বিড়ম্বনায় বেড়েছে বলে মনে করছে লালবাজারের একাংশ।