কলকাতা: একুশের বিধানসভা ভোটের পর চারমাস কেটে গেলে ও কেন উপনির্বাচন ঘোষণা করছে না, এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছে তৃণমূল (TMC)। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) মুখে শোনা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যেন উপনির্বাচনটা ‘ক্লিয়ার’ করে দেন। যশবন্ত সিনহারা অভিযোগ করেছেন, মমতা যাতে মুখ্যমন্ত্রী থাকতে না পারেন তাই উপনির্বাচন নিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে গড়িমসি করছে কমিশন। আর শনিবার কমিশনের বিরুদ্ধে সেই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ একই রইল, শুধু বদলে গেল অভিযোগকারীর মুখ। এবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করলেন কমিশন পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছে!
শনিবার কলকাতার ভবানীপুর এবং মুর্শিদাবাদের দুই কেন্দ্রে উপনির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর বিজেপি (BJP)-ও আঙুল তুলেছে কমিশনের দিকে। নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণা তামাশা বই আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য (Shamik Bhattacharya)। তবে দিলীপ ঘোষ যখন জোর দিয়ে বলছেন, ‘কমিশন অবশ্যই প্রভাবিত হয়েছে, আমরা জানতে চাইব কেন এটা হয়েছে।’ তখন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে যাচ্ছে না কেন্দ্রীয় বিজেপি, সূত্রের খবর এমনটাই।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, উপ নির্বাচনের আগে যাতে পুরভোট সম্পন্ন হয় সেই চেষ্টা তাঁরা করেছিলেন। কিন্তু বিজেপি নেতাদের কথায়, তাঁরা অনুমান করেছিলেন যে এমন সিদ্ধান্ত নিতেও পারে কমিশন। তবে কেন্দ্রীয় বিজেপি ঠিক করেছে, কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা তারা করবে না। এমনটাই জানালেন বিজেপির এক শীর্ষ নেতা। একই সঙ্গে তাঁর টিপ্পনী, ‘তবে এতে কমিশনের অপবাদ ঘুচল। আর তৃণমূল কমিশনকে কেন্দ্রের এজেন্ট বলতে পারবে না।’ শুধু এ কারণেই তাঁরা কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন না?
সূত্রের খবর, পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন পর্ব শেষ হওয়ার আগেই মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছিলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী একমাত্র নির্বাচন কমিশন। আপনাদের অফিসারদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হওয়া উচিত।’ এই ধরনের বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় তাদের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হয়েছে বলে মনে করে কমিশন। তাই এই ধরনের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রিক মন্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য পিটিশন-ও দাখিল করেছিলতারা। কিন্তু সেই আবেদনে সাড়া না দিয়ে সংবদমাধ্যমে কী খবর প্রকাশিত হচ্ছে, সেদিকে নজর না দিয়ে নিজেদের কাজ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
এই প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচন নিয়ে কোনও ব্যক্তি বা কোনও রাজনৈতিক দল আদালতে গেলে কমিশন সমস্যায় পড়তে পারে। এই সব যুক্তি নাকি সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের আলোচনায় উঠে আসে। একইসঙ্গে, কমিশনের সঙ্গে বিজেপির ‘যোগাযোগ’ রয়েছে, এ অভিযোগও বিভিন্ন সময়ে করেছে দেশের বিভিন্ন অবিজেপি দলগুলি। সেই অভিযোগ থেকে কমিশন অনেকাংশে মুক্ত হতেই ভবানীপুরের নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হল, এমনটাই সূত্রের খবর। কমিশন যে স্বতন্ত্রভাবেই চলে, তা-ও প্রমাণ করা গেল এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বলেও মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। আরও পড়ুন: কেন ভবানীপুরেই আগে নির্বাচন ঘোষণা করল কমিশন?