কেন ভবানীপুরেই আগে নির্বাচন ঘোষণা করল কমিশন?

Election Commission: শুধু ভবানীপুর কেন, কেন অন্য কেন্দ্রগুলিতেও উপনির্বাচনের তারিখ একসঙ্গে ঘোষিত হল না, এ নিয়ে অভিযোগ করছেন দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীরা। এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, শান্তিপুর, দিনহাটা, খড়দহ ও গোসাবার নির্বাচন কবে? আর ভবানীপুরই বা আগে কেন?

কেন ভবানীপুরেই আগে নির্বাচন ঘোষণা করল কমিশন?
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 04, 2021 | 5:11 PM

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ: শনিবারই ঘোষণা হল ভবানীপুরের উপনির্বাচন (By Election)-এর তারিখ। সঙ্গে মুর্শিদাবাদে বাকি থাকা দুটি বিধানসভা কেন্দ্র সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরের নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হয়েছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব বঙ্গ বিজেপি। নির্বাচন কমিশন (Election Commission) পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি (BJP)। শুধু ভবানীপুর কেন, কেন অন্য কেন্দ্রগুলিতেও উপনির্বাচনের তারিখ একসঙ্গে ঘোষিত হল না, এ নিয়ে অভিযোগ করছেন দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীরা। এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, শান্তিপুর, দিনহাটা, খড়দহ ও গোসাবার নির্বাচন কবে? আর ভবানীপুরই বা আগে কেন?

ভবানীপুর-সহ এই তিন কেন্দ্রে ভোট হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। হিসেব মতো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নভেম্বরের মধ্যেই যে কোনও একটি কেন্দ্র থেকে জয়ী হতে হবে। তাই বারবার সেপ্টেম্বরেই ভোট করার দাবি জানিয়ে আসছিল তৃণমূল (TMC)। অবশেষে সেপ্টেম্বরের শেষেই ভোট হবে বলে জানাল কমিশন। কিন্তু বাকি বাংলার বাকি কেন্দ্রগুলিতে উপনির্বাচন কেন্দ্রগুলিতে ভোট কবে তা নিয়েই শুরু হয়েছে চর্চা। সূত্রের খবর, লক্ষ্মীপুজো আর কালীপুজোর মধ্যে এই ভোট শেষ করে ফেলা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।

একুশের ভোটের ফল বেরিয়েছে গত ২ মে। বিধানসভা ভোটের আসন শূন্য হওয়ার ছ’মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। আর সেই অনুসারে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্রে ৬ মাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০ নভেম্বর। কারণ, গত ২১ মে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। একইভাবে উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১ নভেম্বর। সেখানে ভোটের ফল প্রকাশের আগেই মৃত্যু হয়েছিল তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিনহার। ফল বেরতে দেখা যায় তিনি জিতেছেন। কিন্তু সেই কেন্দ্র ফেলে রেখে আগে ভবানীপুরই কেন?

রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, এর কারণ হল, ওই আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর তিনি ছ’মাসের মধ্যে জিতে না এলে একটা সাংবিধানিক জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বিরোধীদের আক্রমণ আরও জোরদার হতে পারে। আর পুরো বিষয়টি আদালতেও গড়াতে পারে। সূত্রের খবর, এ নিয়ে বিস্তর আলাপ আলোচনা হয়েছে কমিশনের অন্দরে। নানা কাটাছেঁড়া চলেছে। তারপরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আপাতত শুধু ভবানীপুরের উপনির্বাচন ঘোষণা হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের এক শীষ কর্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন বলে খবর। আর তাঁর সেই যুক্তি মেনে নেন বেশিরভাগ সদস্য। এমনকি, ওই কর্তা বিধানসভার ভোটের শেষ লগ্নে কমিশনের ভূমিকা আরও নিরপেক্ষ হওয়া এবং করোনাবিধি কঠোর করার জন্য কমিশনের অন্দরে দাবি তুলেছিলেন বলেই খবর।

উল্লেখ্য, পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন পর্ব শেষ হওয়ার আগেই মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী একমাত্র নির্বাচন কমিশন। আপনাদের অফিসারদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হওয়া উচিত।’ এই ধরনের বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় কমিশনের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হয়েছে। তাই এই ধরনের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রিক মন্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য পিটিশন-ও দাখিল করেছিল কমিশন। কিন্তু সেই আবেদনে সাড়া না দিয়ে সংবদমাধ্যমে কী খবর প্রকাশিত হচ্ছে, সেদিকে নজর না দিয়ে নিজেদের কাজ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।

তাই পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচন নিয়ে কোনও ব্যক্তি বা কোনও রাজনৈতিক দল আদালতে গেলে কমিশন সমস্যায় পড়তে পারে। এই সব যুক্তিও নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের আলোচনায় উঠে আসে। একইসঙ্গে, কমিশনের সঙ্গে বিজেপির ‘যোগাযোগ’ রয়েছে, এ অভিযোগও বিভিন্ন সময়ে করেছে দেশের বিভিন্ন অবিজেপি দলগুলি। সেই অভিযোগ থেকে কমিশন অনেকাংশে মুক্ত হতে পারল ভবানীপুরের নির্বাচন ঘোষণার মধ্য দিয়ে। কমিশন স্বতন্ত্রভাবেই চলে, তা-ও প্রমাণ করা গেল বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে নিহত তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে সিবিআই