কলকাতা: খেলা ঘোরাচ্ছে নৈহাটি। ‘কংগ্রেস আউট, সিপিআইএমএল ইন’, রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন কান পাতলেই কোথাও যেন এ কথা শোনা যাচ্ছে আলিমুদ্দিনের অন্দরে। এবারের উপনির্বাচনে নৈহাটিতে লড়ছেন বামফ্রন্ট সমর্থিত সিপিআইএমএল প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদার। একেবারে হাতে হাত রেখে চলছে লড়াই। একযোগে চলছে ঝান্ডা বাঁধা থেকে প্রচার। তাতেই বাংলার বাম রাজনীতিতে নতুন সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন বাংলার বামপন্থীরা। ছাব্বিশেও বৃহত্তর বাম জোটের ‘স্বপ্ন’ বোনার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। এদিকে এরইমধ্যে লিবারেশন হাতে হাত রাখতেই বামফ্রন্টের নাম বদল নিয়েও জোরদার চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। সত্যি কী তাহলে বদলে যাবে বামফ্রন্টের নাম? লিবারেশন কী পাকাপাকিভাবে জায়গা পাবে বামফ্রন্টের মধ্যে? এ নিয়েই টিভি-৯ বাংলা ডিজিটালের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ এডিটর নির্ণয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বললেন সিপিআইএমএল লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।
লিবারেশন সম্পাদকের সাফ কথা, “ঐক্য যখন গড়ে ওঠে তখন ঐক্যের পরিসর, ঐক্যের পরিস্থিতি, পরিপ্রেক্ষিত থেকে ঐক্যের নাম ঠিক হয়।” আর এ কথা বলতে গিয়ে বারবার তাঁকে ফিরে যেতে দেখা গেল রাজনীতিক সদ্য স্মৃতির পাতায়। তুললেন ইউপিএ থেকে ইন্ডিয়া জোটের প্রসঙ্গ। বলললেন, “কেন্দ্রে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইউপিএ সরকার ছিল। এবারে যে জোট হয়েছে সেটা ইন্ডিয়া জোট। এর মধ্যে ইউপিএ জোটের অনেক দল রয়েছে। আবার দল যাঁরা ইউপিএ তে ছিল না কিন্তু এর মধ্যে রয়েছে। যেমন আমরা। একইভাবে আগে আমরা আগে বামফ্রন্টে ছিলাম না।” নাম বদল নিয়ে সরাসরি উত্তর না দিয়ে খানিক সম্ভাবনা উস্কেই বললেন, “উপরের সবটা মনে রেখে একইভাবে যখন একটা বৃহত্তর ঐক্য হবে তখন সেই বৃহত্তর ঐক্যের একটা নতুন নাম হতে পারে। সোজা কথায় বৃহত্তর বামপন্থী ঐক্য দরকার। একটা সংগ্রামী, গতিশালী বামপন্থী ঐক্য দরকার।”
এখানেই না থেমে টানলেন বিহার থেকে জেএনইউ প্রসঙ্গ। বারেবারে বললেন এসএফআই-আইসার একযোগে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের প্রসঙ্গও। দীপঙ্করের কথায়, “আমাকে তো অনেকেই বলছেন বিহারে যদি এটা হতে পারে বাংলায় নয় কেন? হিন্দি বলয়ে লিবারেশন উঠে এসেছে। ছাত্র রাজনীতির আঙিনাতেও তো আমরা একসঙ্গে লড়ি। এবারে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে তো এসএফআই ও আইসার কমরেডরা একসঙ্গে লড়েছেন। জেনইউ-তে আমরা দীর্ঘদিন আলাদা লড়েছি আবার একসঙ্গেও লড়েছি। কৃষক ফ্রন্টেও একই অবস্থা। তাই বাংলা তো অতীতে আটকে নেই।”
অতীত নয়, বর্তমানের কথা বলছেন দীপঙ্কর
তবে রাজনৈতিক মতাদর্শের জায়গা, অতীত সংগ্রামের কথা ভুলে গিয়ে যে সবটা সম্ভব এমনটা মনে করছেন না লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক। তবে অতীতে আটকে না থেকে বারেবারে বললেন বর্তমানের কাঁধে হাত রেখে ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরির কথা। কিছুটা ‘আত্মসমালোচনা’, কিছুটা মতাদর্শের রেশ টেনেই বললেন, “হ্যাঁ মানছি অনেক প্রশ্ন আছে। নকশালবাড়ির আন্দোলন নিয়ে সিপিএমের কমরেডদের অনেক বক্তব্য থাকবে। তেমনই আমাদের বাম শাসনের পড়ে যাওয়া নিয়ে অনেক বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু ঐক্য যখন গড়ে ওঠে তা বর্তমানেই গড়ে ওঠে, ভবিষ্যতের লড়াইয়ের জন্য সেটা গড়ে ওঠে। অতীত সেখানে একটা ইতিহাস।”