কলকাতা: গত পাঁচ মাস আগে লোকাল ট্রেন পরিষেবা (Local Train Resume) বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোভিড (Covid 19) নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার (State Govt)। মাঝে স্টাফ স্পেশাল হিসেবে বেশ কিছু ট্রেন চালানো হলেও লোকাল ট্রেন পরিষেবা পুরোপুরি চালু করা হয়নি। গত কয়েক মাসে ট্রেনের সংখ্যা কম থাকলেও রুটি-রুজির টানে প্রতিনিয়ত বহু মানুষকেই ট্রেনে যাতায়াত করতে হয়েছে। তাই ট্রেনের সংখ্যা কম থাকায় চোখে পড়েছে বেশি ভিড়। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত কি আদৌ ফলপ্রসূ হয়েছে, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। আবার কারও মতে, ট্রেন বন্ধ না করলে আরও মাত্রা ছাড়াতে পারত সংক্রমণ। অবশেষে খাতায়-কলমে চালু হচ্ছে লোকাল ট্রেন। কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা, বিরোধীরাই বা কী বলছেন?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কাজল কৃষ্ণ বণিক বলেন, ‘লোকাল ট্রেন আমাদের লাইফলাইন। লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার অর্থ জীবনের গ্রিন সিগন্যাল।’ তাঁর কথায়, স্কুল-কলেজ বা অফিস সবকিছু চালু হবে আর মানুষ বাদুড়ঝোলা হয়ে ট্রেনে যাতায়াত করবেন, এটা ঠিক নয়। তবে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালানো চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করেন তিনি। চিকিৎসকের কথায়, ‘মানুষ পারে না এমন কোনও কাজ নেই। আমরা যদি সবাই সহযোগিতা করি, তাহলে পরিস্থিতি ভালোই হবে।’
আর এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, এটা সত্যিই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে নিউ নর্মালে কী ভাবে বাঁচতে হবে, তা আমরা শিখে গিয়েছি। তাই তিনি বলেন, ‘মানুষকে সচেতন হতে হবে, মানুষ সচেতন না হলে সরকারকে কড়া হতে হবে। কোভিড বিধি পালন করে কী ভাবে পরিষেবা স্বাভাবিক করা সম্ভব, তা দেখতে হবে।’ চিকিৎসক মনে করেন, করোনা সংক্রমণ যে ভাবে বাড়ছে, তাতে সব বন্ধ রাখা উচিৎ, কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। তাই প্রশাসনকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘অনেক আগেই ট্রেন চালানো উচিৎ ছিল। রেল তো অনেক আগেই বলেছে যে আমরা প্রস্তুত আছি।ট তবে বিজেপি নেতা মনে করেন, যাত্রী সুরক্ষা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
সরকারকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘পুজোর সময় রাজ্য সরকার তৃণমূলের আয়োজিত বিভিন্ন পুজোয় জনজোয়ারে গা ভাসানোর অনুমতি দিয়েছিল, যার জন্য আজ কোভিড বাড়ছে। সেখানে সরকার অবিবেচনার পরিচয় দিয়েছে। অথচ, যাতে মানুযের সুবিধা হবে, সেই ট্রেন চালানোয় কেন এত দেরি। তিনি বলেন, ট্রেন চালু হচ্ছে খুব ভালো কথা। কিন্তু বুর্জ খলিফা যেন না হয়ে যায়। ট্রেনের নামে আর যেন সেই পরিস্থিতি না হয়। আর এক বিজেপি নেতা শমীর ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্য সরকার একটা অপরিকল্পিত ভাবে চলছে। পরস্পর বিরোধী অবস্থান নিয়ে চলছে।
অনেকেই লোকাল ট্রেন চালু হওয়ায় খুশি। বিশেষত যারা প্রত্যেক দিন প্রবল ভিড়ে যাতায়াত করছিলেন, এই কয়েক মাস ধরে, তাঁরা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন। তবে, ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালানো কী আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকেরই। শিয়ালহহ স্টেশনে এক নিত্যযাত্রী বলেন, এই সিদ্ধান্তের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ। কিন্তু, তিনি মনে করেন, ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব নয়।
অন্যদিকে, রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, নিরাপত্তা ঢেলে সাজানো হবে। তবে জনসাধারণের কাছে রেলের আর্জি, খুব প্রয়োজন না পড়লে বাড়ি থেকে বেরবেন না।