তন্ময় প্রামাণিক: মরণোত্তর অঙ্গদানের হাত ধরে নতুন দিগন্ত রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে। বাংলায় প্রথম ফুসফুস প্রতিস্থাপন। কোভিড আক্রান্ত রোগী ১০৩ দিন একমোয় রয়েছেন। সেই রোগীর ফুসফুস প্রতিস্থাপন হচ্ছে মুকুন্দপুরের মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সুরাটের রোগীর ফুসফুস পাচ্ছেন কলকাতার বাসিন্দা।
সুরাট থেকে ফুসফুস নিয়ে উড়ান দিয়েছেন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। রাতে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে গ্রিন করিডরে মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছাবে ফুসফুস।
মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভরতি ওই রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর তারপরই অবস্থা ক্রমে খারাপ হতে শুরু করে। এবার তাঁর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হবে সুরাট থাকে আসা ওই ফুসফুস।
বাংলায় এই ধরনের ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ইতিহাস আগে নেই। প্রথমবার ফুসফুস প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় শহর। আজ রাত ১০ টা নাগাদ বিমানটি এসে পৌঁছাবে কলকাতা বিমানবন্দরে। সেখান থেকে গ্রিন করিডর করে যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে আসা হবে মুকুন্দপুরের মেডিকো সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, আজ রাত ১০ টা ১৫ মিনিট নাগাদ শুরু হবে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া। হাসপাতালে এখন তারই চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে।
ফুসফুস প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়ায় কোনওরকম খামতি রাখতে চাইছে না মেডিকো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি। আপাতত ওই রোগী মেডিকোর ভেন্টিলেশনে একমো সাপোর্টে রয়েছেন। দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর নষ্ট হয়ে যায় তাঁর ফুসফুস। ফুসফুস প্রতিস্থাপন ছাড়া রোগীকে বাঁচানোর আর কোনও পথ ছিল না। তবে এবার পশ্চিম ভারত থেকে আকাশ পথে ফুসফুস আসছে শহরে। আজই তাঁর ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হবে।
শুধু এই রাজ্যেই নয়, গোটা পূর্ব ভারতে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ইতিহাস গড়তে চলছে মুকুন্দপুরের এই বেসরকারি হাসপাতাল। এর আগে পূর্ব ভারতে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের কোনও ইতিহাস নেই। রাজ্যের সবথেকে বড় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে ইতিমধ্যে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে মুকুল রায়ের স্ত্রী যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন তাঁরও ফুসফুস প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়েছিল। প্রথমে একমো সাপোর্টে রাখা হলেও পরে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য চেন্নাইতে নিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। সেই সময় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে কলকাতা থেকে চেন্নাইতে নিয়ে যেতে হয়েছিল ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য।
এর আগে অবশ্য কলকাতা ফুসফুস প্রতিস্থাপন না হলেও কিডনি প্রতিস্থাপনের সাক্ষী থেকেছে। এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে শুরু করে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছে। এবার ফুসফুস প্রতিস্থাপনের সময় নতুন ইতিহাস তৈরির মুখে কলকাতা।
আরও পড়ুন: কিডনি দিলেন বাবা, বাঁচলেন ছেলে, প্রথমবার সফল প্রতিস্থাপন এনআরএস হাসপাতালে