কলকাতা: সোমবার সকাল। সপ্তাহের শুরুর দিনে অফিসে তখন চরম ব্যস্ততা। কম্পিউটারের স্ক্রিনে চোখ আটকে কর্মীদের। আচমকাই একটা বুক ফাঁটা আর্তনাদ। ‘জল দাও…’ সে কান্না এমনই যে ভবনের বাকি অফিসের কর্মীদের কানেও পৌঁছেছিল আওয়াজ। প্রসাধনী দ্রব্যে ভরা অফিসের মধ্যেই ততক্ষণে জ্বলছেন সেই সংস্থারই এক কর্মী। সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান। আগুনের দিকে এগিয়ে তখন ‘বাবা’কে বাঁচানোর চেষ্টা করছে ছোটো বাচ্চাগুলো। এক ভয়াবহ দৃশ্যে শিউরে উঠেছেন বাকি কর্মীরা। আকস্মিকতার ঘোর কাটিয়ে উঠে তাঁরা আগুন ঢেলে জল নেভান।
কিন্তু অফিসের মধ্যে কেন গায়ে আগুন লাগালেন সেই কর্মী? কেনই বা অফিসে তাঁর স্ত্রী-সন্তান। নেপথ্যে নিতান্তই এক ঘরোয়া বিষয়, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অশান্তি। স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক হাতে নাতে ধরতে অফিসেই সন্তানদের নিয়ে হাজির হয়েছিলেন স্ত্রী। আর ঝগড়া চলাকালীনই সকলের সামনে গায়ে আগুন ধরালেন স্বামী। সোমবার সকালে এক ভয়ানক ঘটনার সাক্ষী থাকল ময়দানের অফিস পাড়া।
সোমবারের ব্যস্ত সময়ে নাটকীয় ঘটনা ময়দান মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন অফিস বিল্ডিং। বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক নিয়ে দাম্পত্য কলহের আঁচ এসে পড়ল অফিসে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই বিল্ডিংয়ে অন্য একটি অফিসে কর্মরত মহিলার সঙ্গে ওই ব্যক্তির সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। তার জেরেই স্বামীর অফিসে সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন তিনি। অফিসের ডেস্কের সামনেই কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন স্বামী-স্ত্রী। সহকর্মীরা তখন হতবাক। কিন্তু নিতান্ত পারিবারিক বিষয় ভেবে অস্বস্তির জেরেই প্রথমটায় বিশেষ আমল দেননি সহকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ঝগড়া চলাকালীনই ওই ব্যক্তি দৌড়ে অন্যত্র চলে যান। প্রত্যেকে ভেবেছিলেন, হয়তো ঝগড়া থেকে রেহাই পেতে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আর্তনাদ শুনতে পান তাঁরা। যতক্ষণে দৌড়ে অফিসের স্টোর রুমের কাছাকাছি বাকি কর্মীরা পৌঁছেছেন, ততক্ষণে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন তিনি। পাশে পড়ে কেরোসিনের খালি বোতল।
বাকি কর্মীরা তখন ‘জল দাও’ বলে চেঁচাতে থাকেন। সেই শব্দই সম্ভবত শুনতে পেয়েছিলেন বাকি অফিসের কর্মীরা। চোখের সামনে সেই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় চলে আসেন তাঁরা। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। আগুনের খবর পেয়ে পৌঁছয় দমকলের দুটি ইঞ্জিন।
অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তির গায়ে জল ঢেলে আগুন নেভান তাঁর সহকর্মীরা। এরপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পারিবারিক বিবাদকে এ ভাবে অফিসে টেনে আনার ঘটনায় অবাক অন্য অফিসের কর্মীরা।
এক সহকর্মী বলেন, “এ ধরনের ঘটনা কোনওদিনও অফিসের মধ্যে ঘটতে পারে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবা যায় না। অত্যন্ত মর্মান্তিক একটি বিষয়। তবে ওই দম্পতির ঝামেলায় প্রভাব পড়ছে তাঁদের সন্তানদের মনেই। বাবা তাদের চোখের সামনেই গায়ে আগুন ধরালেন, শিশুগুলোর কথা ভেবে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে।”
বর্তমানে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ব্যক্তি। ইতিমধ্যেই এসএসকেএমে গিয়ে বয়ান নথিভুক্ত করেছে পুলিশ। তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ৭০ শতাংশের বেশি পুড়ে গিয়েছে। শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তবে এখনও বিপন্মুক্ত নন তিনি।