Mamata Banerjee: বছর ঘুরতেই তৃণমূলের মেগা বৈঠক, সোমে কোন বার্তা দেবেন মমতা?

TV9 Bangla Digital | Edited By: Soumya Saha

Jan 02, 2023 | 12:05 AM

Mamata Banerjee: অভিষেক বলছেন, "আপনারা একটু নজর রাখুন। সোমবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চিতভাবে কিছু নির্দেশিকা আমাদের দেবেন।"

Mamata Banerjee: বছর ঘুরতেই তৃণমূলের মেগা বৈঠক, সোমে কোন বার্তা দেবেন মমতা?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Follow Us

কলকাতা: কী হবে তৃণমূলের (Trinamool Congress) সোমবারের বৈঠকে? কোনও বড় ঘোষণা কি আসতে চলেছে ২ জানুয়ারি নজরুল মঞ্চের সভা থেকে? সভায় থাকবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। নতুন বছরের শুরুতে তৃণমূলের এই মেগা বৈঠক ঘিরে জল্পনা যখন তুঙ্গে, তখন তা আরও উস্কে দিয়েছে ‘দরজা খোলার’ তত্ত্ব। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কিছুদিন আগেই একটি টুইট করেছিলেন। লিখেছিলেন, ২ জানুয়ারি দিনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরে নিজেই এর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “ধামাকা কি না জানি না, তবে ২ জানুয়ারি একটা দিন আছে। দরজা খোলার ব্যাপারে অনেক আবেদন আছে। সাংসদ, বিধায়ক ও সাংগঠনিক নেতাদের আবেদন আছে। তবে দরজা খোলা পুরোদস্তুর অভিষেকের ব্যাপার।”

কিছুদিন আগে কাঁথিতে সভা করতে গিয়ে অভিষেক বলেছিলেন, দরজা ফাঁক করলে বিজেপি ফাঁকা হয়ে যাবে। রবিবারও আবার তাঁর মুখে দরজা ফাঁকের তত্ত্ব শোনা গিয়েছে। বলেছেন, দরজা শুধু ফাঁক করা নয়, সঠিক সময়ে দরজা খোলাও হবে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মুখে এই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ঘিরে জল্পনা আরও বেড়েছে। যদিও সেই সঠিক সময় কখন আসবে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ করেননি তৃণমূল সেনাপতি। এদিকে বাংলার রাজনীতিতে এখন তারিখ পে তারিখ। বিরোধী দলনেতা ডিসেম্বরের ১২, ১৪, ২১ তারিখের কথা উল্লেখ করেছিলেন। ২১ তারিখ কাঁথিতে শুভেন্দু অধিকারীর সভা হয়েছে বটে, তবে বাকি দুটি দিনে বিজেপির পক্ষে যাওয়ার মতো উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটেনি। শুভেন্দুবাবু অবশ্য জানুয়ারি মাসের নতুন তারিখের কথা উল্লেখ করেছেন, তবে এরই মধ্যে নতুন বছরের শুরুতেই তৃণমূলের এই মেগা সভা ঘিরে জোর জল্পনা চলছে।

জল্পনার কারণও রয়েছে। প্রথমত, এই দরজা খোলার তত্ত্ব। দ্বিতীয়ত অতীতে গত ৮ মার্চ এই নজরুল মঞ্চেই মমতার উপস্থিতিতে এক দলীয় সভায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এসেছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার। তাহলে কি বিজেপিতে আবার কোনও ভাঙন আসন্ন? এমন প্রশ্ন ইতিমধ্যেই ঘুরপাক খেতে চলেছে। এবারও নজরুল মঞ্চের সভায় এমন কোনও চমক অপেক্ষা করছে? জোর জল্পনা ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

রবিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সঠিক সময়ে দরজা খোলার কথা জানিয়ে বলেছেন, “সোমবার দলের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উপস্থিত থেকে আমাদের দিকনির্দেশ করবেন। বিধায়ক, সাংসদ থেকে শুরু করে ব্লক স্তর পর্যন্ত সবমিলিয়ে সাড়ে তিন হাজার প্রতিনিধিকে ডাকা হয়েছে।” সংবাদমাধ্যমের প্রতি অভিষেক অনুরোধ করেন, “আপনারা একটু নজর রাখুন। সোমবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চিতভাবে কিছু নির্দেশিকা আমাদের দেবেন।”

প্রসঙ্গত রাজ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই বৈঠকে বিধায়ক সাংসদদের সঙ্গে থাকবেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও কর্ম্যাধ্যক্ষরাও। ইতিমধ্যেই মারিশদা ও তাতলার পঞ্চায়েত প্রধানকে পদ থেকে সরিয়েছেন অভিষেক। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, পঞ্চায়েতের মহারণের আগে মারিশদা মডেলকেই এখন হাতিয়ার করতে চাইছে তৃণমূল শিবির। পঞ্চায়েত প্রধানদের উপর কোপ পড়ার পর কি এবার শীর্ষ নেতৃত্বের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হবে কোনও জেলা পরিষদকে? সেই নিয়েই আলোচনা তুঙ্গে তৃণমূল শিবিরের অন্দরে।

পাশাপাশি উঠে আসতে পারে জেলার নেতাদের সাংগঠনিক কাজকর্মের রিপোর্ট কার্ডও। দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে একমাত্র জেলা নদিয়া, যেখানে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে ফল আশানুরূপ হয়নি। ধারাবাহিক ভাবে এই জেলার সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কথা বলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই জেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায় দু’জনেই সভা করেছেন। বিশেষ করে রাণাঘাট সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূলের দুর্বল সংগঠন নিয়ে ভাবতে হচ্ছে শাসক দলকে। বিরোধীদের থেকেও সবচেয়ে বেশি খোঁচা হজম করতে হচ্ছে এই জেলা নিয়েই। কারণ এই জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জেলার অন্যতম বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যও গ্রেফতার হয়েছেন। এমন অবস্থায় এই জেলার সংগঠনকে আরও মজবুত করতে শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে কোনও বার্তা আসে কি না, সেই দিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।

নজর থাকছে হুগলি গ্রামীণ বিশেষ করে আরামবাগ, গোঘাট, খানাকুল, পুরশুড়ার দিকেও। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার একাংশে দলের তরফে বেশি করে নজর দেওয়ার বার্তা যেতে পারে। একুশের বিধানসভা ভোটে এখানের একাধিক বিধানসভা কেন্দ্র হাতছাড়া হয়েছে। এর আগেও এই এলাকাগুলি নিয়ে সাংগঠনিক বার্তা দেওয়া হয়েছিল দলের তরফে। এদিকে হুগলি জেলাতেও বিভিন্ন সময়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠে এসেছে। পাশাপাশি পঞ্চায়েত স্তরে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বেনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। এখন দেখার সোমবারের বৈঠক থেকে হুগলির নেতৃত্বকে কোন বার্তা দেওয়া হয়।

সেই সঙ্গে জঙ্গলমহলের দিকেও নজর থাকছে। খোদ প্রশাসনিক প্রধান সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখে এসেছেন পরিস্থিতি। কথা বলেছেন মানুষের সঙ্গে, তাঁদের দাবি-দাওয়া, সমস্যার কথা বুঝেছেন। এমন অবস্থায় জঙ্গলমহল নিয়ে এদিনের বৈঠকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আর অবশ্যই নজর থাকছে পূর্ব মেদিনীপুরের দিকে। একুশের বিধানসভা ভোটের পর থেকে নাগাড়ে চর্চায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতি। সম্প্রতি সেখানে কুণাল ঘোষকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে দলের তরফে। প্রতিদিন বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে গ্রামে গ্রামে। বোঝাই যাচ্ছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল। কারণ, এই জেলার দুই সাংসদ তৃণমূলের প্রতীকে থাকলেও, দলের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক প্রায় নেই বললেই চলে। এছাড়া এই জেলা হল বিরোধী দলনেতার জেলা। মনে রাখতে হবে, মারিশদা গ্রাম পঞ্চায়েতও এই জেলাতেই।

পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাগুলি থেকে অভিযোগ উঠে আসছে, যোগ্য লোক নাকি আবাসের তালিকায় জায়গা পাননি। সেই নিয়ে কি জেলার কোনও নেতাকে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হবে সোমবারের বৈঠকে? তা নিয়েও চলছে জোর চর্চা। সেই সঙ্গে অবশ্যই নজর থাকবে বীরভূমের দিকে। এই জেলায় তৃণমূলের সংগঠন অনুব্রত মণ্ডল সামলাতেন। তাঁর ওপরেই দল ভরসা রেখে এসেছে। তিনি ভাল ফল দিয়েছেন। কিন্তু এখন অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর সেখানে বিজেপি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে না তো? সেই দিকেও নজর রাখছে দল। সেক্ষেত্রে বিশেষ কোনও পরিকল্পনার কথা কি আলোচনা হতে পারে সোমবারের বৈঠকে?

উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির মতো জেলাগুলির দিকেও নজর থাকছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে বার্তা দিয়ে এসেছেন নেতাদের। নীল বাতি গাড়ি, নিরাপত্তারক্ষী ছেড়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলেন। মানুষের সঙ্গে সময় কাটাতে বলেছিলেন। নেত্রীর সেই বার্তা কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে? তা নিয়েও কি আলোচনা হবে সোমবারের বৈঠকে? সব মিলিয়ে আজকের মেগা বৈঠকের আলোচ্য ইস্যুগুলি নিয়ে গুঞ্জন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।

Next Article