ইমাম মোয়াজ্জেমদের সমাবেশে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজি ইন্ডোরে আয়োজিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন তিনি। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সমাবেশ বাংলার রাজনীতিতে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সব শেষে মমতা বলেন, “যতদিন বেঁচে থাকব, আপনাদের ঘরের মেয়ের মতো, বোনের মতো আপনাদের পাশে থাকব। আপনারা ভুল বুঝবেন না। আমি মন্দিরেও যাই, মসজিদেও যাই।”
২০১২ সালে ইমামদের ভাতা চালু করেছিল রাজ্য সরকার। আজ সেই ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, ইমাম, মোয়াজ্জেম ও পুরোহিত- প্রত্যেকের জন্য ৫০০ টাকা করে বাড়ানো হল।
‘সরকার হবে গ্যারান্টার’, ইমাম-মোয়াজ্জেমদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার কথা জানালেন মমতা। তিনি জানান, ওই টাকা নিয়ে কেউ দোকান খুলতে পারেন, বা অন্য কোনও কাজ করতে পারেন।
মাদ্রাসা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “৩০৭ টি মাদ্রাসাকে আমরা স্বীকৃতি দিয়েছিলাম। আরও ৭০০ মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেব সার্ভে করা হচ্ছে। ফারজি মাদ্রাসা প্রচুর আছে। তারা কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পায় না। আমরা চাই সেই সব মাদ্রাসা স্বীকৃতি পাক। আপনারা নাম রেজিস্টার করুন। আপনি কী পড়াবেন, তাতে হস্তক্ষেপ করব না। রেজিস্টার করলে সব প্রকল্পের সুবিধা পাবে পড়ুয়ারা।”
ছাত্র মৃত্যু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমরা গর্ব করতাম। আপনারা দেখলেন কীভাবে বামেদের ছাত্র সংগঠন একজন ছেলেকে মেরে ফেলল।’
সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “সংখ্যালঘু স্কলারশিপে বাংলা এক নম্বর। গত ১২ বছরে তিন কোটি ৬৩ লক্ষ সংখ্যালঘু স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ওবিসি-দের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কেন জানেন, এ রাজ্যে ৯৭ শতাংশ সংখ্যালঘু ওবিসি-র মধ্যে পড়েন। এছাড়া শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্য সাথী, কোনও প্রকল্পেই হিন্দু-মুসলিমে কোনও ভেদাভেদ নেই বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।”
এনআরসি প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “যখনই আপনাদের ওপর আঘাত আসে, তখন আমরাই ইস্যুটা সবার আগে ধরি, আর শেষ পর্যন্ত লড়াইটা করি। অনেক রাজ্যে এনআরসি হয়েছে, আমার রাজ্যে করতে দিই নি, আর দেবও না। অসমে সংখ্যালঘুদের নাম বাদ দিয়ে দিল, আমি প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলাম, তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকী প্রতিবাদ করেছিলাম বলে এফআইআর করা হয়েছিল অসমে।”
বিরোধীদের নিশানা করতে গিয়েই ফুরফুরা শরিফের প্রসঙ্গে মমতার মুখে। আইএসএফ-এর নাম না করে তিনি বলেন, “জগাই-মাধাই-গদাই… তার সঙ্গে জুটেছে আর একটা। তাঁকে বড় নেতা করবেন টাকা দিয়ে আর মিথ্যা প্রচার করবেন।” তিনি আরও বলেন, “দরগা বলে ফুরফুরা শরিফকে আমরা সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। আমি আশা করি ফুরফুরা শরিফ রাজনীতিতে প্রবেশ করবে না। যেমন আমরা আশা করি বেলুড় মঠ কোনও রাজনীতিতে প্রবেশ করবে না।”
বিরোধীদের আক্রমণ করে মমতা বলেন, “সংখ্যালঘু দেখলেই ওদের পিঁপড়ে কামড়ায়। এমনি পিঁপড়ে নয়, ডেঁয়ো পিঁপড়ে। বিজেপিকে নিশানা করে তাঁর দাবি, কিছু কিছু নেতা সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভাগাভাগি করার জন্য কারও কারও হাতে নগদ টাকাও তুলে দিচ্ছে। বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসের একযোগে বোর্ড গঠন করার কথাও উল্লেখ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মমতা বলেন, ‘বিজেপির কাজ হচ্ছে সিপিএম আর কংগ্রেসকে আমাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রমজান মাসে রোজা তোলার সময় আমি যখন যাই, তখন আমাকে সবাই ব্যঙ্গ করেন। বিজেপির লোকেরা তো আমার নামটাই পাল্টে দিয়েছিলেন। তবে আমি কী করব সেটা আমার ব্যাপার।” মমতা উল্লেখ করেন ধর্মে কোনও ভেদ নেই, আর বিরোধীদের কথাতেও আমল দেন না তিনি। বলেন, “আমি শুধু দেখতে চাই, মানুষ মানুষের সঙ্গে লড়াই করবে না। আমারও দুটো চোখ, আপনাদেরও দুটো চোখ। আমি যখন আদিবাসীদের সঙ্গে নাচ করি, যখন মতুয়াদের উৎসবে ছুটি দিই, তখন তো কেউ এ কথা বলেন না। যত রাগ আপনাদের এই সংখ্যালঘুদের ওপর।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলা এমনই এক রাজ্য যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে রাখি বন্ধন করেছিলেন। আমরা রবি ঠাকুরের দেখানো পথে এগিয়ে চলেছি। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের ডানহাত ছিলেন শাহজাহান খান।’ শ্রী রামকৃষ্ণের যত মত তত পথ- এই উক্তির কথাও উল্লেখ করেছেন মমতা।