West Bengal Assembly: সৌজন্য বিনিময় মমতা-শুভেন্দুর, ২০২০ সালের পর এই প্রথম

TV9 Bangla Digital | Edited By: Soumya Saha

Sep 19, 2022 | 5:13 PM

West Bengal Assembly: বক্তার তালিকায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন শাসক দলের পাঁচ হেভিওয়েট মন্ত্রী - ব্রাত্য বসু, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পার্থ ভৌমিক ও বীরবাহা হাঁসদা। বিরোধী শিবির থেকেও শুভেন্দু ছাড়া রয়েছেন শঙ্কর ঘোষ, অগ্নিমিত্রা পল, বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মারা। আইএসএফ থেকে নওশাদ সিদ্দিকীও রয়েছেন বক্তার তালিকায়।

West Bengal Assembly: সৌজন্য বিনিময় মমতা-শুভেন্দুর, ২০২০ সালের পর এই প্রথম
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী

Follow Us

কলকাতা: সোমবার হাইভোল্টেজ দিন রাজ্য বিধানসভায়। এদিন অধিবেশন কক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দুই জনেরই সোমবার বক্তব্য রাখার কথা বিধানসভায়। এছাড়া শাসক দল, বিরোধী দল মিলিয়ে একগুচ্ছ তাবড় মুখ রয়েছে বক্তার তালিকায়। বক্তার তালিকায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন শাসক দলের পাঁচ হেভিওয়েট মন্ত্রী – ব্রাত্য বসু, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পার্থ ভৌমিক ও বীরবাহা হাঁসদা। বিরোধী শিবির থেকেও শুভেন্দু ছাড়া রয়েছেন শঙ্কর ঘোষ, অগ্নিমিত্রা পল, বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মারা। আইএসএফ থেকে নওশাদ সিদ্দিকীও রয়েছেন বক্তার তালিকায়।

কে কী বললেন এদিন বিধানসভায় –

Key Highlights

  1. ফিরহাদ হাকিম: বিধানসভায় এদিন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অপপ্রয়োগ নিয়ে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “আমাদের দেশে যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরাই সাধু। যাঁরা বিরোধী আসনে বসেন, তাঁরাই অসৎ। সরকারি দলে একটা ওয়াশিং মেশিন আছে। দল বদল করে সরকারি দলে ঢুকলে তিনি সাধু। এই সরকার দমন পীড়নের সরকার। সোনিয়া থেকে অভিষেক… সবাই অসাধু। এরা সবাই সাধু। সিবিআই-এ শ্রেষ্ঠ অফিসাররা আছেন। কিন্তু তাঁদের অন্যায় ভাবে ব্যবহার করা হয়। আর সে কারণেই একাধিক ব্যবসায়ী এখান থেকে পালিয়ে যান, কোটি কোটি টাকা নিয়ে। কিন্তু তাঁদের ধরার ক্ষমতা সিবিআইয়ের নেই। ৮১ হাজার কোটি টাকা চুরি করে পালিয়েছে, কিন্তু তাদের পেছনে ইডি-সিবিআই যায় না। এরা দৌড়ায় বিরোধীদের পেছনে। রাজশক্তি শেষ কথা বলে না, শেষ কথা বলবে জনগণ এবং তাঁরা আছেন মমতার সঙ্গে। এই সরকার এক দিন শেষ হবে।”
  2. ব্রাত্য বসু: কড়া ভাষায় সিবিআই ও ইডির অতিসক্রিয়তা নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। তিনি বলেন, “সিবিআই আর ইডি কী কাজ করে, আমরা সবাই জানি। তাঁদের দুটো কাজ – তদন্ত করা এবং আড়াল করা। ব্যাপম কেলেঙ্কারি, ভুলে গেলেন। কতজন খুন হয়েছিল? কী ভাবে কাজ করেছিল সিবিআই। আদালত সিবিআই-এর বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছিল।” এরপরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর নাম তোলেন তিনি। আর তারপরই বিজেপি বিধায়করা উঠে দাঁড়িয়ে তার প্রতিবাদ করেন। শেষ পর্যন্ত স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অমিত শাহর নাম বাদ দেন বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে। এরপর ব্রাত্য বসু আরও বলেন, “সুপ্রিম কোর্টে একাধিকবার সিবিআইয়ের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলেছে হতাশাজনক। যেখানে বিরোধীরা আছে, সেখানে কেন সিবিআই লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে? কারণ ওরা ভয় পাচ্ছে। ২০২৪ সালে হারবে বুঝতেই এই সিবিআইকে সক্রিয় করেছে।”
  3. অগ্নিমিত্রা পল: বিরোধী শিবির থেকে অগ্নিমিত্রা পল বলেন, “আদালতের নির্দেশে এই মামলা চলছে। সিবিআই তদন্তের পরে একের পর সত্য সামনে উঠে আসছে।বীরভূমে মুখ্যমন্ত্রী বললেন আমার বীর নেতা! মুখ্যমন্ত্রীর এই বিবৃতি কি ন্যায় সংগত? মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল এই তদন্তের পাশে দাঁড়ানো। এই দলের সবাই এই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। দেশের মানুষ দেখলেন পুলিশ কর্তাকে সিবিআই ধরতে গেলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পাশে দাঁড়ান। এটা চরম লজ্জার। চাকরি চুরি হয়, চাকরি বিক্রি হয়। আপনাদের লজ্জা করে না এই নিয়ে প্রস্তাব আনতে। কেউ বলছেন জুতো বানাবো। কেউ বলছেন গুলি করা উচিত। তাহলে ১৯৯৩ ঠিক ছিল তো? আপনারা বলছেন, বিরোধীদের ধরছে না। আদালতে যান। গিয়ে বলুন না! তথ্য প্রমাণ থাকলে, আদালত তো সকলের জন্য খোলা। কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে থাকেন, এই জিনিস আমাদের লজ্জার।”
  4. চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য: বিধানসভায় রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন,”এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো। একাধিক দল। কিন্তু তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নিরপেক্ষতা নেই। কারণ এটা নিয়ন্ত্রিত একটা এজেন্সি। বিরোধী দলের কেউ থাকলে, তাঁকে ছোঁয়া হচ্ছে না। ইডির এক্তিয়ার কী, সেটা জানা উচিত। অধিকারের বাইরে গিয়ে কাজ করছে বা তাঁদের দিয়ে করানো হচ্ছে। একই কাজ করে যাচ্ছে সিবিআই। সিবিআইয়ের এক্তিয়ার কতটা, সেটা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁদের অভিসন্ধিমূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।”
  5. পার্থ ভৌমিক: সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রিসভার রদবদলের সময়ে মমতার ক্যাবিনেটে জায়গা পেয়েছেন পার্থ ভৌমিক। এদিন বিধানসভায় তিনি বলেন, “আপনি কি বলতে পারেন যে অভিযোগে হাকিম জেলে যায় সই অভিযোগে আপনাকে (বিরোধী দলনেতা) কেন ডেকে পাঠানো হয় না? এটাই কি সিবিআই-এর নিরপেক্ষতা? আপনার কথা বাংলা মানুষ বিশ্বাস করে না। আমাদেরকে জেলে ভরে দিতে পারেন, কিন্তু ওই একজন মানুষ… যাঁকে বাংলার মানুষ বিশ্বাস করেন, তাঁদের এই বিশ্বাস থেকে সরাতে পারবেন না।”
  6. শুভেন্দু অধিকারী: এদিন বিধানসভায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কী বার্তা দেন, সেই দিকে নজর ছিল সবার। বিশেষ করে ইডি-সিবিআই-এর অতি সক্রিয়তার প্রতিবাদে বিধানসভায় যে নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে এসেছে রাজ্যের শাসক শিবির, সেদিক থেকে আজকের দিনে শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভায় কী বার্তা দেন, তা নিয়ে উৎসাহ ছিল রাজনীতির অন্দরমহলে। এদিন বিধানসভায় শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “যা নিয়ে আলোচনা করছেন, তার আউটকাম শূন্য। সিবিআই আর ইডি কাজের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে না। চোর ধরো জেল ভরো চলছে চলবে। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী সিবিআই এখানে স্বেচ্ছায় আসতে পারে না, হয় তাকে রাজ্য সরকার ডাকতে পারে অথবা আদালতের নির্দেশে এখানে কাজ করতে পারে। এই মুহূর্তে আমাদের রাজ্যে ১৫ টা ক্ষেত্রে ইডি বা সিবিআই তদন্ত করছে, সবটাই আদালতের নির্দেশ।”তিনি আরও বলেন, “একটাও কেন্দ্রের নির্দেশে নয়। ফলে ইডি বা সিবিআই নিয়ে আপনি আলোচনা করতে পারেন না। সিবিআই বা ইডির বিরুদ্ধে আলোচনা কোনও অধিকারই আপনার। এটা আইনগত প্রশ্নের সামনে দাঁড়াবে। আপনারা সিআইডিকে ব্যবহার করেন আমাদের বিরুদ্ধে। তবে যা আলোচনা করছেন করুন, আগেও যে বিল এনেছেন, কোনওটা কার্যকরী হয়নি… এটাও হবে না। কী ভাবে এই আলোচনা করেন? দরজা খুললেই টাকার পাহাড় বেরোচ্ছে। চোর ধরো আটকানো যাবে না। ধরা পড়বেন সবাই। কেউ ছাড়া পাবেন না। চুরি করলে ধরা পড়বেন। আটকাতে পারবেন না।”
  7. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: সোমবার হাইভোল্টেজ বিধানসভায় মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিন্দা প্রস্তাবে কী বলেন, সেই দিকে নজর ছিল প্রত্যেকের। আর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর কথায় যা উঠে এল, তার সারবত্তা কিছুটা এমন যে প্রধানমন্ত্রী আর বিজেপিকে এক করলে চলবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই সরকার ক্রীতদাস নয়, স্বাধীনচেতা সরকার। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার। চোরের মায়ের বড় গলা। চোরেরা যখন গেরুয়া সেজে বসে থাকে, তখন মনে হয় কী দেশ ছিল… কী দেশ হল। কেস্ট বীর পুরুষ অবশ্যই। বীরপুরুষ প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা। শুধু সব জায়গায় গিয়ে ভয় দেখান, দেখে নেবেন। ২০২৪ সালে একেবারে যাবেন। ডুবু ডুবু হচ্ছে দেশ। এই প্রস্তাবের কারণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা… কারও বিরুদ্ধে বলা নয়। যাঁরা গেরুয়া পড়ে এসেছেন, তাঁদের বাড়ি রেইড হোক। টাকার পাহাড় বেরোবে।”সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় আরও বলেন, “নারদা-সারদা নিয়ে ববি, সুব্রত, সুলতানদের ডাক পড়ে। আপনাদের প্রধানের বাড়ি ক’টা রেইড হয়? অন্যায়কে প্রটেকশন দিচ্ছি না। ইডি সিবিআই কাজ করবে, আমরা শুধু দেখিয়ে দেবো। আমরা চাই সব চোররা গ্রেফতার হোক। আমি তো বলছি না সিআইডি ভাল, সিবিআই খারাপ । বলছি, নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে। ১০৮ টা কেস হয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সির এই রাজ্যে। বিজনেসম্যানরা পালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের নাম বলছি না। আমি বিশ্বাস করি না, এই কাজ নরেন্দ্র মোদী করেছেন। এটা অন্যান্য বিজেপি নেতারা করেছেন। নিজাম প্যালেসে আপনাদের নেতারা কেন সন্ধ্যা বেলায় বসে থাকেন? এটা লোকাল বিজেপি ,সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এর মিলিত গেম প্ল্যান। প্রধানমন্ত্রী আপনি এদের সামলান। আপনাকে এখানে ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করতে বলেন এরা। আমি প্রধানমন্ত্রীকে কিছু বলব না। প্রধানমন্ত্রীর কাল জন্মদিন গিয়েছে। ওনাকে কিছু বলতে চাই না । ওনার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। আমি বলব পার্টি আর সরকারকে এক করবেন না। সরকার চিতা, আর এরা হুলো। চিতা আর হুলো এক না। আমি চিতাকে সম্মান করি। কিন্তু ম্যাও ম্যাওকে সম্মান করি না। চিঠি দিচ্ছে রাত ১২ টায় আসতে। একজন মহিলা কী করে যেতে পারেন?”

    তিনি আরও বলেন, “নোবেল প্রাইজ কী উদ্ধার করতে পেরেছে আজ পর্যন্ত?  নন্দীগ্রাম কেসে উদ্ধার করতে পেরেছে? নেতাই কেসে করতে পেরেছে? তাপসী মালিক কেসে উদ্ধার করতে পেরেছে? কারও যদি দোষ থাকে তাহলে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আবেদন রাখছি সর্বসম্মতভাবে এই রেজোলিউশন পাস করুন।”

     

  8. মমতা-শুভেন্দুর সৌজন্য বিনিময়: অধিবেশন কক্ষে বক্তব্য পেশ করার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সৌজন্য বিনিময়। একে অপরের দিকে জোড় করলেন। বক্তব্য শেষে মমতা নিজের আসন ছেড়ে দলীয় বিধায়কদের কাছে যান। সেই সময় শুভেন্দুর পাশ থেকে যাওয়ার সময় একে অপরকে নমস্কার করলেন মমতা ও শুভেন্দু। বিরোধী দলের বেঞ্চের সামনে থেকে যাওয়ার সময়ে ঘটে এই সৌজন্য বিনিময়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ২০২০ সালের পর এই প্রথম এমন সৌজন্য বিনিময় উভয়ের।

     

Next Article