কলকাতা: “ওদের একটা কথাও আপনারা বিশ্বাস করবেন না। হঠাৎ যদি দেখেন ববির অত সম্পত্তি পাওয়া গিয়েছে, ওকে অ্যারেস্ট করবে… বুঝবেন সব সাজানো।” পার্থ-অনুব্রতর পর নতুন কোনও গ্রেফতারির আশঙ্কা থেকেই কি এ বার্তা দিয়ে রাখলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেয়ো রোডের ছাত্র সমাবেশ থেকে নেত্রী আমজনতার উদ্দেশে আগেভাগেই বলে রাখলেন, “টোটালটাই সাজানো, টোটালটাই মিথ্যা, টোটালটাই নাটক।”
এক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখ্য, অতিরিক্ত সম্পত্তি থাকার অভিযোগে ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এটি অবশ্য একটি জনস্বার্থ মামলা, যেটি দায়ের হয়েছিল ২০১৭ সালে। কিন্তু এসবের মাঝেই আবার মমতা মন্ত্রিসভায় বেশ কিছু রদবদলও হয়ে যায়, তাতে দায়িত্ব কমে ফিরহাদ হাকিমের। ফিরহাদ হাকিমের হাত থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় পরিবহন ও আবাসন দফতর। এখন তিনি শুধুই পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সামলাচ্ছেন। হেভিওয়েট প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পরই ফিরহাদের দায়িত্ব কমায় নতুন রাজনৈতিক জল্পনা তৈরি হয়েছিল বটে, তবে এদিন এক নয়া আশঙ্কার কথা আগেই প্রকাশ করে রাখলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ ইতিমধ্যেই রাজ্যের দুই হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীর কোটি কোটির সম্পত্তি, টাকার পাহাড় দেখে তাজ্জব বনেছেন আম জনতা।
একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে পর বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনেক পরিবর্তন এসেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূলের মেয়ো রোডের এই সমাবেশ রাজনৈতিক তাৎপর্য বেশ অনেকটাই। একটা বড় ‘দুর্নীতি-বিদ্ধ ঝড়’ সামলে ওঠার চেষ্টা করছে শাসকশিবির। আর পঞ্চায়েত আর চব্বিশের ‘মহারণে’র আগে কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন ছিল। এদিনের ছাত্র সমাবেশ মঞ্চকে সেই প্ল্যাটফর্ম হিসাবেই ব্যবহার করেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তথা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়ান অভিষেক-মমতা দু’জনেই। নয়া আঙ্গিকে খাঁড়া করেন সেই ষড়যন্ত্রের তত্ত্বকেই। আর এক্ষেত্রে মিডিয়া-ট্রায়ালের অভিযোগও করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, মিডিয়া টাকা খেয়ে এই ধরনের খবর সম্প্রচার করছে। তাতে যেন সাধারণ মানুষ বিশ্বাস না করেন। তিনি বলেন, “বিজেপি টাকা দিয়ে সংবাদমাধ্যম, ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স সবাইকে কিনে নিয়েছে।”
মমতা বলেন, “পার্থ চোর হলে আইনি বিচার হবে। কিন্তু কেষ্ট চোর, ববি চোর, অরূপ চোর, অভিষেক চোর, এমনকি আমাকেও চোর বলছে।”
অনুব্রতর পাশে এদিনও দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাঁকে ‘পরোপকারী ছেলে’ বলে উল্লেখ করেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দুর্নীতি ইস্যুতে বিদ্ধ তৃণমূল যে এখন ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়ে, তা স্বীকার করে নেন সুপ্রিমো। সঙ্গে দলীয় কর্মীদের এও বার্তা দিয়ে রাখেন, ‘ঝড়ের মুখে যারা ঘুরে দাঁড়ায়, তারাই বীর সৈনিক।’