কলকাতা : তাঁর কাছেই আইনের হাতেখড়ি। আর এখন সেই স্যরকেই প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করছেন। জানতে চাইছেন নানা প্রশ্নের উত্তর। আর হাইকোর্টের এজলাসে দাঁড়িয়ে আইনজীবী ছাত্র সুদীপ্ত দাশগুপ্তর সেইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে স্যর মানিক ভট্টাচার্যকে (Manik Bhattacharya)। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গতকাল তাঁকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
বছর পঁয়ত্রিশের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় দুর্নীতির মামলায় আইনজীবী হিসেবে পরিচিত মুখ। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের জুনিয়র হিসেবে একাধিক মামলায় তাঁকে সওয়াল করতে দেখা যায়। এসএসসি মামলা থেকে শুরু করে প্রাইমারি, একাধিক মামলায় মামলাকারীদের হয়ে সওয়াল করেছেন সুদীপ্ত।
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির একের পর এক মামলায় চাকরি বাতিল থেকে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সপ্তাহ খানেক আগে ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে ২৬৯ শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রাথমিকে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্তের ভার পেয়েছে সিবিআই। কিন্তু, হাইকোর্টের গতকালের (২০ জুন) নির্দেশ নিয়ে বেশি আলোচনা শুরু হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে অপসারিত হয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। তাঁর বিরুদ্ধে সওয়াল করেন সুদীপ্ত দাশগুপ্ত।
মানিক ভট্টাচার্য যোগেশ চন্দ্র ল’ কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০০৯ সালে সেই কলেজ থেকেই পাশ করেছেন সুদীপ্ত। এর আগেও প্রাইমারি মামলায় মানিক ভট্টাচার্যকে ভর্ৎসনার পাশাপাশি একবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তলব করেন।
পায়েল বাগের করা সেই মামলায় মানিকবাবু কোর্টে এসে বলেন, “ধর্মাবতার আমার দুই দিকে আজ যাঁরা আছেন আমার পক্ষে বা বিপক্ষে সবাই আমার ছাত্র।” মানিকবাবুর হয়ে সেসময় তাঁরই ছাত্র রাতুল বিশ্বাস সওয়াল করছিলেন। তাঁর বিপক্ষে ছিলেন সুদীপ্ত দাশগুপ্ত ও বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেকেই মানিকবাবুর ছাত্র।
এজলাসে সুদীপ্ত মানিকবাবুর পাশেই তাঁর বিরুদ্ধে জোর সওয়াল করেন। যদিও এজলাসের বাইরে এসে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করেন, “স্যর ভাল আছেন তো?” শুধু সুদীপ্তই নয়, যোগেশচন্দ্রের বহু আইনজীবী ছাত্র স্যরের মামলা শুনতে আদালতে ভিড় করেছিলেন।
আজও হাইকোর্টে হাজির হয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। তাঁর বিপক্ষে সওয়াল করেন সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। আদালতের বাইরে মানিকবাবুর কুশল জিজ্ঞাসা করেন তাঁর আইনজীবী ছাত্র। সূত্রের খবর, মানিকবাবু তখন তাঁকে বলেন, ‘তুই কি আমাকে জেলে পাঠাবি ? আমি একটু বিশ্রাম চাই।’