Anti Hijab Protest: হিজাব পরা বা না পরার আন্দোলনের অভিমুখ এক, দমনের বিরোধিতা: মীরাতুন নাহার

TV9 Bangla Digital | Edited By: সঞ্জয় পাইকার

Sep 28, 2022 | 9:43 PM

Miratun Nahar: আমি বলব, মেয়েরা যে আন্দোলন করছেন, অত্যন্ত যথাযথ আন্দোলন। অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ওঁরা বলিষ্ঠভাবে আন্দোলন করছেন।

Anti Hijab Protest: হিজাব পরা বা না পরার আন্দোলনের অভিমুখ এক, দমনের বিরোধিতা: মীরাতুন নাহার
হিজাব বিতর্কে উত্তাল ইরান

Follow Us

মীরাতুন নাহার, সমাজকর্মী

হিজাব না পরা নিয়ে একটি দেশে যে আন্দোলন তৈরি হয়েছে, আপাতত দৃষ্টিতে তা আমাদের বোধগম্য নাও হতে পারে। কারণ, এক দেশে হিজাব পরা নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে তো অন্য দেশে হিজাব না পরা নিয়ে। কিন্তু এই দুই আন্দোলনের মধ্যে একটা নিদারুণ সাদৃশ্য রয়েছে। দমন। আর তার বিরুদ্ধে হাতিয়ার হয়ে উঠেছে হিজাব। যে দেশে হিজাব না পরা নিয়ে আন্দোলন চলছে, সেই দেশ পুরুষতন্ত্রের দ্বারা পরিচালিত। যারা ধর্মের ধার ধারে না। ধর্ম-শাস্ত্র ভাল করে পড়েছি বলেই এই কথা বলতে পারছি। ধর্মে হিজাব পরার কোনও উল্লেখ নেই। যেটুকু উল্লেখ আছে, তা হল মেয়েরা তাদের কোমল অঙ্গগুলো আবৃত করে রাখবে। এর বেশি কিছু বলা নেই। পুরুষের কাম প্রবৃত্তিকে উত্তেজিত করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই সম্ভবত মহিলাদের কোমল অঙ্গ ঢেকে রাখার নির্দেশ রয়েছে শাস্ত্রে। কিন্তু কোথাও হিজাব পরার উল্লেখ নেই।

ধর্ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। মেয়েদের উপর হিজাব পরার বা না পরার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এভাবেই মুসলিম সমাজে তৈরি হচ্ছে লিঙ্গ বৈষম্য।

ওখানে মেয়েরা হিজাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন, সেটা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে। যাঁরা পরতে চান পরবেন, যাঁরা চান না তাঁরা পরবেন না। হিজাব কেন চাপিয়ে দেওয়া হবে রাষ্ট্রের তরফ থেকে? কোনও রাষ্ট্রই ধর্ম নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা নয়। ওখানে যদিই তা-ও হয়, ধর্মটা মেনেই নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত। সেখানে ধর্ম মানা হচ্ছে না। আমি বলব, মেয়েরা যে আন্দোলন করছেন, অত্যন্ত যথাযথ আন্দোলন। অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ওঁরা বলিষ্ঠভাবে আন্দোলন করছেন। আমি কামনা করি, ওঁরা জয়ী হোক।

আমাদের দেশে যেটা হচ্ছে, সেটা আবার অন্যরকম। মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা কিছুটা দিতে হবে এখানে। রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার মধ্যেই রয়েছে ঘাটতি। আমাদের দেশে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মধ্যে পার্থক্য করা হয়। সংখ্যালঘুরা বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যালঘুরা মনে করেন, বহু ব্যাপারে তাঁরা বঞ্চিত। বঞ্চিত বলেই তাঁরা সব বিষয়ে সচেতন। এবং ধর্মের বিষয়ে তাঁরা অনেক বেশি সচেতন ও আবেগপ্রবণ। এর ফলে অনেক সময় হিংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমার মনে হয়, আমাদের সংখ্যালঘু অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, এমন ভাবনা থেকেই তাঁরা হিংসাত্মক হয়ে ওঠেন। তাঁরা মনে করেন, আমাদের ধর্মীয়-শাস্ত্রের উপর প্রভাব ফেলা হচ্ছে। জোর-জবরদস্তি করা হচ্ছে। আমাদের দেশে এই বিষয়টা তাঁদের ভাবিয়ে তোলে। মজার ব্যাপার এখানে, সংখ্যাগুরুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সংখ্যালঘুরা। সংখ্যাগুরুরা আবার রাষ্ট্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। রাষ্ট্রে যাঁরা, বিশেষ করে পুরুষ, তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করছেন মহিলাদের। এই যে বিভাজন ও নিয়ন্ত্রণ একত্রিত করে মেয়েদের উপর সহজেই একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন পুরুষরা।

সংখ্যালঘুরা মনে করেন, তাঁদের উপর যে ধর্মীয় নির্দেশ আছে, তাতে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে রাষ্ট্র। সেইখানে মহিলারা মনে করছেন, হিজাব পরা তাঁদের ধর্মীয় অধিকার। তবে সব মেয়েরা নিশ্চয়ই নয়। যাঁরা পুরুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন, তাঁরাই এই প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু সে সব মেয়েদের ধর্ম-শাস্ত্র সেভাবে পড়া নেই। তাই, আমাদের দেশের মেয়েরা হিজাব পরব বলে আন্দোলন করছেন আর ওই দেশের মেয়েরা হিজাব পরব না বলে আন্দোলন করছেন। এই দুটি আন্দোলনের অভিমুখ কিন্তু একই দিকে।

Next Article